নিউজ বাংলা ডেস্ক :
ইসলামের ঐতিহ্যবাহী আরাফাতের ময়দানে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। বিশ্বের কমপক্ষে ২০ লাখ হজযাত্রী দু’টুকরো সাদা কাপড়ে নিজেকে মুড়িয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিলেন। বিশাল আরাফাতের ময়দান যেন পরিণত হয়ে ওঠে এক শুভ্রতার সমুদ্রে। শনিবার সেখানে সমবেত হজযাত্রীরা সমস্বরে মুহুর্মুহু উচ্চারণ করলেন- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্?ক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ- হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত এবং সব রাজত্ব আপনারই।
শনিবার ভোর থেকেই আরাফাতের ময়দানে ঢল নামে হজযাত্রীদের। সকালের আলো ফোটার আগেই সেখানে সমবেত হওয়া শুরু করেন তারা। এর আগে শুক্রবার তারা তাঁবুর শহর বলে পরিচিত ঐতিহাসিক মিনায় সমবেত হন।
সৌদি আরবের অনলাইন আরব নিউজ লিখেছে, পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শুক্রবার। এদিন মিনায় উপস্থিত হন কমপক্ষে ২০ লাখ হজযাত্রী। এখান থেকে শনিবার তারা ছুটে যান পবিত্র আরাফাতের ময়দানে, যা পবিত্র মক্কা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। এখানে হজযাত্রীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, সকল ভেদাভেদ ভুলে আবেগঘন দিন অতিবাহিত করেন। মহান আল্লাহর দরবারে নিজেকে সঁপে দিয়ে ইবাদত করেন। অসংখ্য হজযাত্রীকে আল্লাহর দরবারে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। মুসলমানদের কাছে পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করেন। হজের খুতবা শোনেন। জোহর ও আসরের নামাজ পড়েন। সৌদি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মসজিদে নামিরাহ থেকে এবার হজের খুতবা পড়েন শেখ মুহাম্মদ বিন হাসান আল-শাইখ। এ খুতবা রেডিও ও টেলিভিশনে সমপ্রচার করা হয় বিশ্বময়।
হজযাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়। আল্লাহর এসব মেহমানকে সেবা দিতে পেরে গর্ব প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র বাসাম আত্তিয়া। ওদিকে হজ করতে যেতে পেরে সন্তুষ্টি, শুকরিয়া প্রকাশ করেছেন অনেকে। তার মধ্যে পাকিস্তানের মোহাম্মদ জামিল অন্যতম। তিনি বলেন, এ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। সারা জীবন এই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করেছি। খুব খুশি লাগছে। আমরা সারাবিশ্বের মুসলিমের জন্য প্রার্থনা করছি। বিশেষ করে কাশ্মীর, ফিলিস্তিনের মতো বিভিন্ন স্থানে যেসব ভাইবোন সমস্যার মধ্যে আছেন তাদের জন্য দোয়া করছি। তাদের সবার জন্য দোয়া করছি। দোয়া করছি পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য। সৌদি আরবের নাগরিক রাহাফ নিয়াজি প্রথমবার হজ করছেন। তিনি বলেছেন, হজ করতে পেরে শুকরিয়া আদায় করছি।
সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিশ্বের ১৭২টি দেশের প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান এবার হজ করছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার। ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হলো হজ। প্রতিবছরের মতো এবারও হজের দিন ভোরে কাবা আচ্ছাদিত করা হয় নতুন গিলাফে। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সভাপতি শেখ আবদুল রহমান বিন আবদুল আজিজ আল-সুদাইসের তত্ত্বাবধানে শনিবার ফজরের নামাজের পর নতুন গিলাফ পরানো হয়।
আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে শনিবার সন্ধ্যায় মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করার কথা হজযাত্রীদের। মুজদালিফায় থাকার সময় রাতেই তাদের পাথর সংগ্রহ করার কথা, যা মিনার জামারায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছুড়বেন তারা। রোববার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুড়বেন। এরপর ঈদের সকালে কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।