নিউজবাংলা২৪ডেস্ক:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ভয় না পেয়ে মনে সাহস ধরে রাখার কথা বললেন দুই চিকিৎসক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই দুই চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন সুস্থ হয়ে তাঁরা বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। কাজে ফিরে মানুষের সেবা করার প্রস্ততি নিচ্ছেন তাঁরা।

করোনাভাইরাস জয়ী ওই দুই চিকিৎসকের একজন নারী ও একজন পুরুষ।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালনের সময় ওই দুই চিকিৎসক আক্রান্ত হন। দুজনই ৩৯তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) নিয়োগ পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদায়ণ পান।

কাজে ফেরার আশা প্রকাশ করে ওই নারী চিকিৎসক বললেন, ‘করোনাভাইরাসের এই সময়ে প্রতিদিনই নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে।আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসক হয়েও নিজেকে আটকে রাখতে হচ্ছে। সুস্থ থাকলে আরও কাজ করতে পারতাম।আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে পারতাম। দ্রুত কাজে ফিরতে চাই।ঈদের আগেই কাজে ফিরতে পারব আশা করি।’ আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এখন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
আক্রান্ত আরেক পুরুষ চিকিৎসক এই অবস্থায় মনোবল অটুট রাখার কথা বললেন।
ওই নারী চিকিৎসকের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকপাড়ার বাসিন্দা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রথম যোগ দেন ওই চিকিৎসক।
আর আক্রান্ত পুরুষ চিকিৎসক শহরের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা। গত ১০ ডিসেম্বর চর ইসলামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে জেলার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে নিয়োজিত হন ওই দুই চিকিৎসক। প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক হামিদা মোস্তফা গত ১৩ এপ্রিল প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হন। ফলে তাঁর সহকর্মী ওই দুই চিকিৎসক গত ১৫ এপ্রিল তাঁদের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেন। ২২ এপ্রিল তাঁদের পরীক্ষার প্রতিবেদন পজিটিভ বলে জানানো হয়।

পুরুষ চিকিৎসক ঢাকার বাড়িতে আইসোলেশনে এবং নারী চিকিৎসক বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডরমেটরিতে আইসোলেশনে চিকিৎসা নেন।

‘কাজে ফেরার প্রহর গুনছি’
ওই নারী চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘২২ এপ্রিল প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের দায়িত্বে ছিলাম। ওই সময় নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ বলে আমাকে জানানো হয়। তারপর আমাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ডরমেটরিতে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। ৭ মে তৃতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলে ৮ মে আমাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে শহরের পাইকপাড়ায় শ্বশুড়বাড়িতেই আলাদা কক্ষে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আখাউড়া স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ব্যক্তিদের চাপ বেশি ছিল। বেশ কয়েকজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেখান থেকেই হয়তো আক্রান্ত হয়েছি।’

ওই নারী চিকিৎসক বলেন, ‘আইসোলেশনে একা সময় কাটানো সহজ নয়।তারপরও সে সময় নিজের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন গরম পানি, গরম চা, আদা, লেবু পানি গ্রহন করেছি। আর দিনে দুই থেকে তিনবার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ঠিক রাখতে শ্বাস–প্রশ্বাসের কিছু ব্যায়ামও করেছি। এ গুলো ইউটিউব থেকে দেখেও করা যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিজেকে ভালো রাখার জন্য যা করা যায়, করেছি। পরিবারের সবাই আমাকে মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছে। বিশেষ করে আমার মা-বাবা, স্বামী, শ্বাশুড়ি অনেক সাহস যুগিয়েছেন। কোনো কারণে মন ভালো না থাকলে তাঁরা মুঠোফোনে সান্তনা দিতেন ও ভরসা দিতেন। আর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্যারসহ অন্যান্য সহকর্মীরাও সবসময় সাহস দিতেন।’
তিনি জানান, অন্যান্য শারীরিক সমস্যা না থাকায় তিনি ভয় একটু কমই পেয়েছেন।নিজেকে বুঝিয়েছেন এই বলে যে, মনে জোর রাখতে হবে।
অসুস্থ থাকার সময়ের বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘আইসোলেশনের প্রথম দিনে সন্ধ্যায় আমার খুব খারাপ লাগছিল। প্রচন্ড মাথাব্যথাও শুরু হয়। পরে আমি চা ও ভাত খেয়ে ওষুধ নিলাম। ভাবলাম, আমি দুশ্চিন্তা করছি। এ জন্যই হয়তো মাথা ব্যাথা করছে। দুশ্চিন্তাটা কমাতে হবে। যখন এই বোধটা আসল, রাতের মধ্যেই মাথাব্যথা কমে গেল। রাতে একটা ভালো ঘুমও হয়। নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে দুশ্চিন্তা কমাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন শেষ করে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। দ্রুত কাজে ফেরার প্রহর গুনছি। ঈদের আগেই কাজে ফিরতে পারব বলে আশা করছি। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুতও করছি।’
‘মনোবল অটুট রাখতে হবে’
আক্রান্ত পুরুষ চিকিৎসক বলেন, গত ৩ মে তাঁর দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। এখন সুস্থ আছেন। আইসোলশেন শেষ করে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
তিনি বলেন, ‘কোয়ারেন্টিনের দিনগুলো অনেক কষ্টের ছিল।দোতলার বাসার ওপর তলায় একটি কক্ষে নিজেকে পৃথক রেখেছিলাম।বন্দী জীবন কাটিয়েছি। নিচ তলায় বাবা-মা, স্ত্রী, দুই ভাই আছে। খারাপ লাগা ছিল অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাশি ছিল।এখনও আছে। ভয় ছিল শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় কিনা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে কিনা। আর দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে ভয়, উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল।’ তাঁর দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার প্রতিবেদন নেগেটিভ এসেছে বলে জানান।
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন স্যার ও পরিবারের সদস্যরা সব সময় পাশে ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি সাহস জুগিয়েছে। সরাসরি তো কথা হতো না। ভিডিও কলে বলত কোনো সমস্যা নেই। ৯০শতাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তুমিও সুস্থ হয়ে যাবে এসব বলে অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছে।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে চারপাশের মানুষ অনেক কিছু বলে। এসব এড়িয়ে চলতে হবে। মনোবল অটুট রাখতে হবে। এ সময় সবার সহযোগিতা খুব বেশি প্রয়োজন।

সূত্র: প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here