হোসাইন ই তুহিন: কোনো সন্দেহ নেই যে শিরোনামের কথাটি বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরণীয় উক্তি। রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকার উদ্দেশ্যে একটি প্রবন্ধ লেখেন, যার সূচনা তিনি এভাবেই করেছিলেন।
কবিতা কী আর কে কবি? দুটো বিষয়ই বহুল আলোচিত। জীবনানন্দ দাশ বলেছেন ‘ কবিতো সেই মানুষ যিনি সত্যকে অনুভব করতে পারেন এবং ভাষার আবেগ প্রদীপ্তির সাহায্যে আমাদের হৃদয়ের ভেতর পৌঁছিয়ে দিতে পারেন ‘
অন্যত্র তিনি লিখেছেন- ‘কবির হৃদয়ে থাকবে কল্পনা ; সে কল্পনার ভেতরে থাকবে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা ‘।
আর কবিতা সম্পর্কে জীবনানন্দের ভাষ্য : ‘ কবিতা কোনো এক বিশেষ মুহুর্তে কবি মনের সততাপ্রসূত অভিজ্ঞতা ও কল্পনা প্রতিভার দৈব সন্তান ‘।
কবিতা আর কবির সংজ্ঞায় দুটি বিষয় প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়েছে আর তা হলো কল্পনাপ্রতিভা আর সততা। সত্য কিন্তু নয়!
শিল্পসৃষ্টিতে কল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ইমানুয়েল কান্টের সময় থেকে। একজন কবি তার লেখনীর মাধ্যমে কল্পনার রাজ্যে পথ দেখান আর পাঠকগণ ঐ পথে হেঁটে চলে। এটাই হলো কল্পনা প্রতিভা।
এখন আর একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। একটি আদর্শ কবিতা কি সবার মনকেই জাগিয়ে তুলবে?
না, জীবনানন্দ দাশ মনে করেন, ‘ শ্রেষ্ঠ কবিতা হলেই তা গণমানুষের মাঝে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠবে তা নয়। কবিতা যেকোনো মানুষেরই উপলব্ধিতে জাগিয়ে তুলবে আনন্দানুভূতি, তাও নয়’। ‘ কবিতা সকলের জন্য নয়, অনেকের জন্যও নয়; কবিতা কেবল কবিতাবোদ্ধাদের জন্য ‘।
এবার আসুন আদর্শ সাহিত্যের ব্যাপারে। এ বিষয়ে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মা’রকেজ বলেছেন আদর্শ সাহিত্য ওটাই যা সমকালীন অন্যায়-অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে এবং এর সমাধানের পথ দেখায়। জীবনানন্দ এই ধারণার আরও বিস্তৃত বর্ণনা করেছিলেন তার প্রবন্ধে যার মূল কথা, কবিদের অতীত এবং বর্তমান সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা থাকবে, এবং তার ওপর ভিত্তি করে
বর্তমান সমস্যাগুলো তার কবিতায় শিল্পের মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে।
#ইমানুয়েল কান্ট: জার্মান দার্শনিক (১৭২৪-১৮০৪)
তথ্য উৎস: কবিতার কথা, প্রবন্ধ, প্রকাশ ; কবিতা, বৈশাখ ১৩৪৫।
লেখক: স্কুল প্রশাসক ও গবেষক