নিউজ বাংলা প্রতিবেদন
ধর্ষনের পর হত্যার শিকার সাদিয়ার (১০) বাবা—মার আহাজারি আজও থামেনি। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে তারা পাগলপ্রায়। মেয়ের ওপর ঘটে যাওয়া পৈশাচিক ঘটনার কথা স্মরণ করে একবুক হাহাকার নিয়ে প্রতিটি দিন কাটে মা সোনিয়া আক্তার ও বাবা রফিকুল ইসলামের। হত্যাকারী কিশোর অপরাধী মো. শুভ’র (১৯) সবোর্চ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আশা নিয়ে গত দুবছর ধরে আদালত প্রাঙ্গণে ঘুরছেন এই দম্পতি।
মাদ্রাসা ছাত্রী শিশু সাদিয়াকে ফুসলিয়ে রামপুরা থেকে নিয়ে গত ১৯/১২/১৯ তারিখে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যা করে ভয়ংকর কিশোর অপরাধী শুভ। ঘটনার পর রামপুরার প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মানববন্ধন করে সর্বস্তরের বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা খুনী ও ধর্ষক শুভ ফাঁসি দাবি করে।
বাবা রফিকুল ইসলামের অভিযোগ ঘটনার দু’বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। শুভর পরিবার টাকা পয়সা খরচ করে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। খুনীর বয়স কমিয়ে অপরাধের দায় থেকে তাকে মুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। গাড়ি চালক রফিকুল ইসলাম জানান, মেয়ের বিচারের জন্য তিনি আরও নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। অপরাধ প্রমানিত হবার পরও তাকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন তাকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিলেও তিনি তেমনটি দেখতে পাচ্ছেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আবারো বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ইন্টারনেট লাইনের কমীর্ শুভ রামপুরার টিভি লিংক রোড এলাকায় সাদিয়াকে অন্য শিশুদের সঙ্গে মাঝে মাঝে খেলতে দেখে তাকে ধর্ষন পরিকল্পনা করে। বিভিন্ন সময়ে তাকে চকলেট—টিপস কিনে দিয়ে তার সাথে সখ্যতার চেষ্টা করে। ঘটনার দিন ২০/১২/১৯ তারিখে বিকাল পাঁচটার দিকে এক সিএনজি চালককে প্রস্তাব দেয় তাদের দুজনকে নির্জনস্থানে ঘুরতে নিয়ে যাবার। সিএনজি চালক রাজি না হলে তাকে ৫ হাজার টাকা দেবার প্রলোভন দেখায়। পরে তার সাথে থাকা ছয় হাজার টাকার পুরোটাই দেবার কথা বললে সে রাজি হয়। সাদিয়ার জন্য তারা তার নানা বাড়ির রাস্তায় অপেক্ষা করে। একপর্যায়ে সাদিয়া রাস্তায় বের হলে শুভ তাকে ঘুরতে যেতে রাজি করায়। সিএনজি চালক তাদের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বেয়ারা মুসলিম নগর এলাকার একটি কাশফুলের নির্জন মাঠে নিয়ে যায়। কাশফুলের ভেতরে নিয়ে শিশু সাদিয়াকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে গেলে পুলিশ তাকে ধরতে পারে সেই আশঙ্কায় সাদিয়াকে গলাটিপে হত্যা করে। সিএনজি চালক রাত বারোটার দিকে রামপুরার মধুবনের অদূরে শুভকে নামিয়ে দেয়।
এদিকে সাদিয়াকে খুঁজে না পয়ে রামপুরা থানায় ২১/১২/১৯ তারিখ সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা রফিকুল ইসলাম। যার নং ১৪৭০৮। পরে রামপুরা থানা তার মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে মর্মে সংবাদ দেয়। রফিকুল ইসলাম থানায় গিয়ে তার মেয়ের লাশের ছবি শনাক্ত করেন।
ঘটনার দুদিন পর গ্রেপ্তার হয় শুভ। পুলিশের জবানবন্দিতে সে ঘটনার বিবরণ দেয়। শিশু সাদিয়া হত্যার ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯(২) ধারায় মামলা হয়। মামলা নং—৪৫(১২)১৯ তারিখ: ২১/১২/২০১৯। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এস আই মো. সাক্রাতুল ইসলাম। যিনি এখন বদলী হয়ে গাজীপুর থানায় আছেন।
এদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রশিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ঢাকায় দায়ের করা ২৩/১২/১৯ তারিখের রিমান্ড আবেদনে শুভর বয়স ১৯ উল্লেখ করা হলেও ৫/৪/২০২০ তারিখে (স্মারক নম্বর ৩৮৪/২০২০ তারিখ ১৩/৪/২০২০) স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার হাজতী আসামী মো. শুভর বয়স ১৩ বা ১৪ বলে মতামত দেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮ ওয়ার্ড কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী লিয়াকত আলীর ভাই ব্যবসায়ী বাশার আলী বশির বলেন, রফিকুল ইসলাম অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক। তার পক্ষে সচেতনভাবে একটি মামলা পরিচালনা সম্ভব নয়। প্রশাসনের উচিত এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়িয়ে অপরাধী শুভর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। কীভাবে মেডিকেল রিপোর্টে বয়স কমিয়ে ১৩ করা হলো এ নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সঠিক বিচারের জন্য আমরা জনগণকে নিয়ে মাঠে সোচ্চার থাকবো প্রয়োজনে আবার মানববন্ধন করব। একজন খুনী অপরাধী যেন আইনে ফাঁক ফোকর গলিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারে।
রামপুরার মারকাজুল কোরআন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আফজান হোসেন বলেন, খুনীকে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অপরাধীরা ছাড় পেলে এমন পৈশাচিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। একটি শান্তিÍর সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধের কঠিন বিচার করতে হবে। এমন নিরাপরাধ মাসুম শিশুর মৃত্যু আর দেখতে চাইনা।