নিউজবাংলাডেস্ক:

বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক সেবার প্ল্যাটফর্ম (এমএফএস) ব্যবহার করে গত দু’দিনে ঢাকার সাধারণ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) প্রিপেইড গ্রাহকরা গত মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিকাশ, রকেট কিংবা নগদ থেকে বিল পরিশোধ করতে পারেননি।

এদিকে ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী আরেকটি কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) আগেই গ্রাহকদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, কারিগরি উন্নয়ন কাজের জন্য গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার গ্রাহকরা অনলাইন ব্যবস্থায় বিল পরিশোধ করতে পারবেন না। তবে ডেসকো এ ব্যাপারে গ্রাহকদের কিছুই না জানিয়ে সরকারের সমন্বিত বিল পেমেন্ট সেবা ‘মেইনটেন্যান্স মোডে’ রাখে। ফলে গ্রাহকরা বিল পরিশোধ করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হন।

রিটেইল পয়েন্টের মাধ্যমে গত কয়েক মাসে বিল দেওয়ার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে এমএফএস সেবার মাধ্যমে বিল পরিশোধের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একমাত্র রিটেইল পয়েন্ট থেকে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেই ১০ টাকা চার্জ নেওয়ার নিয়ম আছে, অন্য ক্ষেত্রে নেই। ফলে গ্রাহকদের অনেকে রিটেইল পয়েন্টে যেতে বাধ্য হয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কভিড-১৯ মহামারিতে এমএফএস সেবা বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। মানুষ ব্যাংকে, ভেন্ডিং সেন্টারে কিংবা রিটেইল পয়েন্টে না গিয়ে বাসায় বসে নিজের মোবাইল ফোন থেকে বিল পরিশোধের সুবিধা নিচ্ছেন। সর্বশেষ গত আগস্টে এমএফএস সেবার মাধ্যমে শুধুমাত্র বিকাশ ব্যবহার করেই ৩০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। এ ছাড়া রকেট ও নগদ ব্যবহার করে পরিশোধ করেছেন আরও প্রায় ২০ লাখ গ্রাহক। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে বেশিরভাগ গ্রাহকই এমএফএস সেবার মাধ্যমে ডেসকোর বিল পরিশোধ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হন।

ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে সচরাচর ‘কানেক্টিং এরর’ বা ‘পেমেন্ট নট সাকসেসফুল’ মেসেজ দেখা যায়। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে ‘ইনভ্যালিড বিল ইনফরমেশন’ মেসেজ দেখা যাচ্ছিল। এ ব্যাপারে ডেসকোর অভিযোগকেন্দ্রে ফোন করলে অন্যদিক থেকে প্রথমে জানতে চাওয়া হয় কোন সেবামাধ্যমে চেষ্টা করছেন। উত্তরে কেউ বিকাশের কথা জানালে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়, ‘এটা বিকাশের সমস্যা’। একইভাবে কোনো ভুক্তভোগী ডেসকোর অভিযোগকেন্দ্রে নগদ সেবামাধ্যমের কথা জানালেও উত্তর দেওয়া হয়, ‘এটা নগদের সমস্যা। আরও কোনো অভিযোগ থাকলে অফিসে আসুন।’

একপর্যায়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অনেকে ভিড় জমান ডেসকোর নিজস্ব ভেন্ডিং স্টেশনে। মহামারিকালে এসব ভেন্ডিং স্টেশনে কোনো ভিড় না থাকলেও মঙ্গল ও বুধবার সকালে লম্বা লাইন দেখা যায়। একই সঙ্গে লাইন দেখা যায় রিটেইল পয়েন্টগুলোতেও। কারণ, এমএফএস ব্যবস্থায় ব্যর্থ হয়ে ভেন্ডিং স্টেশনের ভিড় এড়াতে শেষ পর্যন্ত অনেকেই যান রিটেইল পয়েন্টে।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলী সমকালকে বলেন, ‘পোস্টপেইড বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে ‘এক পে’ গেটওয়েতে পূর্ণ মাত্রায় সংযুক্ত হওয়া সম্ভব হয়েছে, তবে প্রিপেইডের ক্ষেত্রে এখনও ফাইন টিউনিং চলছে।’ তিনি জানান, প্রিপেইড গ্রাহকরা যে সমস্যায় আছেন, সেজন্য ‘এক পে’ গেটওয়ে কিংবা ডেসকো দায়ী নয়। তবে বিকাশ ও নগদ দুটি এমএফএস সেবার মাধ্যমে বিল পরিশোধে কিছু সমস্যা হচ্ছে, এটা সত্যি। সেবা স্বাভাবিক করতে ওই দুটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিকাশ সাত দিনের সময় চেয়েছে।

এ ব্যাপারে বিকাশের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, বিকাশের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। কারিগরি সব দিকও ঠিক আছে। তবে বিকাশ প্ল্যাটফর্ম থেকে ডেসকোর সার্ভারে পাঠানোর পর সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে কিছুটা বেশি সময় লাগছে। এ জন্য বিকাশের দায় নেই। বিকাশ থেকে যথাসময়েই বিল ডেসকোর সার্ভারে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ডেসকোর সার্ভারে ঢুকতে সময় লেগে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে নগদের হেড অব পাবলিক রিলেশন্স মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, নগদের নেটওয়ার্কে তারা কোনো সমস্যা দেখতে পাননি। সাধারণ সময়ের তুলনায় গত দু’দিনে বিল কম জমা হতে দেখা গেছে নগদের প্ল্যাটফর্ম থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here