নিউজ বাংলা ডেস্ক: বর্তমান দুনিয়াতে প্রতিদিন আমরা কমবেশি নেট ব্যবহার করি। এই নেটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুুইটার, লিংকএড ইন, ইনষ্টাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করি। এই মাধ্যমগুলি আমাদের জীবন  যেমন সুন্দর ও কর্মময় করতে সাহায্য করে, তেমনি এই মাধ্যমগুলির আর্বিভাব, ব্যবহার ও বির্বতনের ধারায় আমাদের অসচেতনতার কারণে আমাদের জীবন হয়ে উঠে যন্ত্রনাময়, দুঃসহ, জটিল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জীবন সংহারী। কাজেই আমাদের প্রতেকেরই উচিত এই বিষয়ে সচেতন হওয়া, সুন্দরভাবে তা চর্চা করা এবং অন্যদেরকেও সচেতন করা ।  কারণ একটাই, আর সেটা হচ্ছে মাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে – সচেতন সুন্দর জীবন যাপন।

ওজন কমাতে —  সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও কাজে আসতে পারে।

লোভনীয় খাবারের ছবি এড়ানো: অস্বাস্থ্যকর কিন্তু মুখরোচক খাবারগুলো দেখতে অত্যন্ত লোভনীয়। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পিৎজা, বার্গারের ছবি দেখলে নিজেকে আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। মনে হয় গোল্লায় যাক ওজন কমানো, আজকেই ওটা খেতে হবে। বিশেষজ্ঞরাও এর সঙ্গে সহমত, তাদের মতে, নিয়মিত লোভনীয় খাবারের ছবি ক্ষুধা বাড়ায়। তাই এই ধরনের ছবি বা ভিডিও সংবলীত ‘পোস্ট’ ‘আনফলো’ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

স্বাস্থ্যকর পরামর্শ: অস্বাস্থ্যকর খাবারের ‘পোস্ট’ যখন লোভ বাড়াচ্ছে, তাহলে স্বাস্থ্যকর পরামর্শ সংবলীত ‘পোস্ট’ দেখলে কেমন হয়? হয়ত স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রতি লোভ বাড়বে। আর ওজন কমানোর যাত্রায় মনোবল ও আগ্রহ ধরে রাখাই সবচাইতে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’। আর এই ‘চ্যালেঞ্জ’ মোকাবেলা করতেও সাহায্য করবে স্বাস্থ্যকর ‘পোস্ট’গুলো। ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অন্যদের ওজন কমাতে সফল হওয়া গল্প ইত্যাদি দেখতে পারেন, অন্যান্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পাড়েন। এতে অন্যরা অনুপ্রাণিত না হলেও নিজের অনুপ্রেরণা ঠিকই বাড়বে।

নিজের ছবি: নিজ অনুভুতি, জীবনযাত্রা ইত্যাদি প্রকাশ করাই যেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মুল উদ্দেশ্য। তাই যদি হয়, তবে নিজের স্বাস্থ্যকর জীবন গড়ে তোলার প্রয়াস বাদ যাবে কেনো। ওজন কমানোর জন্য নিজের চেষ্টা, ব্যর্থতা, সাফল্য সবই তুলে ধরতে পারেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর মাধ্যমে বন্ধুদের কাছ থেকে যে অনুপ্রেরণা, পরামর্শ, প্রশংসা পাবেন তা আপনার মনোবল বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুন, বাড়বে আত্নবিশ্বাস। আবার আপনার কাছ থেকে অন্যরাও অনুপ্রেরণা পাবে।

লিখুন নিজের গল্প: ওজন কমানোর লক্ষ্যে আপনি কি করছেন, তাতে কিভাবে উপকার হচ্ছে, লক্ষ অর্জনের পথে কতটা এগোলেন, কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এসবকিছুই লিখে রাখতে পারেন। এতে নিজের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, সাফল্যগুলোর আনন্দ আরেকটু বাড়বে। আবার এই গল্পগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে বন্ধুদের সাধুবাদ আপনাকে আরও তৃপ্তি দেবে।

খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে অ্যাপ: নিজের খাদ্যাভ্যাস নজরদারিতে রাখা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই কাজে ব্যবহার করতে পারেন স্মার্টফোনের বিভিন্ন ‘অ্যাপ’। এতে করে কতটুকু ক্যালরি গ্রহন করলেন, কতটুকু ঝরালেন, কখন আসলেই ক্ষুধা লেগেছে আর কোনটা শুধুই জিহ্বার ক্ষুধা তার পার্থক্য বুঝতে পারবেন। লক্ষ্য অর্জন হবে আরও সহজ ও মজার।

