নিউজবাংলা২৪ ডেস্ক: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।সম্প্রতি তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন।আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক সিনিয়র এই নাগরিককে প্রশ্ন করা হয়েছিল-কেবিন বুকড থাকার পরও আপনি হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় আছেন কেন?
স্মিতহাস্যে তিনি বলেন,‘আমি তো ডাক্তার। করোনা রোগ নিয়েও কাজ করছি। আমি জানি, করোনা রোগীর কোন সময় হাসপাতালে যেতে হবে আর কোন সময় বাসায় থাকতে হবে। করোনা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে যেতে হবে— এটি একেবারেই ঠিক নয়।
আমি যদি হাসপাতালে গিয়ে কেবিনে উঠি তাহলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে যে, শনাক্ত হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে যেতে হয়। করোনা রোগীদের জন্যে আমি ভুল বার্তা দিতে চাই না। ফলে, আমার জন্যে ঢামেকে কেবিন বুকিং দিয়ে রাখা সত্ত্বেও আমি হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় আছি। এটাই করোনা রোগের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
সবার ক্ষেত্রে এটাই করা উচিত। এমনিতেই হাসপাতালে জায়গা নেই। যাদের দরকার নেই তারাও যদি হাসপাতালে চলে যাই, তাহলে তো সংকট আরও বাড়বে।’
জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি প্লাজমা থেরাপি কোথায় নিলেন? তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে প্লাজমা থেরাপি নিয়েছেন বলে জানান। সেখানে প্লাজমা থেরাপির ব্যবস্থা আছে? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
‘থাকবে না কেন? আমরা একটা হাসপাতাল বানিয়েছি সেই হাসপাতালে যদি আমাদের নিজেদের চিকিৎসাই করতে না পারি, তাহলে তা থাকারই কোনো অর্থ নেই। যে হাসপাতালে আমরা নিজেদের চিকিৎসা করতে পারব না, সেই হাসপাতাল রাখব কেন? সেই হাসপাতাল তৈরি করব কেন? আমি আমার সব রকমের চিকিৎসা আমাদের হাসপাতালে করি।
আজ থেকে ১৮ বছর আগে যখন আমার চোখের অপারেশন করা দরকার হয়েছিল তখন আমি তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে করিয়েছিলাম। তখন আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য ছিলাম। সেসময় পৃথিবীর যে কোনো দেশে, পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশের উন্নত হাসপাতালটিতেও আমি বিনা পয়সায় চোখের অপারেশন করাতে পারতাম। কিন্তু, আমি তা করাইনি। জনগণের মাঝে কখনোই কোনো ভুল তথ্য বা ভুল বার্তা দিতে চাইনি। চোখের অপারেশন আমি আমাদের হাসপাতালেই করিয়েছি এবং বাংলাদেশের মানুষকে বুঝাতে চেয়েছি যে এই অপারেশন বাংলাদেশেও করা যায় এবং তা খুবই মানসম্পন্ন।
প্রায় ১৮ বছর আগে আমি চোখে যে অপারেশন করিয়েছিলাম তা বাংলাদেশের হাসপাতাল তথা আমাদের হাসপাতাল সফলভাবে করেছিল। আজকে পর্যন্ত আমার চোখে কোনো সমস্যা নাই। আমাকে চশমাও ব্যবহার করতে হয় না।
আমার আমেরিকা-ইউরোপের বন্ধুরা অনেকবার উদ্যোগ নিয়ে বলেছে, চলে আসো। বিনা খরচে আমরা তোমার কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থা করবো। রাজি হইনি। কারণ, আমি একা সুবিধা নেব আর বাংলাদেশের সব মানুষ বঞ্চিত থাকবে, তা হতে পারে না।’
(ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ।)