হুমায়ুন কবির সোহাগ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম,স্বেচ্ছাচারিতা, কলেজের শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ নেওয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে কলেজ গভর্নিং কমিটির সদস্যরা তাকে বহিস্কার করেন। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি উপজেলা নির্বাহ অফিসার সূবর্না রানী সাহা তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতাও পান।এ কারণে কলেজের ৯৮ জন শিক্ষক কর্মচারির বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে । ২০১৬ সালের ২৪ জুন কলেজের গভর্ণিং বডি প্রথমে তাকে সাময়িক বরখস্থ করেন। পক্ষন্তরে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান কে চূড়ান্ত বরখস্থ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্র প্রেরণ করেন এবং ২৪/৬/২০১৬ ইং তারিখ থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল মজিদ মন্ডল। এ সময় মাহবুবুর রহমান হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে সাবেক অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান রিট মামলার আদেশ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৬/৫/২০২১ তারিখের ৪৩৫৯৮(৪) নং স্বারকের্র পত্র, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ৩১৭/১৯ তারিখের ২২০/১(৯) স্বারকের নির্দেশে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ৭/৮/২০১৯ তারিখের ৩২৩২/৮ স্বারকে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ৮/৮/২০১৯ তারিখে সরকারী মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্না রানীর নিকট যোগদান পত্র দাখিল করেন। দাখিলকৃত কাগজ পত্র দেখে সভাপতি সাহেবের সন্ধেহ হয়। পরবর্তীতে সভাপতি তাকে যোগদান না করিয়ে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি প্রেরণ করেন। এ ছাড়া সাবেক অধ্যক্ষ মাহবুুর রহমান যোগদানপত্রের সাথে সংযুক্ত হাইকোর্টের রায়ে, কলেজের নামকরণ মিল না থাকা, ভুয়া স্বাক্ষর করে কাগজপত্র দাখিল করেন। কাগজপত্র দেখে সভাপতির সন্ধেহ হলে তিনি যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি। সংশোধিত করে যোগদানের জন্য লিখিত আদেশ দেন। সাবেক অধ্যক্ষ হাইকোটে মামলা করার আদেশের রায় তার বিপক্ষে যায়। কিন্তু তিনি কাগজপত্র জাল জালিয়াতি করে, স্বাক্ষর জাল করে যোগদান করতে আসেন। অদ্যবধি ২০২১ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সংশোধিত কাগজ পত্র দাখিল করতে ব্যার্থ হওয়ায় তিনি যোগদান করতে আসেননি। তারই কারণে অত্র কলেজের ৯৮ শিক্ষক কর্মচারি ১৪ মাস যাবত বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। জানা যায়,রাজনৈতিকভাবে তিনি ছাত্রশিবির থেকে জামায়াত ইসলামের সাথে জড়িত রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের লাউখালি গ্রামে। বিগত জোট সরকারের আমলে অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান ইউনিয়নের জামায়াতের ইউনিয়নের আমিরের দায়িত্ব পালন করতেন। পরে যশোর জেলা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হন। এভাবে দলের প্রভাব খাটিয়ে লাউখালি গ্রামের ইউপি মেম্বর আওয়ামীলীগ করার কারণে দূর্গাপদ মজুমদার কে পিটিয়ে জখম করে সহায় সম্পত্তি জোর করে লিখে নিয়ে পরিবারসহ তাকে ভারতে যেতে বাধ্য করেন । মিন্টু নামে একজন কে পিটিয়ে জখম করে দেশ ছাড়া করে পরে তাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে গ্রামে ফিরতে হয় বলেও তিনি জানান।
অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে তিনি বিভিন্ন সময়ে কলেজে উৎকোচ গ্রহণ করে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া কলেজের আয়ের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ২২ লাখ টাকা। ঝিনাইদহ ৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার ২০১৬ সালের ২০ জুলাই সুপ্রিম কোটে একটি রিট করেন যার নং ১২২৬১/১৯। সেই রিটের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোটে সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন। দায়েরকৃত আপিল অদ্যবধি পর্যন্ত শুনানি হয়নি।
ড.মোঃ মাহবুবুর রহমানের দুর্নীতির তদন্ত কমিটির আহবায়ক ছিলেন যশোর সরকারি সিটি কলেজের অধ্যাপক সেলিমুল আলম খান, সদস্য ছিলেন সরকারি কে,সি, কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মহব্বত হোসেন, কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোশারফ হোসেন, শরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎসাহী সদস্য শরিফুল ইসলাম ও শিক্ষক প্রতিনিধি আশরাফ মন্ডল। সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান ৩১/১/২০০৮ সালে যোগদান করেন, যোগদানের এক বছর পর তার বকেয়াসহ তার এমপিও হয়েছিল ৯ কোডে। দই বছর পরে তার এমপিও হয়েছিল ৪ কোডে। কিন্তু যোগদানের পর থেকে তিনি পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই ৪ কোডে প্রদত্ত ২০% বেতন ছাড়া ও অধিক হারে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি ১ লাখ ৩ হাজার ১৮০ টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করেন। অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান আত্নসাতকৃত টাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অনার্স ভবন মেরামত কাজের বাবদ ১৫ লক্ষ ২২ হাজার টাকা, ২০১১ সালের ছাত্র ছাত্রী ভতি বাবদ ৫৫ হাজার টাকা, যাতায়াত বাবদ ৫৫ হাজার টাকা, কলেজের আয়ের ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্নসাত করেন। ২০১৫ সালে কলেজে আয় দেখানো হয়েছে ৯১,৫৮৫৮৭ টাকা, ব্যায় দেখানো হয়েছে ৮৫০৩৭৯৩ টাকা। অবশিষ্ট ৬ লাখ ৫৪, হাজার ৭৯৪ টাকার তিনি আত্নসাত করেছেন। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।