নিউজ বাংলা ডেস্ক:

গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। বুধবার রাতভর নেতাকর্মীরা ঘিরে রেখেছিলেন তাকে। রাজমনি সিনেমা হল সংলগ্ন সম্রাটের অফিসে অবস্থান করেন তারা। সকাল ৭টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে বিপুল নেতাকর্মী বহুতল ভবনের উপরে-নিচে অবস্থান করছেন। রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখা হয়েছে গাড়ি, মোটরসাইকেল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাজার খানেক নেতাকর্মী নিয়ে সংগঠনের কার্যালয়ে অবস্থান নেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। এ সময় যুবলীগের নেতাকর্মী ‘সম্রাট ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ সহ নানা  স্লোগান দেন। বুধবার ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট গণমাধ্যমকে জানান, র‌্যাব খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর নেতাকর্মীরা সবাই তার অফিসে ছুটে এসেছে।
তার আগে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র‌্যাব। খালেদের গুলশান-২ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাসা থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদক (ইয়াবা) উদ্ধার করা হয়। দুপুর থেকেই খালেদের ওই বাড়িটি ঘিরে রাখেন র‌্যাবের শতাধিক সদস্য।
ওই সময়েই ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযান চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে কাউকে না পেয়ে সেটি সিলগালা করা হয়। মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুড়িয়ে দেয়া হয়। গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। এসব অভিযানে আটক ১৮২ জনের মধ্যে ৩১ জনকে এক বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদ- দিয়েছেন র‌্যাবের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে। চলে মদ ও নারীর আড্ডা। এছাড়াও খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন নিয়মিত টাকা উত্তোলন করা হয়। তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন বেশ কয়েক কোরবানির হাট। নিয়ন্ত্রণ করেন টেন্ডারও।
যুবলীগ নেতা খালেদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ষড়যন্ত্র কি-না, এমন প্রশ্ন তুলে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনও অভিযোগ এলো না, হঠাৎ কেন অভিযোগ এলো? আর অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি? খালেদের গ্রেপ্তার দল ও যুবলীগকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র কি-না?
যুবলীগ নেতা খালেদ গ্রেপ্তারের পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আওয়ামী যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয় কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় শনিবার যুবলীগ নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ঢাকায় ক্যাডার চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে তুলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সে। আমার সংগঠনে চাঁদাবাজ দরকার নেই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমার কাছে আরও তথ্য আছে, রাজধানীর সব সুউচ্চ ভবনের ছাদ দখল নিয়েছে যুবলীগের নেতারা। সেখানে ক্যাসিনো  খোলা হয়েছে। যুবলীগের সবার আমলনামা আমার হাতে এসেছে। আমি সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here