নিউজবাংলা ডেস্ক
ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। এ অবস্থায় শুধু ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে হবে না ধর্ষকদের ফাসি চাইলেই হবে না, রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। বর্তমান অবস্থা হলো ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থার নমুনা। বাংলাদেশে কোনো আইনের শাসন নেই । সেজন্য একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার জেঁকে বসেছে।
তিনি আজ বুধবার ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আয়োজিত বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাবেশে এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ধর্ষকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় আমরা যদি সোচ্চার না হই তাহলে এই সমস্ত ঘটনা ঘটতেই থাকবে । দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে, সুশাসন নিশ্চিত না হলে এসব বন্ধ করা যাবে না।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাটির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন পার্টির যুগ্-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
সমাবেশে সাংবাদিক ও কলামিস্ট গৌতম দাস বলেন, আইন শৃংখলা ছাড়া যদি রাষ্ট্র চলতো তাহলে গত ৪শ বছর ধরে রাষ্ট্র বিষয়ক এত তত্ব চর্চার দরকার ছিল না। আমরা এটা স্বীকার করি বা না করি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের এটা মনে রাখতে হবে ধর্ষণের সাথে ক্ষমতা সম্পৃক্ত।
সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মণি বলেন, যে জাতি তার মায়ের সম্ভ্রম, বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে পারেনা তাদের ধ্বংস অনিবার্য । যে ফ্যাসিস্ট সরকার ব্যাংক গুলো খালি করে বাড়ি বাড়ি ব্যাংক তৈরী করে তাদের পক্ষে ধর্ষণ সম্ভব। যে সরকার মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিতে পারে তাদের দ্বারা ধর্ষণ সম্ভব। যে সরকার দিনের ভোট রাতে নিতে পারে তাদের জন্য ধর্ষণ সম্ভব। এখন সময় শুধু মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ নয় বরং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. মাইমুল আহসান খান বলেন ক্ষমতা আর অর্থের অসম বন্টনের ফলে সমাজে দুই ধরনের মানুষ তৈরী হয়েছে। এক ধরনের মানুষ নিজকে আইনের উধ্র্বে মনে করে। আরেক ধরনের বিকৃত মানুষ আছে যারা কাউকে ভিকটিম করতে পারলে উল্লসিত হয়। এটা মোকাবেলা করতে রাজনৈতিক, সামাজীক, ধর্মীয় ও নৈতিক ভাবে, সকলের অবস্থান থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা চালাতে হবে।। স্ব স্ব এলাকায় ১০/১২ জনের একটি কমিটি গঠন করে পাহারা দিতে হবে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, গত সাড়ে চার বছরে সাড়ে সাত হাজার নারী ধর্ষিতা হয়েছেন। গত চার মাসে ধর্ষিতা হয়েছেন ৮ শতাধিক নারী। ধর্ষণের বিচারে আইন ও তদন্ত পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিবাদে কোনো পরিবর্তন আসেনা, পরিবর্তন আসে প্রতিরোধে । ধর্ষনের মামলায় ৯৭ ভাগের বিচার হয় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক পরিবর্তন দরকার ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডা আরিফ বিল্লাহ বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আজ ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের কল্যাণে তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেনা । তাই আজ জনগনকে উদ্ুদ্ধ করতে হবে। তাদের জাগিয়ে তুলতে হবে।
মানবাধিকার সংগঠন মায়ের ডাক এর সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, সারাদেশে ছাত্র-ছাত্রীরা আজ যে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাতে আমাদের সবাইকে একাত পোষন করতে হবে।
এবি পার্টির যুগ আহ্বায়ক মেজর অব: ডাঃ আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বর্তমান সময়ের ধর্ষকরা নিজেদেরকে রাষ্ট্রের মালিক মনে করে, তাই তারা নারীদের ভোগ করার অবাধ লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমান্ডার অব. সাব্বির আহমেদ বলেন, এক সময় আমাদের দেশটা ছিল দরীদ্র সীমার নীচে । আর এখন সে দেশটা চলে গেছে চরিত্র সীমার নীচে। যা সত্যি দুঃখজনক, লজ্জাজনক । আমাদেরকে এখনই সোচ্চার হতে হবে কারন মিথ্যা তখনই জিতে যায়, সত্য কথা বলার মত লোকগুলো যখন চুপ হয়ে যায় অথবা চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়।
২০১৫ সালে ত্রসফায়ারে নিহত ছাত্রদল নেতা বাষ্সির বোন ঝুমুর এবং তেজগাঁওয়ের গুম হওয়া কায়সারের স্ত্রী মিনু বেগম ম্বজন হারানোর মর্মস্পর্শী বর্ণনা দেন। তারা অভিযোগ করেন, গুম-খুনের বিচার চাইতে গিয়ে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এবি পার্টির যুগ্ন আহ্বায়ক আনিসুর রহমান কচি, যুগ সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, কেন্দ্রীয় নেতা বি এম নাজমুল হক, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, এবিএম খালিদ হাসান, আনোয়ার সাদাত টুটুল, আব্দুল বাসেত মারজান, শাহ আবদুর রহমান, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা বেবী পাঠান, এডভোকেট আলতাফ হোসাঈন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ইদ্রিস আলী, এএফএম উবাইদুল্লাহ মামুন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট আবুল্লাহ আল হাসান সাকীব, আফিদ হাসান তমাল প্রমুখ । সভা শেষে দলের পক্ষে বিজয়নগরে একটি প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞপ্তি