রাজশাহী প্রতিনিধি:
মোহনপুরে শিবির কর্মী এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে জমি দখল,পুকুর দখল,সাধারণ মানুষকে হয়রানি সহ ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনঠাসা করে দাপুটে নেতায় পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার ধূরইল ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শিবির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তানোর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়াকালীন সময়ে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হন। তার পরিবারের ও বংশের প্রায় সকলেই জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার দাদা মৃত আজমতুল্লা মন্ডল ওরফে মোড়া মন্ডল স্বাধীনতা যুদ্ধে ওই এলাকায় কুখ্যাত রাজাকারদের নেতৃত্ব দিতো। বাবা নছিমুদ্দীন বিএনপির সমর্থক ও এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী। ত্রাস সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখতো। ২০০৭ সালে অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। মোহনপুর থানার মামলা নং ১১/৯৪, তারিখ ২৮/০৮/২০০৭। অস্ত্র আইনে মামলা হলেও আওয়ামীলীগের আশির্বাদে বিএনপি সমর্থক নছিমুদ্দীনের অস্ত্র মামলাটি মাঝ পথেই সরকার প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এলাকার মানুষের মুখে মুখে। তার আপন চাচা জামায়াত কর্মী মো. মকবুল হোসেন বর্তমান নাশকতা মামলার আসামী। ফুফাতো ভাই বিএনপির কর্মী মোস্তফা নাশকতা মামলার আসামী। এই মামলায় গোলাম মোস্তফা পুলিশের হাতে আটক হয়ে কয়েক দিন জেল হাজতে ছিলেন। একই গ্রামের আরেক ফুফাতো ভাই আলী হোসেন (আলাল) জামায়াত কর্মী। বড় চাচা কফিল উদ্দীন (সদ্যপ্রয়াত) জামাতের কট্টরপন্থী। কফিল উদ্দীনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রশিদা জামায়াতের নারী নেত্রী সেজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মহিলাদের সুসংগঠিত করার কাজে তৎপর। সেই পরিবারেরই দেলোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে ২০১৩ সালে ১নং ধূরইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েই এই নয়া আওয়ামীলীগার ত্যাগী নেতাদের কোনঠাসা করে আধিপত্য বিস্তার করে বর্তমান মহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও মহব্বতপুর দারুল উলুম মাদ্রাসার সভাপতি এবং মহব্বতপুর খানপুর ডিগ্রী কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য পদ লাভ করেন। এর আগে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারণা করে সরকারী জল মহল/ পুকুর বন্তোবস্তের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে মিথ্যা মামলা করে মহব্বতপুর গ্রামের বহুল আলোচিত সুংগা পুকুর প্রায় ২০ বিঘা, লগর পুকুর প্রায় ১০ বিঘা, মোহব্বতপুর ২নং খাসপুকুর প্রায় ১০ বিঘা যা স্থানীয়দের কাছে দিঘী নামে পরিচিত, মহব্বতপুর ছুতার পুকুর প্রায় ৩ বিঘা, মহব্বতপুর জুলকুড়া পুকুর প্রায় ২ বিঘা দখলে নিয়ে লীজ দিয়ে কখনো বা নিজের করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও তার মিথ্যা মামলার জন্য মোহনপুরের প্রায় সাড়ে তিনশত পুকুর/ জল মহল লীজ দিতে না পারায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মালিকানা বনাম ওয়াকফ’র গোলযোগের জের ধরে পাঁচপাড়া মৌজার প্রায় ১৪ বিঘা জমি এখন তার দখলে। “ধূরইল বড়বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ” রেজিঃ নং ৮৮২ গঠন করে সভাপতি মো.দেলোয়ার হোসেন খাল খনন করে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে মর্মে কমপক্ষে ৫০০ জন মানুষের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে বহু টাকা আদায় করেছে।
ওদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত বাঁধ এলাকার খানপুর মৌজার পড়ে থাকা জমি খানপুর গ্রামের হত দরিদ্র মান্নান মোস্তফা, মুকুল সহ অন্যরা ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওয়াপদা’র জমি লীজ নিয়েছে মর্মে কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে ওই দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে লীজের টাকা আদায় করছে। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তার ছোট ভাই বুলবুলকে আমার বাড়ি আমার খামার প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ করে দিয়েছে। দেখে মনে হয় টাকা উপার্জনের জন্যই তার আওয়ামীলীগে আসা। রাজনীতির বাহিরে উল্লেখযোগ্য উপার্জন করার মত তার কোন সম্পদ নেই। এদের পরিবার ও বংশ মামলাবাজ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ ভয়ে অভিযোগ করার সাহস পায় না। বর্তমানে দেলোয়ার হোসেন ১নং ধূরইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার অভিপ্রায়ে এলাকার মানুষের কাছে দোয়া চেয়ে বেড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহনপুরের আলফোর রহমান বলেন, দেলোয়ার শিবির কর্মী ছিল এবং তার গোটা পরিবার জামায়াত, বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি আরও বলেন, সাংসদ আয়েন উদ্দিন তাকে দলে নিয়ে ২০১৩ সালে ধূরইল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, দেলোয়ার শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিল। তার অত্যাচারে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এবং অনেক নেতা কর্মীকে মারপিট করে ভয় ভীতি দেখায় বলে ত্যাগী নেতারা আমার কাছে নালিশ দেন। এ ব্যাপারে দেলোয়ার হোসেন কোন কথা বলতে রাজি হননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here