আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
কাব্য চর্চার সাথে যারা জড়িত তারা কমবেশি সবাই ‘কাসিদা’ সম্পর্কে জানেন। কাসিদার বাংলা অর্থ ‘উদ্দেশ্য’। উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবে লিখা বন্দনা বা প্রশস্তিমূলক দীর্ঘ কবিতা। যাকে উদ্দেশ্য করে কাসিদা রচিত হতো তিনি রচয়িতাকে দরাজ দিলে খেতাব ও খিলাত দিয়ে সন্তুষ্ট করতেন। শাসক, সেনাপতি, গোত্র প্রধানসহ ক্ষমতাধররাই ছিলেন কাসিদা রচয়িতাদের টার্গেট। এর বাইরেও কাসিদা রচিত হয়েছে। নবী মুহাম্মদের (সা:) প্রশংসা করে কা’ব বিন জুহাইর নামে এক কবি লিখেন ‘কাসিদা-এ-বুরদা’ এবং নবীর সামনে সেটি পাঠ করেন। নবী সন্তুষ্ট হয়ে নিজের চাদর খুলে কবির গায়ে পরিয়ে দেন।
উপমহাদেশেও প্রচুর কাসিদা রচিত হয়েছে উর্দু ও হিন্দি ভাষায়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বেশ কিছু বন্দনামূলক কাব্য রচিত হয়েছে, যেগুলো ‘মঙ্গল কাব্য’ হিসেবে পরিচিত এবং অধিকাংশই দেবীদের গুণগান। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অনেক আধুনিক কবিতা ও কবিদের দাপটে কাসিদা বিদায় নিয়েছে। স্থান করে নিয়েছে গদ্য কাসিদা এবং তা আমাদের প্রবাসী কবিদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। তাদের কাসিদা রচনার প্রতিযোগিতা আমাকে আমোদিত ও শঙ্কিত করে তুলেছে। কবিরা তাদের ভেতরের যাতনা লাঘব, আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে কবিতা রচনা করে চলেছেন। পাশাপাশি তারা একে অন্যের কবিতা ও কাব্য প্রতিভার উপর কাসিদা লিখছেন। সমাজে কিছু কবি থাকেন তাদের কবিতা কেউ পড়ূক না পড়ূক তারা অতি অহঙ্কারে নিজেদের কবিতার প্রশংসা নিজেরাই করেন এবং জাতি তাদেরকে এখনো মূল্যায়ন না করলো না বলে হরহামেশাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আগেকার দিনে আমাদের কবিরা ঢিলেঢালা পাজামা পাঞ্জাবি পরিধান করতেন, স্কন্ধলম্বিত চুল এলোমেলো করে রাখতেন, গাল থুতনি জুড়ে অযত্নে বাড়তে দিতেন দাড়ি। অনেকের কাঁধে একটা ঝোলাও থাকতো, যার মধ্যে তারা আগলে রাখতেন তাদের অপ্রকাশিত কবিতা, লিটল ম্যাগ বা আঞ্চলিক পত্রিকায় মুদ্রিত কবিতা। তারা কোথাও পরিচিত কাউকে পেলেই তাকে তার কাব্যের শিকারে পরিণত করে তাকে প্রয়োজনে শ্রোতাকে জবরদস্তিমূলক চা-বিস্কুটে আপ্যায়ন করতেন। দূর থেকে এ ধরনের শ্রোতা-শিকারি কবিকে দেখলেই তার বন্ধুস্থানীয়রা গলিঘুপচিতে লুকিয়ে কবিতা শোনার যন্ত্রণা থেকে নিস্কৃতি লাভের চেষ্টা করতেন। সাধারণ মানুষজনও কারো পোশাক-আশাক, চলন-বলনেই বুঝে ফেলতো লোকটি কবি না হয়েই যান না। কথাবার্তার ধরণও ভিন্ন ছিল। অনেক আগে দেখা বাংলা মুভিতে এমন একজনের হাবভাব ও কথাবার্তার ধরন দেখে আরেকজন প্রশ্ন করেন:
“আপনি কি কবিতা-টবিতা লিখেন নাকি?”
