নিউজবাংলা ডেস্ক:
দীর্ঘদিন ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এর মধ্যে নতুন করে আরও দাম বেড়েছে। সাতটি সবজির কেজি ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। বাকি সবজিগুলোর বেশিরভাগের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার কাছাকাছি। আর হঠাৎ করে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়া আলুর কেজি এখনও ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা আলুর কেজি বিক্রি করছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৩০ টাকা।
হঠাৎ আলুর এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় সম্প্রতি খুচরা, পাইকারি ও কোল্ড স্টোর পর্যায়ে সর্বোচ্চ দামে বেঁধে দিয়েছে সরকার। সরকারের নির্দেশে অনুযায়ী, খুচরায় প্রতিকেজি আলুর দাম হবে ৩০ টাকা। তবে সরকারের এ নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে মধ্য বাড্ডার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারের সব কথা কি মানুষ শোনে? আমরা ৩০ টাকা কেজি কিনতে না পারলে বিক্রি করবো কীভাবে? পাইকারিতে আমাদের প্রতিকেজি আলু কেনা পড়ছে ৪০-৪২ টাকা। অন্যান্য খরচ যোগ করে এক কেজি আলু ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না। আড়ৎ ও কোল্ড স্টোরে কড়া নজরদারি করতে হবে। আড়ৎ ও কোল্ড স্টোরে আলুর দাম কমলে, খুচরা বাজারেও দাম কমে যাবে।
এদিকে গত সপ্তাহের মতো এখনও শিম, টমেটো, গাজর, বেগুন, বরবটি ও উস্তার কেজি একশর ঘরে রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে একশ টাকার তালিকায় নাম লিখিয়েছে শসা।
এর মধ্যে টমেটো গত কয়েক মাসের মতো এখনও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আর শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।
বরবটির কেজি গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনও গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে উস্তারও। এক কেজি উস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
এগুলোর পাশাপাশি বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দুল, কচুর লতি। ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁকরোলের দাম বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
লাউয়ের পিস গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এক হালি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বাজারে আসা শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে শুধু মুলা ও পেঁপে। এর মধ্যে মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
স্বস্তি মিলছে না কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দামেও। এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির জন্যও গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা। গত মাসে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের এমন চড়া দামে ক্রেতাদের মুখ থেকে শুধু হতাশার কথায় শোনা যাচ্ছে। মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা রেজা বলেন, অনেক দিন ধরেই সবজির দাম বেশি। আর এক সপ্তাহে ধরে বাজারে সবকিছুর দাম আগুন। একশ টাকার সবজি কিনলে এক বেলাও ঠিক মতো হয় না। এক সপ্তাহে শুধু সবজির পেছনেই দেড়-দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, আমাদের পক্ষে টেকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কেনা মিলন কর্মকার বলেন, আমাদের কপাল থেকে সবজি প্রায় উঠে গেছে। বেশিরভাগ সবজির কেজি একশ টাকা। এত দাম দিয়ে সবজি কি করে কিনব? হিসাব করে দেখলে সবজির থেকে এখন বয়লার মুরগি সস্তা। কারণ বয়লার মুরগির কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন রামপুরার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, একশ টাকার সবজি কিনলে একদিনও হয় না। ২০০ টাকার বয়লার মুরগি কিনলে টেনেটুনে দুই দিন নেয়া যায়। এর সঙ্গে মসলা ও তেলের খরচ আছে। বাস্তবতা হলো, এখন স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন চালানো দায় হয়ে গেছে। একবেলা না খেয়ে থেকেও খরচের লাগাম টানা যাচ্ছে না।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. মিন্টু বলেন, বন্যার পর টানা বৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে সবজির দাম এমন চড়া। সামনের সপ্তাহে সব সবজির কেজি একশ টাকা হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পরিস্থিতি যা তাতে জানুয়ারির আগে সবজির দাম কমার সম্ভাবনা কম।
রামপুরার এক ব্যবসায়ী বলেন, সবজির দাম বাড়ায় আমরাও বিপাকে আছি। বিক্রি অনেক কমে গেছে। আবার দাম বেশি হওয়ায় কারণে অল্প লাভে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া আড়ৎ থেকে সবজি আনার পর নষ্ট অনেক সবজি ফেলে দিতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে কোনো রকমে আসল টিকছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।