মিজানুর রহমান : দেখতে দেখতে চলে এলো মহিমান্বিত রজব মাস। ১৪৪০ হিজরির রজব মাস। এই মাস বান্দার গুনাহ মাফের মাস, বিশেষ অনুগ্রহের মাস। রজব মাসের সঙ্গে ইসলামের অতীত ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে।
হযরত নূহ (আ) আল্লাহর হুকুমে প্লাবন থেকে বাঁচার জন্য নৌকায় উঠে ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর সান্নিধ্যে মেরাজে গমন করেন। এ মাসেই মুহাম্মদ (সা) এর কাছে প্রথম ওহি আসে। এছাড়া জান্নাতের তলদেশে প্রবাহিত একটি নদীর নাম রজব। সুরা আত-তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা ১২ টি। এর মধ্যে ৪টি হচ্ছে (যুদ্ধবিগ্রহের জন্য) নিষিদ্ধ মাস। এই ৪টি মাসকে সম্মানিত মাস বলা হয়। মাস ৪টি হলো- জিলকদ, জিলহজ, মহরম, আর চতুর্থটি হলো- রজব।
এ মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তাওফিক হয়। হযরত আয়েশা (রা) বলেন-
আমি রাসুল (সা) কে রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি।
রজব মাসের কুসংস্কার:
ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে দেবতা/প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার একটি রেওয়াজ ছিল। রাসুলুল্লাহ (স) এই শিরকী রেওয়ায়েজের মূলোৎপাটন করেছেন। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন- ইসলামে উঠ বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতিমার উদ্দেশ্যে জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং ‘আতিয়া’ নেই অর্থাৎ রজব মাসে প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথাও নেই। (সহিহ বুখারি)
আজকাল খাজা মইনুদ্দিন চিশতির (রহ) মাজারে তার ওফাত উপলক্ষে যে ‘উরস’ হয়, সেখানে এমন অনেক পশু জবাই করা হয় যা মূর্খ লোকেরা হযরত খাজা রহ. বা তার মাজারের নামে মান্নত করে থাকে। জাহেলী যুগে দেব-দেবীর সন্তুষ্টির জন্য পশু যবাই করা আর বর্তমানের এসব পশু যবাই করার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।
আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারো নামে মান্নত করা, তা যদি পীর বুজুর্গের নামেও হয় তবুও শিরক।
আমাদের দেশেও খাজা আজমেরী রহ. এর ওফাতকে কেন্দ্র করে জাহেল লোকেরা এমন সব রসম-রেওয়াজ উদ্ভাবন করেছে যা কঠোরভাবে পরিহার করে চলা উচিত। বিভিন্ন স্থানে লাল কাপড়ে মোড়ানো বিরাট ‘আজমিরী ডেগ’ বসানো হয়। কোথাও কোথাও মাজারের আদলে অস্থায়ী মাজার স্থাপন করা হয়। এরপর খাজা আজমিরী রহ. এর উদ্দেশ্যে মান্নতের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, চাল-ডাল ইত্যাদি ওঠানো হয়। যা দেওয়াও হারাম এবং ওখান থেকে কিছু খাওয়াও হারাম। যারা এগুলো উঠান তারা এগুলো দিয়ে আনন্দ-ফুর্তির আয়োজন করে। ঢোল-তবলা ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নাচ-গানের আসর বসায়। সেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে নাচ, গান ও খাওয়া-দাওয়ায় অংশ নেয়, অবাধে মেলামেশা করে এবং নানা ধরনের গর্হিত কাজ করে থাকে, যা নিঃসন্দেহে হারাম।
অথচ হযরত খাজা আজমেরী রহ. মানুষকে শিরক থেকে মুক্ত করতে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তাওহিদ ও সুন্নতের শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। তার সেই শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণ করার তৌফিক আল্লাহতালা আমাদের দান করুন এবং কুসংস্কার ও রসম-রেওয়াজ থেকে আমাদের ইমান ও আমলের হেফাজত করুন। আমিন।
মিজানুর রহমান
ইসলামিক স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।