কবির উত্তর: “লিখি মানে – যা লিখি, মনে হয় কল্পনার হাতি আকাশে উড়ে যায়।”
দ্রুত বিবর্তনশীল যুগে হালের কবিদের চেহারা-ছুরত, বেশভূষা ও চলনবলনে পরিবর্তন এসেছে। কে কবি, আর কে কবি নন তা ঠাহর করা মুশকিল। সেজন্য স্বয়ং কবিকেই আগ বাড়িয়ে বলতে হয় যে তিনি কবিতা সৃষ্টির মতো দরুহ কর্মটি করেন এবং তার মতো কবিরত্ন আছে বলেই এ ধরায় প্রেম আছে, সঙ্গীত আছে, আকাশ-নদী ও সূর্য আছে এবং পক্ষীরা মধুর সুরে গায় ও বৃক্ষে পুস্পের বিকাশ ঘটে। কবিদের বাইরেও যে আত্মপ্রশংসাকারীর সংখ্যা একেবারেই কম, তা নয়, তবে কবিদের মধ্যে এই ব্যাধি সংক্রামক। সব যুগেই এই ব্যাধি ছিল, এখন তা মহামারীর আকারে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। আত্মপ্রশংসাকারীদের সম্পর্কে ৮শ বছর আগে ইরানি কবি সুফী কবি শেখ সা’দী বলেছেন:
“সানা এ খুদ বখুদ গুফতাম
লা জেবাদ মর্দ এ দান্নারা
চুন জান পিস্তান এ খুদ মালাদ
কুজা লাজ্জাত শাকাদ বা’কী”
বাংলা অর্থ:
“জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে কখনও শোভা পায় না,
যদি তিনি নিজেই নিজের প্রশংসা করেন,
কী সুখ পেতে পারে কোনো নারী
যদি সে নিজেই মর্দন করে নিজ স্তন?”
সন্দেহ নেই কবিদের কাব্য প্রতিভার বিকাশ হৃদয় উৎসারিত। রামায়ণ রচয়িতা বাল্মিকীর কথা পড়েছি, তার প্রথম কবিতা ছিল: “মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং তমগম শ্বাশতী সমা, যৎ ক্রৌঞ্চ মিথুনাদেকাম অবধি কামমোহিতম।” (রে ব্যাধ যতোদিন বেঁচে থাকবি তুই শান্তি পাবি না,
কারণ সকলের অলক্ষে মিলনরত সারসকে তুই হত্যা করেছিস)।
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর ভারতীয় কবি বাল্মিকী যখন তাঁর দীর্ঘ কাব্য রামায়ণ রচনা করেন, তখন রাম, সীতা বা রাবণের অস্তিত্ব ছিল কিনা তা নিয়ে গবেষকরা সন্দেহ পোষণ করলেও রামায়ণের চরিত্রগুলো হিন্দুদের পূজনীয়। কোনো বিতর্কে না গিয়েও স্বীকার করতে হবে যে এটি মূলত হৃদয় উৎসারিত একটি প্রশস্তি কাব্য।
তারও আগে খ্রিষ্টপূর্ব নবম বা অষ্টম শতাব্দীর গ্রীসের অন্ধ কবি হোমারের সৃষ্টি ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডেসি’ আরো বিস্তারিত। মানুষ ও দেবতাদের প্রশস্তির পাশাপাশি তাদের নিরন্তর সংঘাতের প্রাণবন্ত লোমহর্ষক কাহিনী। হোমারের একটি কবিতায় বাল্মিকীর মতোই অভিব্যক্তি দেখা যায়: “মা-বাবাকে যদি সন্তানের সামনে হত্যা করা হয়, তা হলে এর পরিণতি কি হতে পারে?” কবি হিসেবে হোমারের কৃতিত্ব অনেক বেশি এবং আবেদন বিশ্বজনীন, কারণ হোমারের ‘ইলিয়াড’ এর আগে গ্রীসের কোন ইতিহাস ছিল না। তাঁর কাহিনী ও ভৌগোলিক বর্ণনাই গ্রীসের ইতিহাসের ভিত্তি।
সংখ্যাগরিষ্ঠ কবি সমাবেশে কোনো অ-কবির এসব বলাটা ধৃষ্টতা হলেও সাম্প্রতিককালে কবিদের পারস্পরিক পিঠ চুলকানি দৃষ্টি এড়ানোর মতো নয়। ব্যাপারটা এমন যে, কেউ যদি প্রশংসা শিকার করতে চান তাহলে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের জিয়াফতে গোশতের দু’চারটা টুকরা বেশি পাওয়ার আশায় পরিবেশনকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পাশের লোককে দেখিয়ে, “উনাকে দিন, উনার পাতে গোশত নেই।” যাদের বুঝার তারা বুঝে নেন। দোষ দেয়া যায় না, আমাদের অধিকাংশ কবির উত্তরণই ঘটেছে ক্ষমতাধরদের পিঠ চুলকানোর মধ্য দিয়ে, কারণ তারাই ছিলেন কবিদের পৃষ্ঠপোষক। