আগামী ৩০ ডিসেম্বর সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশের অবস্থা ‘ভয়াবহ দিকে মোড় নিতে পারে’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন। সোমবার ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, “নির্বাচনের আর ১০/১২ দিন বাকি আছে। নির্বাচন হতে দেন। সুষ্ঠু ইলেকশন না হতে দেওয়া, জনগণ যেভাবে পরিবর্তন আনতে চায় তা না হতে দেওয়া, জোর করে রাষ্ট্রকে আবারো মানে গত পাঁচ বছর যেটাকে আমি বলি বিনা নির্বাচনে এটাকে এভাবে ভোগ করা হয়েছে…।
‘‘এটা করলে আমি সর্তকবাণী দিতে চাই, তাহলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ দিকে মোড় নিতে পারে। যেটা কারো কাম্য নয়।”
নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সর্তক দৃষ্টি রাখার এবং নির্ভয়ে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান গণফোরাম সভাপতি কামাল।
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সময় এসেছে দেশের মানুষের রুখে দাঁড়ানোর। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের মালিকানা নিজের হাতে নিন। ক্ষমতার মালিক জনগণ এটা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে লিখে দেয়া হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষর করেছিলেন। এই মালিকানার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল।”
পরিবর্তন এবং জনগণের ‘মালিকানা’ ফিরিয়ে আনতে ৩০ ডিসেম্বর দলে দলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান ঐক্যফ্রন্টের নেতা।
তিনি বলেন, “ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করে অনিয়ম রুখবে। ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত নিজেদের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া দেখে বাড়ি ফিরবে। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এক গণঅভ্যুত্থানের দিন হবে ৩০ ডিসেম্বর। এটা সকলকে মনে রাখবে হবে। ভোটের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দেশের মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে হবে।”
নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত নেতা-কর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার বেআইনি’ মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, “প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে। সেদিন ৬৮১ জনের একটা গ্রেপ্তারের তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেটা ২/৩দিনে এখন ১৯ শ হয়ে গেছে। এটা লজ্জার বিষয়, এটা জাতীয় লজ্জার বিষয়। এটা শুনে আমাদের ১৬/১৭ কোটি মানুষ লজ্জা পাবে… যে স্বাধীনতার জন্য এত জীবন দিয়েছিল, এমনকি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিনের মতো নেতাকে জীবন দিতে হল, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে সেই বাংলাদেশে জনগণকে এভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “বেআইনি হুকুম কোনো হুকুম হতে পারে না। এটা আইন।… বেআইনি আদেশ মানা একটা অপরাধ। এটা আবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আইজি সাহেব, আমি বিনীতভাবে বলতে চাই, আপনার একটা সুনাম ছিল- এটাকে রক্ষা করেন। পুলিশ বাহিনীকে এই ধরনের এলোপাতারি অ্যারেস্ট থেকে সরে থাকতে বলেন।”
নির্বাচনের প্রচারে পুলিশ ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণ করছে বলেও অভিযোগ করেন গণফোরাম সভাপতি।
তিনি বলেন, “আমি প্রায় ৫০ বছরের উপরে এসবের সঙ্গে জড়িত আছি। এরকম অবস্থা আমি জীবনে দেখি নাই, আপনারাও দেখেন নাই। আপনারা কী দেখেছেন প্রত্যেক প্রার্থীর ওপর আক্রমন হচ্ছে? এটা এখন হচ্ছে।”
কামাল বলেন, জনগণ যখন রাষ্ট্রের মালিক থাকে না, তখন রাষ্ট্রের মালিক হয়ে পড়ে কায়েমী স্বার্থবাদী দেশি-বিদেশি নানা গোষ্ঠী।
“এটার মাশুল দিতে হয়েছে দেশের জনগণকে। দেশে সীমাহীন দুর্নীতি। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। কীভাবে সম্ভব হল? যারা দায়িত্বে আছেন তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই ইশতেহারে বাংলাদেশের জনগণের দাবি-দাওয়াগুলো উঠে এসেছে। এটা সাম্প্রতিককালে একটা বৈপ্লবিক ইশতেহার হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে এ অনুষ্ঠানে ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতি রেখে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। ইশতেহার পড়ে শোনান নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে মূলমঞ্চে কামালের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ও মান্না ছাড়াও জেএসডির আসম আবদুর রব, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, রেজা কিবরিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন।