Desk Report:
ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইনের আওতায় রাজধানীতে পাতাল মেট্রোরেলের পাঁচটি রুট নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। লাইন ১, ২, ৪ ও ৫ এর আওতায় উড়াল ট্রেনের পাশাপাশি পাঁচটি পাতাল মেট্রোরেল রুট নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে চারটি রুটের ৬২ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার পথ চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি এমআরটি লাইন-২ এর আওতায় গাবতলী হতে চট্টগ্রাম রুটে উড়াল ও পাতাল রেলের সমন্বয়ে ২৮ কিলোমিটার পথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে উড়াল ও পাতাল কোন পথ কত কিলোমিটার হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। মেট্রোরেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণ হবে। খুব সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন যাত্রীরা।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সিদ্দিক জানান, মহানগরীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে মেট্রোরেল লাইন-৫ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লাইনের মাধ্যমে দুটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি সাউথ (দক্ষিণ) রুট ও অন্যটি নর্থ (উত্তর) রুট। নর্থ রুটের আওতায় ২০২৮ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল রেলের সমন্বয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে পূর্বে ভাটারা থানা পর্যন্ত এই রুটটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নর্থ রুটের সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৪১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এর পাতাল রুটের আয়তন হবে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং উড়াল রুটের অংশ হবে ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এই রুটের স্টেশন থাকবে ১৪টি। এর মধ্যে ৯টি পাতাল ও ৫টি উড়াল। এরইমধ্যে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) নর্থ রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এর ডিপিপি’র (ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান) অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ রুটের শ্রেণিবিন্যাস হচ্ছে, হেমায়েতপুর-বালিয়ারপুর, মধুমতি-আমিনবাজার, গাবতলী-দারুস সালাম-মিরপুর ১- মিরপুর ১০- মিরপুর ১৪ – কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুন বাজার-ভাটারা।
লাইন-৫ এর সাউথ রুটের মাধ্যমে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত পাতাল রেল ও উড়াল রেলের সমন্বয়ে ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পথ ও ১৬ স্টেশন বিশিষ্ট মেট্রোরেল নির্মাণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। গত মার্চ মাসে এর সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এ অংশে ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার পাতাল ও ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার উড়াল রেল থাকবে। ১৬টি স্টেশনের মধ্যে ১২টি পাতাল ও ৪টি উড়াল স্টেশন থাকবে। এ রুটের শ্রেণিবিন্যাস হচ্ছে, গাবতলী- টেকনিক্যাল-কল্যাণপুর-শ্যামলী-কলেজগেট-আসাদগেট-রাসেল স্কয়ার-পান্থপথ-সোনারগাঁও মোড়-হাতিরঝিল- নিকেতন-রামপুরা-আফতাব নগর-পশ্চিম আফতাবনগর সেন্টার আফতাব নগর পূর্ব-দাশেরকান্দি।
এমআরটি লাইন-২ এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ও এলিভেটেড সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মিত হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৫ জুন জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা স্মারক সই করে। এ লাইনের সম্ভাব্য শ্রেণি বিন্যাস হচ্ছে, গাবতলী-বসিলা-মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ড-সাত মসজিদ রোড-ঝিগাতলা-ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড- সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট-নীলক্ষেত-আজিমপুর-পলাশী- শহীদ মিনার-ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-পুলিশ হেড কোয়াটার্স-গোলাপশাহ মাজার- বঙ্গ বাজারের উত্তর পাশের সড়ক-মতিঝিল-আরামবাগ-কমলাপুর-মুগদা-মেরা-চট্টগ্রাম রোড।
এমআরটি লাইন-৪ এর মধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্র্যাকের নিচ দিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া, পূর্বঘোষিত মেট্রোরেল রুট-১ এর আওতায় প্রায় ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ রুটে থাকছে দু’টি অংশ। প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন। দ্বিতীয় অংশ নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত।
বিমানবন্দর রুটে ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার বাংলাদেশের প্রথম পাতাল রেল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মিত হবে। এতে আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন হবে ১২টি। আর পূর্বাচল রুটের আয়তন হবে ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। এর স্টেশন হবে ৯টি। এ রুটটি উড়াল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে এই রুটের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিভিন্ন সার্ভে শেষ হয়েছে। মূল নকশা প্রণয়নের ৭০ ভাগ কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এ রুটের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের মধ্যে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রুটের একটি অংশের ৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি গত বুধবার (২৯ মে) জাপানে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সিদ্দিক বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং সক্ষমতা বাড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরুট সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এসব মেট্রোরেলের রুটের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণের পাশাপাশি পাতাল মেট্রোরেলও নির্মাণ করা হবে। এমআরটি লাইন ১, ২, ৪ ও ৫ এ উড়াল পথের পাশাপাশি পাতাল পথও থাকছে।’
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুধু এমআরটি লাইন-৬ বা উড়াল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই যানজট শেষ হবে না। এর ছয়টি লাইনের পুরোপুরি কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এরইমধ্যে উড়াল পথের পাশাপাশি পাতাল পথও থাকছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর পুরো কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’