নিউজ বাংলা ডেস্ক :
সাড়ে তিন বছরের শিশুটি মা–বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসেছে গত সপ্তাহে। এখন শিশুটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে মা–বাবা শিশুটিকে ভর্তি করার জন্য শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমন্ডি, পান্থপথ ও শ্যামলীর তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেছেন। ভর্তি করাতে না পেরে শিশুটির আত্মীয়রা সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। দুপুরে বেসরকারি ডেল্টা হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়।
গুরুতর ডেঙ্গুর রোগী ভর্তি করাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনীহার খবর পাওয়া যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শয্যা খালি না থাকলে নতুন রোগী ভর্তি করা সম্ভব না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. আমিনুল হাসান বলেছেন, রোগী ভর্তি করছে না এমন অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি অনুমান করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেবার আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
সাড়ে তিন বছরের শিশুটি মা–বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসেছে গত সপ্তাহে। এখন শিশুটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে মা–বাবা শিশুটিকে ভর্তি করার জন্য গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমন্ডি, পান্থপথ ও শ্যামলীর তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেছেন। ভর্তি করাতে না পেরে শিশুটির আত্মীয়রা সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। দুপুরে বেসরকারি ডেল্টা হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়।
গুরুতর ডেঙ্গুর রোগী ভর্তি করাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনীহার খবর পাওয়া যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শয্যা খালি না থাকলে নতুন রোগী ভর্তি করা সম্ভব না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. আমিনুল হাসান বলেছেন, রোগী ভর্তি করছে না এমন অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি অনুমান করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেবার আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ২০০০ সাল থেকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংরক্ষণ করে। তারা বলছে, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর মোট ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নেয়। গতকাল সেই রেকর্ড ভেঙেছে। কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, এ বছর গতকাল পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৫২৮ জন রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আর গতকাল বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ৬৭১ রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া ৬৮৩ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুতে ৩৫ জন মারা গেছে। তবে সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৮।
এদিকে প্রতিদিন কোনো না নতুন জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও নতুন নয়টি জেলায় ডেঙ্গু রোগীর খবর দিয়েছে। জেলাগুলো: ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ; চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী; খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ। এ নিয়ে মোট ১৯টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলো। এর আগে গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোর, বগুড়া, বরিশাল, ফরিদপুর ও রাজশাহী জেলার তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কেন পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। ডেঙ্গুর চারটি ভাইরাসের মধ্যে ডেনভি-৩ আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে। এ কারণে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।
রাজধানীর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসিন্দা আইনজীবী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছেলে তাফিফ তাওরাতের বয়স তিন বছর সাত মাস। সাত দিন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা শেষে শিশুটি গত সপ্তাহে বাড়ি ফিরেছে।
তাফিফের মা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘চিকিৎসকেরা বলেছেন, ডেঙ্গুতে যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেটে পানি জমে গিয়েছিল। চোখ ও মুখে পানি এসেছিল। রক্তের প্লাটিলেটও এবার ৩০ হাজারে কমে এসেছিল।’ আট মাস বয়সেও তাফিফের ডেঙ্গু হয়েছিল উল্লেখ করে সানজিদা বলেন, ‘তখন স্বাভাবিক জ্বরের মতোই ছিল। ভয় পাইনি। কিন্তু এবার ভয় পেয়েছিলাম।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহিনা তাবাসসুম বলেন, ‘ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে ইমিউনিটি বা নিরাপত্তা তৈরি হয়। একধরনের ভাইরাসে মানুষ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয় না। প্রথমবার সংক্রমণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক জ্বরের মতোই হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে জটিলতা বাড়ে।’
ডেঙ্গুর ভাইরাস চার ধরনের: ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩ ও ডেনভি-৪। বাংলাদেশে এই চার ধরনের ভাইরাসই আছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এগুলোর মধ্যে ডেঙ্গুর ডেনভি–৩ ভাইরাসের নতুন করে দেখা দিচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর থেকে ডেনভি–৩ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। গত এক দশকের মধ্যে ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু হয়েছিল ডেনভি–৩ ভাইরাসের পুনরাবির্ভাবের কারণে। গত বছর সরকারি হিসাবে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষের কমপক্ষে চারবার ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। আবার একই সঙ্গে একাধিক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও আছে।
আইইডিসিআরের চারজনসহ পাঁচজন গবেষকের একটি গবেষণা প্রবন্ধ যুক্তরাজ্যের এলসিভিআর প্রকাশনার নিউ মাইক্রোব অ্যান্ড নিউ ইনফেকশন সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চারটির যেকোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে আজীবন নিরাপত্তা পাওয়া যায়, কিন্তু দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে পরিণতি হয় ধ্বংসাত্মক। অ্যান্টিবডি–সংশ্লিষ্ট জটিলতার কারণে এমন হয়।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, জটিল পরিস্থিতি হবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া রোগীদেরই।
ওই গবেষণা প্রবন্ধে বলা হচ্ছে, ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০০২ সাল পর্যন্ত ডেনভি–৩ ভাইরাসের প্রকোপ বেশি ছিল। কিন্তু এর থেকে আর কখনো ডেনভি–৩–এর সংক্রমণ দেখা যায়নি। ২০১৩–১৬ সময়কালে রোগের প্রকোপ অনুসন্ধান ও নজরদারির মাধ্যমে আইইডিসিআর ডেনভি–১ ও ডেনভি–২–এর প্রকোপ দেখতে পায়। প্রতিবেশী দেশে ডেনভি–৩ ও ডেনভি–৪–এর প্রকোপের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নজরে আসে। ২০১৭ সালে ডেনভি–৩–এর পুনরাবির্ভাব প্রথম নজরে আসে। পরের বছর হঠাৎ বেশি মৃত্যুর কারণও একই ধরনের ভাইরাস।
গবেষকেরা ১৫১ রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন। তাতে ডেনভি–২ ভাইরাস পেয়েছিলেন ৪১ শতাংশ নমুনায়। ডেনভি–৩ ভাইরাস পেয়েছিলেন ৩১ শতাংশে। আর ৯ শতাংশ নমুনায় পেয়েছিলেন ডেনভি–১ ভাইরাস। একই সঙ্গে দুই ও তিন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনাও ধরা পড়ে।
এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রবন্ধের শেষে বলা হয়েছে, বিরাট সংখ্যার মৃত্যু এটাই ইঙ্গিত দেয় যে শুরুতেই ডেঙ্গু শনাক্তকরণব্যবস্থা সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জোরদার করতে হবে এবং ডেঙ্গু চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা হালনাগাদ করতে হবে।
আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) উপদেষ্টা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আগে জ্বর হওয়ার পাঁচ–সাত দিন পর ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বলা হতো। এখন শুরুতেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন এসেছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নির্দেশিকাও হালনাগাদ করা হয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো