বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় সাংসদ নুসরাত জাহানকে। তিনি যখন তুরস্কে নিজের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত, তখন বসিরহাটে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ৮ জুন পতাকা খোলাকে কেন্দ্র করে নুসরাতের নির্বাচনী এলাকা বসিরহাটের সন্দেশখালির ন্যাজাটে তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন তৃণমূল ও দুজন বিজেপি কর্মী নিহত হন। সেই ঘটনার পর তৃণমূল অভিযোগ করে, তাদের বৈঠকে বিজেপি হামলা চালিয়েছে এবং বিজেপির অভিযোগ, পতাকা খোলার সময় তৃণমূল তাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ জুন রাতে হবু স্বামী নিখিল জৈন আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে উড়াল দেন নুসরাত জাহান।
যখন তাঁর নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক বিরোধে তিনজন নিহত হয়েছেন, এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে, যেকোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, ঠিক সেই সময় নিজের বিয়ের জন্য তুরস্কে যান নুসরাত জাহান। নির্বাচনী এলাকা আর এলাকার মানুষের নিরাপত্তার চেয়ে নিজের বিয়েকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এসব কারণে এলাকায় খুবই সমালোচিত হন তিনি।
এবার তুরস্ক থেকে ফিরে নুসরাত জাহান সাংবাদিকদের বললেন, ‘সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। দলের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। তুরস্কে বসেই প্রশাসনের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
ন্যাজাটে তৃণমূল ও বিজেপি দলীয় সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর নুসরাত জাহান বলেছিলেন, ‘বন্ধুরা, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, এলাকায় শিগগিরই শান্তি ফিরবে। এটা মোটেও সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা আর মানবিকতার সঙ্গে আছি। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। বসিরহাট স্পর্শকাতর এলাকা। এখানে মানুষ যাতে নিরাপদে থাকেন, তার ব্যবস্থা করা হবে।’
১৯ জুন বিয়েতে নুসরাত জাহানের পরনে ছিল লাল লেহেঙ্গা চোলি, গলায় বরমালা, ভারী গয়না আর হাতে লাল-সাদা ও সোনালি রঙের চূড় ও কালিরাস এবং মাথায় টিকলি। নিখিল জৈন পরেছিলেন হালকা গোলাপি রঙের শেরওয়ানি। মাথায় সেহরা আর গলায় রত্নখচিত মালা। বিয়ের আসরে নুসরাত জাহান আসেন রাজকন্যার বেশে আর রাজপুত বরের বেশে নিখিল জৈন।
গত সোমবার হয়েছে ইয়ট পার্টি। মঙ্গলবার হলো মেহেদি ও সংগীতের অনুষ্ঠান। বুধবার বিয়ের আগে সকালে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হয়। আর বৃহস্পতিবার খ্রিষ্টান রীতিতে বিয়ের পর সেদিন রাতে হয়েছে ‘হোয়াইট ওয়েডিং’ পার্টি।
তুরস্কের বোদরুমে নুসরাত জাহান আর নিখিল জৈনের বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ৩০ জন। ছিলেন তাঁদের দুজনের পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী আর মেকআপ টিম। বিয়েতে ছিল খাবারের এলাহি আয়োজন।
নুসরাত জাহান ও নিখিল জৈনের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে আগামী ৪ জুলাই, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়, কলকাতায় আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গলে। ২৫ জুন দিল্লিতে সাংসদ হিসেবে লোকসভার প্রথম অধিবেশনে যোগ দেবেন নুসরাত জাহান। এর আগে সাংসদ হিসেবে তিনি শপথ নেবেন।