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকের অভাবে এখন তারা যে নিজেদের পিঠ চুলকাবেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সংস্কৃত ভাষার মহাকবি কালিদাস ৫ম শতকের কবি, যিনি ছিলেন রাজা বিক্রমাদিত্যের সভাকবি। তার কবিতায় রাজ প্রশস্তি প্রচুর। কিন্তু উতরে গেছেন কবিতায় প্রকৃতির অপূর্ব ছবি এঁকে। কিন্তু প্রাচীন যুগ থেকেই দেখা যায় অধিকাংশ কবি পৃষ্ঠপোষক ছাড়া কবি হওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না। ক্ষমতাসীনদের তেলমর্দন ও পদলেহনের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই অবশ্য অনেক কবি তাদের সেরা কাজগুলো করতে সক্ষম হয়েছেন। হাজার বছরের বেশি সময় আগে ইরানের কবি ফেরদৌসির লিখা শাহনামা মূলত রাজ প্রশস্তি। বিনিময়মূল্য ধার্য হয়েছিল প্রতি লাইনে একটি সুবর্ণ মুদ্রা। শাহনামা রচনা শেষ হলে কবি যখন তাঁর পারিশ্রমিক ৬০ হাজার সুবর্ণ মুদ্রা দাবী করেন তখন উজিররা চক্রান্ত করে তাকে রৌপ্যমুদ্রা দিতে চাইলে কবি অপমানিত বোধ করেন এবং ইরান শাহকে একটি চিরকুট পাঠিয়ে চলে যান। যাতে লিখা ছিল:
“সুলতানের জন্ম যদি ভালো বংশে হতো তাহলে আমাকে আমাকে স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে মাথায় মুকূট পরিয়ে বিদায় জানাতেন।”
ইতিহাস বলে কবির উদ্দেশ্য এই স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে তার জন্মস্থান তুস এলাকার এক নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা, যাতে এলাকাটি সাংবাৎসরিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু সব কবির উদ্দেশ্য এতো মহৎ নয়। অধিকাংশের উদ্দেশ্য শাসকের তোষামুদ করে নগদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে তোষামুদ একজন কবিকে প্রতিরোধহীন করে ফেলে। আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে হয় তাকে। নাম না জানা কবির একটি ইংরেজি কবিতা আছে:
“তোষামোদির অর্থ অসত্য, ভণ্ডামি, মিথ্যা,
মূর্খের ব্যবহৃত হাতিয়ারের গোপন উদ্দেশ্য,
শুভেচ্ছা আশির্বাদ ধন্য, তোষামোদ তা নয়।”
মানুষকে তেল মর্দন শেখানোর উস্তাদ হিসেবে পরিচিত ডেল কার্নেগির মতে, “প্রশংসা ও তোষামুদের মধ্যে পার্থক্য হলো প্রশংসা আসে হৃদয় থেকে আর তোষামুদ দাঁত থেকে। একটি নি:স্বার্থ, আরেকটি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। একটি বিশ্বজনীনভাবে প্রশংসিত, অন্যটি সার্বজনীনভাবে নিন্দিত।”
আরব-আফ্রিকা অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ‘কাসিদা’ রচনার যে প্রতিযোগিতা ছিল তা মূলত প্রশস্তি কাব্য। কবিরা নিজেদের তরক্কির জন্য, বিশেষ করে শাসক ও অভিজাতদের প্রতি খেয়াল রেখেই কাব্য চর্চায় ব্রতী হতেন। শাসকের ভয়ে ও শাসকের প্রয়োজনে তারা কবিত্ব অর্জন করেছেন। খেতাব ও খিলাতের আশায় কবি হয়েছেন।
মির্জা গালিবের মতো সেরা কবি তার ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং এর মাধ্যমে ইংল্যান্ডের রানির কাছে একটি চিঠি পাঠান। প্রথমে তিনি লর্ড ক্যানিং এর প্রশংসা করে তাকে “আলেকজান্ডারের মতো রাজসিক এবং তারকারাজির মতো ঐশ্বর্যমন্ডিত,” বলে বর্ণনা করেন।
রানির চিঠিতে গালিব উল্লেখ করেন, “ইতিহাসে যারা সত্যিকার অর্থেই মহান শাসক ছিলেন তারা কবিদের পুরস্কৃত করেছেন তাদের মুখ মুক্তা দিয়ে ভরে, সোনা দিয়ে ওজন করে এবং কিছু গ্রামের জোতদারি দিয়ে।” এভাবে কবিরা নিজেদেরকে শাসকের দাসানুদাসে পরিণত করেছেন। অথচ কবির শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জালালুদ্দীন রুমি বলেছেন:
“তুমি বেহেশত ও পৃথিবীর চেয়ে মূল্যবান, এর বেশি কী আর বলবো আমি, তুমি তো নিজেই নিজের মূল্য জানো না।”
