নিউজ বাংলা ডেস্ক :
ভোটে ‘অনিয়মের অভিযোগ’ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘গণশুনানিতে’ এসে দলের ভুল খোঁজার জন্য শুনানির দাবি করলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দলের কোনো কর্মসূচি না থাকায় ফারুক ছাড়াও বিএনপির ডজনখানেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন জোটের এই অনুষ্ঠানে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে শুক্রবার ‘একাদশ জাতীয় সংসদের তথাকথিত নির্বাচনের ওপর গণশুনানি’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ আসনে ভোট ঘিরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন।
জোটের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্যানেল ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকদের এসব অভিযোগ শোনেন।
নিজের আসনের পরিস্থিতি জানাতে এসে জয়নুল আবদিন ফারুক বিএনপি নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেন, “আমি বিনয়ের সাথে মহাসচিবের উদ্দেশে বলতে চাই, আর সহ্য হচ্ছে না মাননীয় মহাসচিব। শেষ প্রস্তাব দিয়ে যাই, আজকে গণশুনানি। প্রয়োজনে কৌশলে আমরা কোথাও ভুল করেছি কিনা দলের জন্য একটু শুনানি করা প্রয়োজন।”
ফারুকের মতে, ৩০ ডিসেম্বর ভোট ঘিরে দল যখন উজ্জীবিত ছিল, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য তখনই কর্মসূচি দেওয়া উচিৎ ছিল।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এবার ভোটের আগে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট বাঁধে বিএনপি। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর ভোটে ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র আটটি আসন, এত বাজে ফল বিএনপির ইতিহাসে আর কখনও হয়নি।
ভোটের ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে সেদিনই পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছিল ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু আন্দোলনের শক্ত কোনো কর্মসূচি সে সময় না দেওয়াটা ভুল ছিল বলে মনে করছেন জয়নুল আবদিন ফারুক।
বিএনপির এই দুঃসময়ে দলের নেতারা অপেক্ষার যে নীতি নিয়েছেন, তাকে ‘চোর কী করে’ দেখার সেই গল্প দিয়ে তুলনা করেন সংসদের বিরোধী দলীয় এই সাবেক প্রধান হুইপ।“আমার দুই ফুফু ছিল। একসাথে ঘুমিয়ে আছে। টিনের ঘর। মাটির নিচে চোর সিঁদ কেটে ঢুকছে। বড় ফুফুকে বলছে ছোট ফুফু, চোর ঢুকছে। বড় ফুফু বলছে, ঢুকুক না দেখি কী করে। চোর ঢুকে আলমারি খুলছে। ছোট ফুফু বলছে, আলমারি তো খুলে ফেলেছে। বড় ফুফু বলছে দেখি না কী করে। আলমারি খুলে চোর জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে। বড় ফুফু বলে, দেখি না কী করে। চোর চলে গেল, ‘দেখি না’ আর শেষ হয় না।”
সামনে অতিথির সারিতে বসা মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে ফারুক বলেন, “… আর সহ্য হচ্ছে না। অনেকে বলে ঢাকা মহানগর (কমিটি) আছে কি না। আমি বিশ্বাস করি সবই আছে, আমি বিশ্বাস করি সবই আছে; পরিচালনারও লোক আছে; বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে আগে নিজেরাই ঠিক করুন।”
জোটের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করেও নিজের হতাশার কথা বলতে থাকেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল।
“আপনার ওপর আমাদেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেক আাশা ছিল। এত আশা আমি করেছি ব্যক্তিগতভাবে! আমার নেতা মনিরুল হক চৌধুরী এখানে বসা, আমার নেতা আসম আবদুর রব বসা, যিনি আমাকে ছাত্রলীগ শিখিয়েছেন। যে কলেজের উনি ভিপি ছিলেন, সেই কলেজের জিএস আমাকে বানিয়েছেন। অহংকার করে বলতে পারি, আমি বিশ্বাস করি ড. কামালকে, আমি বিশ্বাস করি আমার দলকে।”
কিন্তু সরকারপ্রধানের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টে সংলাপের পরও যখন খালেদা জিয়ার জামিন হল না, নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলা-মামলা’ নিয়ে ইসির কাছে নালিশ জানিয়ে যখন সাড়া মিললো না, ২৭ ডিসেম্বর ঐক্যফ্রন্ট যখন ঢাকায় জনসভা করার অনুমতি পেল না, তখন কামালের ‘শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার’ নীতি কতটা সঠিক ছিল, সেই প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা ফারুক।
“তখনই আপনাদের বোঝা উচিত ছিল আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে আপনারা পরাজিত হয়েছেন। যদি সেদিন ড. কামাল বলতেন ২৭ তারিখে ঢাকা শহরে জনসভার অনুমতি না দিলে আমি নির্বাচনে যাব না; ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও বরকত উল্লাহ বুলুর টেলিফোনের কথা যখন ভাইরাল হলে, সেদিন ব্যারিস্টার মওদুদের কথা যদি বিবেচনায় আনতেন….।”
কুমিল্লা-১০ আসনের প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীও এদিন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার জোর দাবি জানান শীর্ষ নেতাদের কাছে।
এছাড়া বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী (মাগুরা-২), মিজানুর রহমান মিনু (রাজশাহী-২), হাবিবুর রহমান হাবিব (পাবনা-৪), ফজলুর রহমান (কিশোরগঞ্জ-৪), খায়রুল কবির খোকন (নরসিংদী-১), শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর-৩), আনিসুর রহমান তালুকদার (মাদারীপুর-৩), ডা. শাহাদাত হোসেন (চট্টগ্রাম-৯), শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২), হাবিবুল ইসলাম হাবিব (সাতক্ষীরা-১), রুহুল আমিন দুলাল (পিরোজপুর-৩), শাহজাহান চৌধুরী সহ (কক্সবাজার-৪) অনেকেই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি দেওয়ার দাবিতে সমর্থন জানান।