নিউজবাংলা ডেস্ক:
শুক্রবার ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নিজনি নভগ্রোড শহরের গোর্কি স্ট্রিটের একটি বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন ইরিনা স্লাভিনা। ওই সড়কে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে, আগুন নেভাতে সাহায্য করতে দৌড়ে যাচ্ছেন একজন পুরুষ। তবে তিনি বারবার তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে নিজের কোট ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে।
সাংবাদিক ইরিনা স্লাভিনার স্বামী ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে এর সঙ্গে ওই সাংবাদিকের ফ্লাটে তল্লাশি চালানোর কোনও সংযোগের কথা অস্বীকার করেছে তারা।
কোজা প্রেস নামে ছোট একটি নিউজ ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক ছিলেন ইরিনা স্লাভিনা। ওয়েবসাইটটির লক্ষ্য সম্পর্কে যে ঘোষণা দেওয়া আছে তাতে বলা আছে, সেন্সরশিপ ছাড়াই সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ। স্লাভিনার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই ওয়েবসাইটটিতে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
গত বছর এক নিবন্ধে কর্তৃপক্ষকে অবমাননা করার অভিযোগে ইরিনা স্লাভিনাকে জরিমানা করা হয়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ‘ওপেন রাশিয়া’র নির্বাসিত প্রতিষ্ঠাতা মিখাইল খোদোরকোভস্কির সহযোগী নাতালিয়া গ্রায়াজনেভিজ বলেন, ‘এই সংবাদ আমার জন্য সত্যিকারের হতাশার, আমি তাকে চিনতাম। আমি জানতাম তাকে সব সময় হয়রানি, আটক ও জরিমানা করা হতো। তিনি খুবই পরিশ্রমী নারী ছিলেন।’
মৃত্যুর আগে বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে ইরিনা স্লাভিনা জানান, ১২ জন লোক তাদের পারিবারিক ফ্লাটে জোর করে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে তার ও তার মেয়ের ল্যাপটপ এবং তার ও তার স্বামীর মোবাইল ফোন ছাড়াও ফ্লাশ ড্রাইভ জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি বলছে, তারা যে মামলাটি তদন্ত করছে সেটিতে কেবল প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ইরিনা স্লাভিনা। কমিটির এক মুখপাত্র রুশ বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে বলেন, ওই অপরাধের মামলার তদন্তে তিনি কোনও সন্দেহভাজন কিংবা অভিযুক্তও ছিলেন না।
গণতন্ত্রপন্থী গ্রুপ ‘ওপেন রাশিয়া’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাতালিয়া গ্রায়াজনেভিজ জানান, তাদের গ্রুপটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে নিজনি নভগ্রোড শহরে আয়োজিত একটি ‘ফ্রি পিউপিল’ ফোরামে অংশ নেয়। ওই আয়োজনে সাংবাদিক হিসেবে হাজির ছিলেন ইরিনা স্লাভিনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্লাভিনা কোনওভাবেই ওপেন রাশিয়া’র সঙ্গে যুক্ত ছিলো না।
ওই আয়োজন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ইরিনা স্লাভিনাকে পাঁচ হাজার রুবল (রাশিয়ার মুদ্রা) জরিমানা করা হয় বলে জানান নাতালিয়া গ্রায়াজনেভিজ। রুশ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছিলো যে আয়োজনের সংবাদ স্লাভিনা প্রকাশ করেছেন তার সঙ্গে একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সংস্থা’র সম্পৃক্ততা ছিলো।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাশিয়ায় কঠোর একটি মিডিয়া অ্যান্ড ইন্টারনেট আইন কার্যকর হয়েছে। সমালোচক দমনে এই আইন ব্যবহার করা হতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। তবে আইনটি প্রণয়ণের সময় ক্রেমলিনের তরফে দাবি করা হয়, সাইবার নিরাপত্তা উন্নত করতে আইনটির প্রয়োজন রয়েছে।