নিউজবাংলা ডেস্ক:
এ মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। বাজারেও সরবরাহ যথেষ্ট। এছাড়া রোববার মিয়ানমার থেকে ২৮ হাজার টন পেঁয়াজ টেকনাফ বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে। আরও ১০০ টন ২৫ সেপ্টেম্বর ঢুকবে।
মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিসর, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও নিউজিল্যান্ডের থেকে এক লাখ ২২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে আমদানিকারকরা।
ঋণপত্র খোলার পর এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকবে। তবুও গত তিন দিন ধরে উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজ।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে আমদানি ও দেশি পেঁয়াজের উচ্চদাম গত তিন দিন (রোববার-মঙ্গলবার) অপরিবর্তিত রয়েছে।
মঙ্গলবার সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি।
এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা কেজি।
এছাড়া কৃষকের কাছে থাকা পেঁয়াজ ছাড়তে শুরু করেছে। পাবনা ও ফরিদপুর থেকে দেশি পেঁয়াজের চালান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তারপরও অসাধুদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেছেন, পেঁয়াজে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। আর এ যাত্রা শুরু হবে ফরিদপুর থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
পেঁয়াজের জন্য ফরিদপুরে কোল্ডস্টোরেজ করা হবে। মঙ্গলবার ফরিদপুরে জেলার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
অন্যদিকে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম ভোক্তা সহনীয় করতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম প্রতিদিন বাজার তদারকি করছে।
পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভোক্তাস্বার্থ নিয়ে কাজ করা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একাধিক টিম সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকি করছে।
এছাড়া সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলাবাজারে ট্রাক সেল প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা ও অনলাইন বাজারে ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করবে। এছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিশেষ সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত বাকিতে এলসি খুলে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা, যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুযোগ বলবৎ থাকবে। এর আগে পেঁয়াজ আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বুধবার এনবিআর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আর পেঁয়াজ আমদানির এলসি মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের বিকল্প বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন আমদানিকারক এই সমুদ্র বন্দর দিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল মঙ্গলবার বিকালে যুগান্তরকে জানান, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পেঁয়াজ আমদানির আগ্রহ গত কয়েক দিনে অনেক বেড়েছে।
প্রতিদিনই ব্যবসায়ীরা আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) নিচ্ছেন। ভোগ্যপণ্য আমদানির আগে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। ভারত থেকে পানিপথে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিও নিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান।
গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে মঙ্গলবার (২২ সেপ্টম্বর) পর্যন্ত প্রায় তিন সপ্তাহে ২৭৪টি আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) ইস্যু করেছে বন্দরের এই উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র।
এর বিপরীতে ১ লাখ ২১ হাজার ৯২২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উপপরিচালক বলেন, নিউজিল্যান্ড, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিসর, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, চীন ও মালয়েশিয়াসহ ৮টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে অনুমতিপত্র নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারত থেকে ২০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে লুনিয়ার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে মোট দেশের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯।
ভারত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে কি না জানি না। কেউ অনুমতি চাইলে আমাদেরকে দিতে হয়। তাই আমরা লুনিয়ার এন্টারপ্রাইজের নামে আইপি ইস্যু করেছি। তারা পানিপথে এ পেঁয়াজ আনতে চায়।
এদিকে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গত রোববার একটি প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার টন পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে আমদানি করেছে, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা ৩০ টন পেঁয়াজ খালাস করা হয়েছিল। আর আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আরও ১০০ টন পেঁয়াজ দেশে ঢুকবে।
পর্যায়ক্রমে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ দেশে আসতে থাকবে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্র বলছে, দেশে উৎপাদন ও আমদানি মিলে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ আছে।
তাই পণ্যটির কোনো ধরনের সংকট নেই। প্রতিষ্ঠানটির সদস্য আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে সাড়ে ৫ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ মজুদ আছে।