 

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর এই যুগে বাস্তব জীবনকেই হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই। এর থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সাংসারিক জীবনে সম্পর্কের অবনতি ঘটতেই পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বন্ধুত্ব রাখতে গিয়ে শেষ কবে একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন তা আর মনে নেই। শুধু বন্ধুমহল নয়, পরিবার এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে একারণে।

নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে জীবনযাপনবিষয়ক এক ওয়েবসাইট।

সময় নির্ধারণ: নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর ই মেইল, সোশাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন, গেইমস ইত্যাদির দিকে নজর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে হবে।

পরিবারের সদস্যদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া: আপনার সঙ্গী কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য আশপাশে থাকলে মোবাইল ফোনে মুখ গুজে না থেকে তাদের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। পাশাপাশি কথাও বলেতে হবে। না হলে বিষয়টি গুরুজন, সমবয়সি, স্নেহভাজন, সঙ্গী সবার চোখেই বেয়াদবি, তাচ্ছিল্য কিংবা অসামাজিকতার প্রকাশ।

ফোন দূরে রাখা: সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটানোর মাঝখানেই ফোনের দিকে মনোযোগী হওয়াটা সংসার ভাঙার কারণও হয়ে যেতে পারে। তাই নিজেদের মধ্যে একান্ত সময় কাটানোর সময় ফোন নাগালের বাইরে রাখা উচিত।

ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা: পরিবার, বন্ধুমহলে সময় কাটানোর সময় ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখতে পারেন। ফলে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারবে না।

 

“দুশ্চিন্তার বিষয় হল সামাজিক যোগাযোগে ভালো কোনো অভিজ্ঞতা ব্যবহারকারীদের খুব একটা ভালো অনুভূতি দেয় না, তবে খারাপ অভিজ্ঞতা বাড়ায় একাকিত্বের হতাশায় ভোগার আশঙ্কা।” এমনটাই বলেন গবেষকরা।

গবেষণার প্রধান লেখক, এমটিএইচ’য়ের পরিচালক ব্রায়ান প্রাইম্যাক বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উদ্দেশ্য হল মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা। তবে আশ্চর্যজনক এবং অবাক করার বিষয় হল, আমাদের তদন্ত বা পর্যবেক্ষণ এই মাধ্যমেগুলো মানুষের একাকিত্বের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছে।”

‘আমেরিকান জার্নাল অফ হেল্থ প্রোমোশন’ জার্নালে এই গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করা একাকিত্বেরই অপর নাম। আর এরসঙ্গে স্বাস্থ্যহানিও জড়িয়ে আছে। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হতাশাগ্রস্ততা।’

এই গবেষণার জন্য প্রাইম্যাক ও তার দল ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি ১,১৭৮ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীকে পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা হয় কী মাত্রায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় এবং এর কারণে তারা নিজেকে কতটা একা অনুভব করেন।

নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মাত্রা প্রতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণকারীদের একাকিত্বের মাত্রা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে ইতিবাচক অভিজ্ঞতার মাত্রা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের একাকিত্বের তেমন উন্নতি হয়েছে বলে জানায়নি।

গবেষণার আরেক লেখন জেইমি সিডানি বলেন, “ভালো অভিজ্ঞতার তুলনায় বাজে অভিজ্ঞতাকে বেশি মুল্য দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে প্রায় প্রতিটি মানুষের মাঝে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বেশি প্রযোজ্য।”

প্রাইম্যাক যোগ করেন, “চিকিৎসকদের উচিত মানুষকে অনলাইন-ভিত্তিক বাজে অভিজ্ঞতাগুলোর সঙ্গে আরও চিন্তাশীলভাবে মোকাবেলা করার অনুপ্রেরণা দেওয়া। ফলে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া এবং সেটা থেকে একাকিত্বের শিকার হওয়া আশঙ্কা কমবে।”

গবেষকরা বলেন, “যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক বেশি বিস্তৃত, তাই এখানে বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার কারণ এবং শিকার হওয়া মানুষগুলোকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে গভীর চিন্তার প্রয়োজন আছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here