শওকত হোসেন বাদল
আমি বাদল। আপনারা যেমন জানেন, আমি কিন্তু তেমন না। ওই যে ইংরেজিতে আছে না, Don’t judge a book, by its cover! আমার বেলাও তাই! আমার গোঁফ (!) বদন ও বেশভূষা দেখে ভুলেও ভাববেন না, আমি ভালা। আমি কিন্তু ভালা না, ।
বলতে দ্বিধা নেই, টাকা দেখলে আমার লোভাতুর চোখ দিয়ে লালসা গড়িয়ে পড়ে। অর্থ আমার কাছে সুন্দরী নারীর মতো। কড়কড়ে নতুন টাকার প্রতি ভীষণ দুর্বল আমি। কুকুর শুঁকে শুঁকে কাঙ্খিত বস্তু খোঁজে। আমাকেও ওই প্রজাতির প্রাণী ভাবতে পারেন।
টাকার গন্ধ পেলেই আমি পেতে উন্মুখ হই, তখন সাতপাঁচ ভাবি না। দুর্নীতি, উৎকোচ, চুরি কিংবা লুট কোনোকিছুই ‘ম্যাটার’ করে না। আমি শুধু দু’হাতে টাকা কামাতে চাই। কে কি বললো, তাতে কিছুই যায় আসে না। কে কি ভাবলো, তাতেও থোড়াই কেয়ার! আমি চাই টাকা! টাকা! টাকা!
আরে যখন অভাবে ছিলাম-কেউ তো সান্তনা দেয়নি। কারো কাছে চেয়েও ১০ টাকা পাওয়া যায়নি। আর এখন এসেছে নীতি কথা শুনাতে! নিকুচি করি নীতি বাক্যের। আমার চলন ও আচরন দেখে হয়তো, কেউ ধারনাই করেনি, আমি এতোটাই দুরুন্ধর!
সামান্য চাকরি করে গোপনে গোপনে এতো টাকার মালিক হবো- তা আমি নিজেও কোনোদিন ভাবিনি। কি করে এতো টাকার মালিক হয়েছি ? দুই নম্বরী করে, ধান্ধাবাজি করে….
ছেলে বেলায় বাবা সঙ্গে শিক্ষকরাও বলতেন, সৎ থাকিস। আরে বা-বা সৎ থাকা কি, এতোই সহজ! ইচ্ছে করলেই থাকা যায়! যায় না। অসৎ হতে এক মুহূর্ত লাগে। আর সৎ থাকতে হলে, জীবনভর সাধনা করতে হয়। প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। হাজারো অসৎ মানুষের ভিড়ে,চোখ কান খোলা রেখে, মাথা উঁচিয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে চলতে হয়।
জ্বি, আমি আবদুল মালেক ওরফে বাদল। পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক। যদিও আমাকে সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুই মামলায় আমাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
আমাকে রোববার ভোরে ঢাকার তুরাগ থানা এলাকার কামারপাড়া বামনটেকে তার ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় আমার কাছ থেকে একটি অবৈধ বিদেশি পিস্তল, দেড় লাখ জাল টাকা, একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
আমি অষ্টম শ্রেণি পাস। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসাবে যোগ দেই। ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগ দেওয়ার পর আমি বিভিন্ন কর্মকর্তার গাড়ি চালাতাম। দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গাড়িচালক হওয়ায় ‘বদলি বাণিজ্য’ও করতাম।
তুরাগের দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা ভবন, একই এলাকায় একটি বিশাল ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন ছাড়াও কলাবাগানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে আমার। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থও জমা আছে।
আমার কোনো অনুশোচনা নেই। আমি জানি পরিবার-বন্ধু কিংবা স্বজনরা আমাকে ঘৃণা করবেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে চটকদার গল্প লিখবে।
আরে ভাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমি একাই কি শুধু অর্থবিত্তের মালিক হয়েছি ? নো ব্রাদার আমার মতো অগনিত মালেক চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কেউ ধরা পড়েছে, কেউ পড়বে আবার কেউ হয়তো ধরাছোঁয়ারই বাইরে!
আসলে ধান্ধাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা, পলিটিক্যাল টাউট আমরা সবাই মাল এক…..
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও গল্পকার