কামাল ইয়াসীন, রাজশাহী: রাজশাহী জেলা পরিষদের দেয়াল ঘষলেই বেরিয়ে আসে আলাদীনের কুপি? কুপি ঘষলে মহূর্তেই ছুটে আসে অতি দয়ালু দৈত্য! আর ওই দৈত্যের নিকট যা চেয়েছেন তা-ই পেয়ে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের বর্তমান উচ্চমান অফিস সহকারী আফজাল হোসেন বাবুল। অথচ অমন কথা বিশ^াসই করতে চাইলেন না গোপইল গ্রামের বেরসিক বন্ধু তৈয়বুর রহমান খন্দকার। ইতোমধ্যেই তিনি উচ্চমান অফিস সহকারী আফজাল হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে দূর্নীতি দমন কমিশন সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
মোহনপুর উপজেলার গোপইল গ্রামের সাবেক সেনা কর্পোরাল তৈয়বুর রহমান খোন্দকার দুদক সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো অভিযোগপত্রে উল্লেখের মাধ্যমে জানিয়েছেন, উপজেলার হরিদাগাছি গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আফজাল হোসেন বাবুল ভুমিহীন হওয়ায় ১৯৮৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে হরিদাগাছি (দরগাবাড়ি) গ্রামে .০২ শতক জমি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় মাস্টার রোল-এ টিকেট চেকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ক্রমান্বয়ে রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রথমে পিয়ন এবং পরে ওই একই অফিসের উচ্চমান অফিস সহকারী পদে চাকুরী পেয়ে দীর্ঘদিন যাবত একই জায়গায় চাকুরী করে আসছেন। তার অঢেল সম্পদের তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে অভিযোগকারী তৈয়বুর রহমান খোন্দকার আরো জানান, আফজাল হোসেন বাবুলের নিজ গ্রাম হরিদাগাছিতে ২টি, পাশেই রায়ঘাটি গ্রামে ১টি ও গোপইল গ্রামে ১টি বিল্ডিং রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি টাকা। হরিদাগাছি মৌজায় আব্দুস সালামের কাছ থেকে ক্রয়কৃত ৮ শতক জমি, যার মূল্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। একই মৌজায় গাফফার দেওয়ানের ক্রয়কৃত ১০ শতক জমি, যার মূল্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। হরিদা গাছি গ্রামের একই মৌজায় মজিবর রহমানের নিকট থেকে ৫ বিঘা জমি ক্রয়। আনুমানিক মূল্য ৫ লক্ষ টাকা। মামুন মন্ডলের ৬৬ শতক আমবাগান, আনুমানিক মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা। হরিদাগাছি গ্রামের পূর্ব পার্শে মরগা বিলে ৫/৬ বিঘা ফসলি জমি, আনুমানিক মূল্য ১৬ লক্ষ টাকা। কেশরহাট বাজারের কার্তিকের ঘরের পাশে দোকান ঘর, মূল্য আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা। কেশরহাট অগ্রণী ব্যাংকের সামনে ৫টি পাকা ঘর, যার মূল্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। কেশরহাট সিনেমা হলের পূর্ব পাশে রায়ঘাটি মৌজায় টিন শেড ১০ কামরা বিশিষ্ট বাড়ী ১৩ শতক জমিসহ মূল্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। উপজেলার আত্রাই মৌজায় তার ক্রয়কৃত জমি রয়েছে। ছাতুপাড়া গ্রামের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে আনুমানিক ৫ বিঘা জমি, ক্রয় মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা। গোপইল মৌজায় মোঃ রমজানের ২৭ শতক জমি, প্রায় ১৪ লক্ষ, রোকেয়া বেগমের ১৭ শতক ৮ লক্ষ, জাকিরের ২৯ শতক ১৫ লক্ষ, আঃ সালামের ০৯ শতক ৫ লক্ষ, সাজ্জাদ মাস্টার জিম এর ২৮ শতক জমি ক্রয় মূল্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। রাজশাহী শহরের কাশিয়াডাঙ্গায় ৫ তলা ভবন যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি টাকা সহ রাজশাহী শহরে একাধিক ফ্লাট বা বাসা রয়েছে। নওগাঁ জেলার মান্দা থানার সাবাই বাজারে তার আপন ভাই বজলুর রশিদের মেয়ের নামে রোজি কমপ্লেক্স নামে ভবনটি তার কেনা। ভাই বজলুর রশিদের মাধ্যমে এক সময় ট্রাকের ব্যবসা করতেন আফজাল হোসেন বাবুল। নামে বেনামে তার আরো অর্থ ও সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওদিকে জেলা পরিষদের উচ্চমান অফিস সহকারী আফজাল হোসেন বাবুল গরু মেরে জুতা দান করতেও ভুল করেন না। তার আর এক ভাই আশরাফুল ইসলাম (বুলু) সংসার চালানোর সামর্থ্য না থাকলেও বাবুল নিজ খরচে তার ভাই বুলুকে পর পর দুই বার হজ্জ পালন করান। এ ছাড়াও এযাবৎ ৩০ জনেরও বেশি লোককে হজ্জ / ওমরাহ করিয়েছেন। কেশরহাট পৌর এলাকা সহ অন্যান্য মসজিদে নিজ খরচে প্রায় ১০০টি এসি লাগিয়ে দিয়েছেন। জলসা মৌসুমে বিভিন্ন মসজিদ কমিটি টাকার লোভে তাকে মাহফিলগুলোতে প্রধান অতিথি করে মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নেন।
আফজাল হোসেন বাবুল গোপইল গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা বিউটিকে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে স্ত্রীর নিজ গ্রাম গোপইলে ১৫/২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাকা দুইতলা ভবন নির্মান করে দ্বিতীয় স্ত্রীর থাকার জায়গা করে দেন।
বিপুল সম্পদ অর্জনের দায়ে অভিযুক্ত জেলা পরিষদের উচ্চমান অফিস সহকারী আফজাল হোসেন বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাবুল জানান, তার মেয়ে, স্ত্রী সহ বিভিন্ন নামে ১৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলোর মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জন করেন।