নিউজ বাংলা ডেস্ক :

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বমিও করেছেন। তার শরীরটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। সরকারের কাছে তার সু-চিকিৎসার দাবি করছি।

মঙ্গলবার নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানি শেষে এসব কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুনানি শেষে কারাগারের সামনে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডাম ঠিকভাবে মাথা রাখতে পারছেন না। তিনি খুবই অসুস্থ। তার শরীরটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। সরকারের কাছে তার সুচিকিৎসার দাবি করছি।

এদিন খালেদার পক্ষে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। শুনানির শুরুতে মওদুদ আহমদের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ আদালতকে বলেন, অসুস্থজনিত কারণে মওদুদ আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। জার্মানিতে তার পায়ের হাঁটুর অপারেশন হয়েছে।

এরপর দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদার পক্ষে মামলাটির চার্জ শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আমরা আদালতে দুটি আবেদন করেছি। একটি মামলার মুলতবি চেয়ে অপরটি মামলার প্রয়োজনীয় নথির জন্য। আপনি নির্দেশ দেয়ার পরও আমরা মামলার প্রয়োজনীয় নথি পাইনি।’

এ সময় বিচারক বলেন, চার বছর ধরে মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানি চলছে। আপনারা খালেদার পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে কোন আবেদন দেননি। এরপর বিচারক মওদুদের আবেদন মঞ্জুর করেন। খালেদার আইনজীবীরা নথি চেয়ে যে আবেদন করেছেন তা নামঞ্জুর করেন। খালেদার পক্ষে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

বিচারক এজলাস কক্ষ ত্যাগ করার পর খালেদা জিয়া তার আইনজীবীদের বলেন, এত দিন হলো কেন এখনো অব্যাহতির আবেদন দেয়া হয়নি। তখন আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, আবেদন রেডি আছে। আমরা সামনের তারিখে দিয়ে দিবো।

এরপর মির্জা ফখরুল দুদকের আইনজীবী কাজলের কাছে এসে বলেন, ম্যাডাম খুবই অসুস্থ। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। কাজল বলেন, আপনারা চিকিৎসার আবেদন করেন। আদালতকে বলে তা মঞ্জুর করে দিবো। তখন মির্জা ফখরুল বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তো তার সঠিক চিকিৎসা হয় না।

কাজল ফখরুলকে বলেন, আগে তাকে ভর্তি করান। তারপর দেখা যাবে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।

মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। টানা এক মাস ২ দিন বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here