নিউজবাংলা২৪ ডেস্ক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোগ-মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব ধরনের সংকট মোকাবেলা করেই পথচলতে হবে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রোববার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি। বললেন, ঝড়-ঝঞ্ছা-মহামারী আসবে। সেগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, কথায় আছে— ‘বিপদ কখনও একা আসে না’। ঘূর্ণিঝড়ে যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে জন্য বিভিন্ন দ্বীপ, চরাঞ্চল এবং সমুদ্র-উপকূলে বসবাসকারী ২৪ লাখেরও বেশি মানুষকে এবং প্রায় ৬ লাখ গবাদিপশু আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি।

তিনি জানান, সর্বাত্মক প্রস্তুতি সত্ত্বেও গাছ ও দেয়াল চাপায় বেশ কয়েকজন মানুষ মারা গেছেন। বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আমরা ইতোমধ্যেই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।

যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজন জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা মন্তব্য করে তিনি বলেন, সঙ্কট যত গভীরই হোক জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তা উতরানো কোনো কঠিন কাজ নয়। এই সত্য আপনারা আবারও প্রমাণ করেছেন।

‘আপনাদের সহযোগিতা এবং সমর্থনে আমরা করোনাভাইরাস মহামারীর আড়াই মাস অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছি। যতদিন না এই সংকট কাটবে, ততদিন আমি এবং আমার সরকার আপনাদের পাশে থাকব।

বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে আসা এবারের ঈদ সবাইকে ঘরে থেকেই উদযাপন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া স্বাস্থ্য সতর্কতায় কোনো ঢিলা না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রাণঘাতী করোনা সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তার উপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রোববার দেয়া এই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করতে বলেছেন, সংকটে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এ বছর সব ধরনের গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ আরোপের ফলে স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হবে না।

‘ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আত্মীয় স্বজনের খোঁজখবর নেব।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ঈদের আগে স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য নিয়মনকানুন মেনে কিছু কিছু দোকানপাট খুলে দেয়ার অনুমোদন দিয়েছি। যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন এবং যারা দোকানে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, আপনারা অবশ্যই নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। ভিড় এড়িয়ে চলবেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। মনে রাখবেন আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে, প্রতিবেশী সুরক্ষিত থাকবে, দেশ সুরক্ষিত থাকবে।

মহামারীর মধ্যে ঈদ উদযাপনে ধনবানদের অন্যদের পাশের দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে আপনি আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর কথা ভুলে যাবেন না। আপনার যেটুকু সামর্থ্য আছে, তাই নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। তাহলেই ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে আপনার ঘর এবং হৃদয়-মন।

এসময় চিকিৎসক, নার্সসহ যে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা করছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন, তাদেরও শুভেচ্ছা জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here