কবিদের বৈশিষ্ট হওয়া উচিত নিজের হৃদয়ের কথা বলা, কিন্তু তাদেরকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা তাদের কথা বলে। এক আরবিভাষী কবি এক বাদশাহ’র দরবারে হাজির হলেন। বাদশাহ তুর্কিভাষী, আরবির কিছুই বোঝেন না। অন্য সভাসদরাও উপস্থিত। কবির আবৃতির সময় মাঝে মাঝেই মুচকি হাসছিলেন বাদশাহ, আর মাথা নাড়ছিলেন। সভাসদরা বিস্মিত, কারণ তারা জানেন যে বাদশাহ আরবি বোঝেন না। তারা ভীত, কারণ অনেক সময় তারা আরবিতে বাদশাহ’র সমালোচনা করেছেন, এখন তার ফল ভোগ করতে হবে। বাদশাহ’র কাছে ঘেঁষতে পারে এমন একজনকে তারা নিয়োগ করলো বাদশাহ আসলেই আরবি বোঝেন কিনা তা জানতে। একদিন বাদশাহ’র ফুরফুরে মেজাজ দেখে লোকটি তাকে আরবির জ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্ন করলেন। বাদশাহ বললেন,”আল্লাহর কসম, আমি আরবি জানি না, আরবি কবিতা শুনে আমার হাসি ও মাথা নাড়ানোর কারণ হলো, আমি কবির কবিতা রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম।”
একজন কবি যখন তার সত্তা হারিয়ে ফেলেন তখনই শুধু তোষামুদপূর্ণ কবিতা লিখেন। শুধু উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই যে কবিতা তাদের কাব্য প্রতিভাকে কাজে লাগান তা নয়, অপরের ছিদ্রান্বেষণ করতেও তা ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করেন। তারা নিজেদের খুঁজলি-পাঁচড়া ও ফোঁড়াকে ঘৃণা করেন না, নিজের দূষিত হাত খাবারে দেন এবং আঙ্গুলে লেগে থাকা খাবার চেটে খান। কিন্তু অন্যের হাতে যদি অতি ক্ষুদ্র একটি ফোঁড়া বা সামান্য চুলকানি দেখেন তা হলে ওই ব্যক্তির খাদ্য পরিবেশিত খাদ্য গ্রহণ তো দূরের কথা স্পর্শ করার কথাও ভাবেন না।
আমাদের সেরা কবিরা শাসকের বন্দনা ভুলে যান না। বন্দনার মাত্রার উপর নির্ভর করে কবির প্রাপ্তি। সে প্রাপ্তি আসে খেতাব, অর্থ, সরকারি বাড়ি ও জমির আকারে। প্রতিযোগিতা থেমে নেই। নানাভাবে, নতুন নতুন শব্দ প্রয়োগে আমরা পরিস্থিতিকে এমন করে ফেলেছি যে বন্দনা এখন আমাদের জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে করুণা প্রদর্শনকে আমরা বলি আবেগ, তোষামুদ আমাদের কাছে প্রেম ও ভালোবাসা, প্রচারণার আরেক নাম নাম জ্ঞান, নৈরাজ্য ও নৃশংতায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠলেও সরকার সমর্থকরা দেশে শান্তির সুবাতাস বইছে বলে প্রচার করে, গুজবই আমাদের কাছে তাজা খবর। আমাদের অধিকাংশই ইতিবাচক সমালোচনা করি না অথবা সমালোচনা সহ্য করি না, মিথ্যা প্রশংসা ও তোষামুদ করে নিজেদের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করি।
আরবের একটি কাহিনী দিয়ে আমার বিবরণ শেষ করতে চাই। এক ব্যক্তি নামাজে ইমামতি করার সময় কোরআনের আয়াত উচ্চারণ করছিলেন, “বেদুইনরা অবিশ্বাস ও ভন্ডামির দিক থেকে ভীষণ একগুঁয়ে।” ঘটনাক্রমে এক বেদুইন সর্দার নামাজে উপস্থিত ছিলেন, তিনি কাতার ছেড়ে এগিয়ে এসে ইমামের কানের উপর প্রচন্ড ঘুষি মারলেন। সিজদার পর দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে ইমাম তিলাওয়াত করলেন ভিন্ন এক আয়াত, “কিছু কিছু বেদুইন আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করে।” বেদুইন অবাক হয়ে বললেন, “তা হলে মুষ্টাঘাত তোমাকে ভালো আচরণ করতে শিখিয়েছে।” আমাদের মাঝে যারা কবি তাদের সত্ত্বাকে জাগ্রত করতে ও সুপথে পরিচালিত করতেও অদৃশ্য মুষ্টাঘাত প্রয়োজন, যাতে তারা শুধু শাসক নয়, পরস্পরের পিঠ চুলকানো থেকেও বিরত থাকেন এবং কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য সময় ও শ্রম ব্যয়ের পরিবর্তে হৃদয়ের কথা বলেন।