শাহানাজ পারভীন: কথায় আছেনা? কে না ফুল ভালোবাসে। সেই ছোট্ট বেলায় পড়েছি There is none but loves flower. ফুলের প্রতি আমার অনুরাগ একটু বেশিই বলা চলে।সেই অনুরাগ থেকে আমার বারান্দা বাগানে জায়গা করে নিয়েছে মে ফুলের টবটি। হা এই ফুলের নাম মে ফুল বা মে ফ্লাউয়ার ।নজরকাড়া দৃষ্টি নন্দন এ ফুল যেদিন প্রথম ফোটে তখন মনের অজান্তে গেয়ে উঠি-হৃদয় আমার নাচেরে আজি ময়ূরের মতো নাচেরে।আর ধন্যবাদ দেই সেই সহপাঠিকে যে আমাকে এ ফুলে চারাটি দিয়েছিল।কারণ ফুলটির চারা একটু দুর্লভ, সব নার্সারিতে পাওয়া যায় না।
টবে চারা লাগানো হলেও সেখানে কোনো গাছের অস্তিত্ব মেলেনা।জুন থেকে মার্চ পর্যন্ত বোঝাই যায় না ষেখানে গাছ ছিল।মজার ব্যাপার হলো মার্চ শেষ হতে না হতেই তা মাতা তুলে দাঁড়ায়। গাছটিতে এপিলে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়।এ সময় দেখা মেলে চকচকে পাতা আর কলির।মে মাসের শুরুতে এ কলি ফুলে পরিণত হয়।এ অনিন্দ্যসুন্দর ফুলের মুগ্ধতা ছড়িয়ে থাকে পুরো মে মাস জুড়ে।মাস শেষ হলে আবার তা ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে যায়।অদ্ভুত এই গাছটির নাম ‘মে গাছ’। শুধু মাত্র মে মাসে ফুল হয় বলে এর নাম ‘মে ফুল’।এই গাছের আলাদা করে তেমন কোন যত্ন নিতে হয় না। মে গাছের শিকড় হচ্ছে তার বাল্ব। এই বাল্ব গাছ বেঁচে থাকার মত পানি সংগ্রহ করে থাকে। তবে নিয়মিত পানি দিলে গাছে ফুল অনেক দ্রুত আসে।অসম্ভব সুন্দর এই ফুলটি দেখতে গোলাকৃতির লাল,গোলাপি আর কমলা রঙের হয়। লাল রঙের ফুলটি সচরাচর দেখা গেলেও গোলাপি আর কমলা রঙের গাছটি খুব কম দেখা যায়। মে ফুল ছাড়াও এই ফুলটি বল লিলি,গ্লোব লিলি, পাউডার পাফ লিলি বা আফ্রিকান ব্লাড লিলি নামেও পরিচিত। এই ফুলটির জন্মস্থান সম্ভবত আফ্রিকায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাশিয়া জাভানিকা (Cassia javanica. Syn. C nodosa)।
প্রতিবছর চারটি করে ফোটে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ ফুলের জন্য সারাবছর ধরে একধরনের অপেক্ষা করি।মে মাসে যেন এটি অতিথি হয়ে আসে।মাস শেষে ফুলটি যখন ঝড়ে গেলেও এর মনের এর রেশ থাকে অনেক দিন।কদিন পরই আবার অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।এসে পড়েছি মাসের শেষ প্রান্তে। প্রিয় ফুল, মে ফুল যেতে নাহি দিব তোমায়।তোমার শুভ্রতা ছড়িয়ে যাক প্রতিটি মানুষের মনে।
লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়