নিজস্ব প্রতিবেদক,
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদ থেকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়ে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাকে।
সোমবার দলীয় প্যাডে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামে রাঙ্গাকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, “আপনাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হলো। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি আপনি এই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।”
এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে এরশাদের রাজনৈতিক সচিব ও দলের প্রেসিডেয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
তবে এরশাদ তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী, তার ভাষায় ‘সন্তানতুল্য’ হাওলাদারকে কেন মহাসচিব পদ থেকে বাদ দিলেন- সে ব্যাখ্যা ওই চিঠিতে দেওয়া হয়নি।
হাওলাদারের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছিলেন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন।
মহাসচিবের পদ পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে রাঙ্গা বলেছেন, অভিযোগ তদন্ত করে দোষি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০০১ এর নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির তৎকালীন মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে একাংশ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর হাওলাদারকে মহাসচিব করেছিলেন এরশাদ।
দলের মধ্যে টানাপড়েনে ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তিন বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ফের তাকে মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনেন এরশাদ।
এবার নির্বাচনের আগে এরশাদের অসুস্থতা ও হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন যখন ২০১৪ সালের ভোটের আগে তার সিএমইএচ ভর্তি হওয়া নিয়ে ধূম্রজালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল, হাওলাদার তখন হাওয়া পরিষ্কার করার চেষ্টা করে আসছিলেন।
রুহুল আমিন হাওলাদার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী
হওলাদার কতটা বিশ্বস্ত তা বোঝাতে এবং দলের অন্য নেতাদের ওপর নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়ে গত সেপ্টেম্বরে এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছিলেন, “পার্টির নেতারা এখন এক পয়সা সাহায্য করছে না। প্রেসিডিয়াম সদস্যরা পাঁচ হাজার টাকা দেয়। পাঁচ হাজার টাকা তো ভিক্ষুকেও নেয় না। দেওয়ার জন্য আছি আমরা দুজন (হাওলাদারকে দেখিয়ে), আর আছে আমার কর্মীরা।”জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা এবার দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার সময় মোটা টাকায় মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ এনেছিলেন খোদ চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগ অস্বীকার করে হাওলাদার বলে আসছিলেন, ‘সব অপপ্রচার’।
কিন্তু সেই হাওলাদারের মনোনয়নপত্র রোববার ঋণ খেলাপের অভিযোগে বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
স্বাভাবিকভাবেই এ খবর এরশাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হয়ে আসার কথা। তবে সেই ধাক্কা সামাল দিতে তিনি সময় নেননি। মহাসচিব পদে নিয়ে এসেছেন মশিউর রহমান রাঙ্গাকে, যিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মসিউর রহমান রাঙ্গা এরশাদের নিজের এলাকা রংপুরের এমপি। রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি তিনি।
পরিবহন মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে তার।
এবারও রংপুর-১ আসনে এরশাদের লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন রাঙ্গা। আওয়ামী লীগ এ আসনে কোনো প্রার্থী না দেওয়ায় তিনিই এবার গঙ্গাচড়া থেকে মহাজোটের প্রার্থী।