নিউজবাংলা ডেস্ক:

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই মুখ থুবড়ে পড়া লেবাননকে উদ্ধারের মিশনে নেমেছিলেন দেশটির সদ্য মনোনীত প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আদিব। কিন্তু কাজটাকে যত শক্ত মনে করা হয়েছিল, বাস্তবে দেখা গেল তার চেয়েও কয়েকগুণ কঠিন। ফলে দায়িত্বগ্রহণের আগেই হাল ছেড়ে দিতে হলো নতুন প্রধানমন্ত্রীকে। নির্দলীয় সরকার গঠনে বাধা, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে পাবেন তা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পেরে শপথ নেয়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী আদিব।

শনিবার লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ভাষণে মুস্তফা আদিব ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন তিনি। গত আগস্টে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছিল জার্মানিতে নিযুক্ত সাবেক এ রাষ্ট্রদূতের।

গত ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৯০ জনের প্রাণহানি, ছয় হাজারের বেশি আহত আর শহরের অর্ধেকটা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক চাপে পড়ে দেশটির তৎকালীন সরকার। তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগগুলো নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ নিয়ে টানা আন্দোলনের মুখে মাত্র ছয়দিনের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হয় হাসান দিয়াবের নেতৃত্বাধীন সরকার।

 

কিন্তু সরকারের পতন হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই লেবাননের পরিস্থিতি বদলে যাবে, সেই আশা করেননি কেউ। কিছুদিন আগে লেবানিজ প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছেন, মুস্তফা আদিব সরকার গড়তে না পারলে একপ্রকার জাহান্নামে পরিণত হবে লেবানন।

এমন সংকটের কিছু প্রমাণ ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। গত অক্টোবরের তুলনায় লেবানিজ মুদ্রার মান কমে গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।লেবাননের জটিল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন সুন্নি মুসলমান, প্রেসিডেন্ট পদ পাবেন ম্যারোনাইট খ্রিষ্টান এবং সংসদের স্পিকার পদ যাবে শিয়া মুসলিমদের কাছে।

নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার পর জটিল এ প্রথা ভেঙে নির্দলীয় সরকার গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুস্তফা আদিব। দেশ পুনর্গঠনে স্বাধীনভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গড়তে চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব কাকে দেয়া হবে তা নিয়ে মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহ ও আমাল গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাচ্ছিল। তারা নিজ নিজ পক্ষ থেকে নতুন অর্থমন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করে এবং আদিব যে পদ্ধতিতে সরকার গড়তে চান তার বিরোধিতা শুরু করে।

সংকট সমাধানে মুস্তফা আদিব জ্যেষ্ঠ শিয়া নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করলেও ইতিবাচক ফল আসেনি। শেষপর্যন্ত নিজেই নতুন সরকার গড়ার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন তিনি। এর ফলে আরও জটিল হয়ে উঠল লেবাননের পরিস্থিতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here