নিউজবাংলাডেস্ক:
ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় ওয়াদা করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সবার আগে গুরুত্ব দেবেন এবং বাকি বিশ্ব কী ভাবল তা নিয়ে একমুহূর্তও মাথা ঘামাবেন না। সেই কথা রেখেছেন ট্রাম্প।
সম্প্রতি ১৩টি দেশের ওপর পরিচালিত ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দেশগুলোর বিশ্বাস নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।
উদাহরণস্বরূপ:
* ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ছিল যুক্তরাজ্যের ৮৩ শতাংশ মানুষের। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৪১ শতাংশে।
* জার্মানিতে ২০০০ সালে ৭৮ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধুভাবাপন্ন ভাবলেও এখন ভাবছেন মাত্র ২৬ শতাংশ।
* প্রতিবেশী দেশের ওপর কানাডাবাসীর বিশ্বাস গত ২০ বছরে ৭২ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিশ্বাস হারানোর কারণ কী?
এর প্রথম উত্তর অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ১৩টি দেশের মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস রয়েছে গড়ে মাত্র ১৬ শতাংশের। এর মধ্যে জাপানে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ এবং বেলজিয়ামে রয়েছে মাত্র নয় শতাংশের।
ট্রাম্পের বিশ্বাসযোগ্যতার রেটিং এত কম হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলোর। ১৩টি দেশে গড়ে ১৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র করোনা মোকাবিলায় ভালো করেছে।
জরিপের ফলে দুই পক্ষেরই লাভ
এ জরিপের ফলাফল নিয়ে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, এটিকে ট্রাম্পবিরোধীরা যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা হিসেবে দেখাচ্ছেন, তেমনি ক্ষমতাসীনরাও এটিকে নিজেদের বড় কৃতিত্ব হিসেবে জাহির করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা পিউ রিসার্চের এ জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে দেখাতে চাইবেন, যুক্তরাষ্ট্র আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং বাকিদের ফায়দা লোটার পথ বন্ধ করায় বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না অন্যরা।
গত মাসে রিপাবলিকানদের জাতীয় সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছিলেন, চার বছর আগে আমি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচন করেছিলাম, কারণ আমাদের দেশের সঙ্গে প্রতারণা আর দেখতে পারছিলাম না। অন্য দেশগুলো বাণিজ্য, সীমান্ত, বৈদেশিক নীতি ও জাতীয় প্রতিরক্ষার বিষয়ে আমাদের থেকে সুবিধা নেবে, সেটা রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি বসে বসে দেখতে পারি না।
ট্রাম্পের সমর্থকেরা এখন বলতেই পারেন, সেই কথা রেখেছেন এ রিপাবলিকান নেতা।
তবে এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন দলীয় সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমি এমন প্রেসিডেন্ট হবো, যে মিত্র ও বন্ধুদের পাশে দাঁড়াবে।’
এদিক থেকে অন্তত একটি বিষয় পরিষ্কার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বাকি মার্কিন প্রেসিডেন্টরা যে নীতি মেনে চলেছেন, ট্রাম্প সেই নীতিতে বড় ধরনের ভাঙন ধরিয়েছেন। আর এমন শক্ত পদক্ষেপের পরিণতি তো থাকবেই।