নিউজ বাংলা ডেস্ক :

ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন। ভারতের মানুষ নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির হাতেই নিজেদের সমর্পণ করেছেন। ফলে ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠন করতে চলেছেন মোদি। রেকর্ড জয়ে মোদির ফের কুর্সিতে বসার খবরে উল্লাসের বন্যা বইছে বিজেপি শিবিরে। গতবারের অর্জিত ফলকেও ছাপিয়ে গেছে এবারের ব্র্যান্ড মোদিকে সামনে রেখে লড়াই করা বিজেপির ফল। বিজেপির গেরুয়া ঝড় হিন্দি বলয় থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, এমনকি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতেও। তবে ভোটের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হতে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, ইভিএমের ভোট গণনার পরে ভিভিপ্যাটের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। ফলে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে।

ফলাফল ঘোষণার মধ্যেই গতকাল টুইট করে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ফের ভারতের জয় হলো। সকলকে নিয়েই আমরা শক্তিশালী দেশ গড়ে তুলবো। সর্বশেষ জানা গেছে, একক ভাবে বিজেপি আগের বারের ২৮২ কে টপকে ৩০০ ছুঁয়ে ফেলেছে। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট এনডিএ-র পেতে চলেছে ৩৫০টি আসন। এনডিএ-র শরিকরা সকলেই ভালো ফল করার দিকে এগিয়ে চলেছে বলে জানা গেছে। বিজেপির প্রায় সব রথী মহারথীরাই জয় নিশ্চিত করেছেন। এবারই প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গান্ধীনগর থেকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ৫ লাখের বেশি ভোটে জয় নিশ্চিত করেছেন।  অন্যদিকে বিরোধীরা বিপর্যয়ের মুখে। কংগ্রেস গতবারের চেয়ে ৮টি আসন বেশি পেয়ে ৫২টিতে এগিয়ে থাকলেও জোট হিসেবে সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট ইউপিএ-র ৯২ আসনে আটকে থাকার সম্ভাবনাই প্রবল। কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী ছাড়া সব রথী মহারথীরাই পরাজিত হয়েছেন।

কংগ্রেস নির্বাচনে প্রবলভাবে ধাক্কা খাবার পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সমস্ত হারের দায় নিজে মাথা পেতে নিয়েছেন সভাপতি রাহুল গান্ধী। আমেথিতে তিনি পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ সুনির্দিষ্টভাবে রায় দিয়েছেন। সেই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। সূত্রের খবর, ফলাফলে হতাশ রাহুল গান্ধী সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আঞ্চলিক দলগুলোর অবস্থাও এবারের নির্বাচনে খুব ভালো নয়। তারা পেতে চলেছে ১০০টি আসন। তেলেগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী বা সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবরা যে মহাজোট গড়ার চেষ্টায় ছিলেন, তাদের নিজেদের রাজ্যেই শোচনীয় ফলের মুখোমুখি হতে হয়েছে।  যে উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী ও অখিলেশের জোটের কাছে বিজেপি উড়ে যাবে বলে বলা হচ্ছিল তাও ভুল প্রমাণ করে বিজেপি ৫০-র বেশি আসনে জয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। জোট পেতে পারে মাত্র ২৫টির মতো আসন। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না গড়ার মাশুল যে মায়াবতী ও অখিলেশকে দিতে হচ্ছে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তবে এনডিএ এবং ইউপিএ জোটের বাইরে থাকা বিজু জনতা দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবারের নির্বাচনে ভালো ফল করতে চলেছে।  মাত্র একমাসের বেশি সময় আগে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যগুলোতে বিজেপি ভালো ফল করতে চলেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আসামে এনআরসি নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হলেও সেখানে বিজেপি শরিকদের সঙ্গে নিয়ে ভালো ফলের দিকে এগিয়ে চলেছে।

বিজেপি তথা এনডিএর এই ভূমিধস সাফল্যের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, প্রথমত, অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করলে গো-বলয়ে বিজেপির ভোটবাক্সে ব্যাপক ধসের ইঙ্গিত থাকলেও, তা হয়নি। দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে নিজেদের আসন ধরে রেখেছে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী দলগুলো। গোবলয়ে যে সামান্য সংখ্যক আসন কমেছে, সেই ক্ষতি মেরামত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বিহারের মতো রাজ্যে। দাক্ষিণাত্যে বিজেপি কখনই শক্তিশালী ছিল না। তবু, কর্নাটকে ভালো করতে চলেছে এনডিএ জোট। এই সব কিছুর যোগফলেই বিপর্যয়ের মুখে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। রাজনৈতিক পর্যক্ষেকদের মতে, বিজেপির পেশাদারিত্বের কাছে হেরে গেছে অন্য দলগুলো। তাছাড়া বিজেপি যে পরিমাণ রিসোর্স নিয়োগ করেছিল তা আর কেউ করতে পারেনি। এ সবেরই যোগফল এই ফলাফল।

‘এই ফকিরের ঝোলা ভর্তি করে দিয়েছেন দেশবাসী’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফলাফল কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায়। আগের বারের চেয়েও বেশি আসন নিয়ে সরকার গঠন করছে বিজেপি। বিপুল ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় বিজেপি তথা এনডিএ। সপ্তদশ লোকসভা ভোটের ফল স্পষ্ট হতেই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি বলেছেন, এই ফকিরের ঝোলা ভর্তি করে দিয়েছেন দেশবাসী। এ বিজয় উপহার দেয়ার জন্য দেশবাসীকে আমি প্রণাম করি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তিনি জোটের শরিক অন্য দলগুলোকে নিয়ে গঠন করবেন নতুন সরকার। সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেছেন, গণতন্ত্রের ইতিহাসে গণতন্ত্রের জন্য মৃত্যু বরণ করা, আগামী প্রজন্মকে প্রেরণা দেবে। গণতন্ত্রের এই উৎসবে, গণতন্ত্রের জন্য যেসব মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, যেসব মানুষ আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান মোদি। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি ভারতবাসীর দায়-দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে সারাবিশ্বকে।

এতে বক্তব্য রাখেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বলেন, আপনাদের সবার পক্ষ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। যেসব কর্মকর্তা এখানে এসেছেন, তাদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই, আপনাদের পরিশ্রমেই বিজেপির এই বিপুল সাফল্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here