নিউজ বাংলা ডেস্ক :

অভাবের তাড়নায় তিন শিশু সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে দুই পরিবার। প্রিয় সন্তান অন্যকে দিয়ে দেয়ার ঘটনায় গাইবান্ধাজুড়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য । ঘটনাটি সুন্দরগঞ্জের রাজবাড়ি ও উত্তর ধর্মপুর এই দুই গ্রামের। রাজিবাড়ি গ্রামের দরিদ্র-অসহায় ভূমিহীন হাবিল মিয়া এক কন্যা সন্তান ও ধর্মপুর গ্রামের অসহায় ভাঙারি ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম দুই কন্যা সন্তান তুলে দেন তিনটি নিঃসন্তান পরিবারের কাছে।
দুই কন্যা সন্তানকে অন্যর হাতে তুলে দেয়ার ঘটনাটি তিন বছর আগের এবং এক কন্যা সন্তানকে তুলে দেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে বছর দেড়েক আগের। তবে এই ঘটনা প্রতিবেশি ও স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি ছিল প্রথম থেকেই। কিন্তু বর্তমানে ঘটনার গুঞ্জরণ এখন সকলের কানেমুখে।
শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দায় পাটোয়ারী। এর আগে শুক্রবার দুপুরে তিনি পরিবার দুটির খোঁজখবর নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ছোলাইমান আলী। এসময় পরিবার দুটির পাশে থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ি গ্রামের হাবিল মিয়া। পেশায় একজন শ্রমিক। স্ত্রী ও সাত মেয়ে সন্তান নিয়ে সংসার হাবিলের। দীর্ঘদিন ধরে হাবিল যক্ষা রোগসহ শারীরিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। শারীরিক অসুস্থ্যতায় কাজকর্ম করতে না পারায় দু’বেলা দুমুঠো খাবার যোগানে তার কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। এক মেয়ে প্রতিবন্ধি, দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। এক মেয়ে কাজ করেন গৃহকর্মীর। সবার ছোট ৫ মাস বয়সের মেয়েকে তুলে দিয়েছেন যশোরের এক নিঃসন্তান দম্পত্তির কাছে।
অপর অসহায় পিতা আশরাফুল একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী। জমজ চার মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার তার। ভ্যান চালিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভাঙারি ব্যবসা করে যা পান তা দিয়ে কোন রকমে চলে আশরাফুলের সংসার। জমজ চার মেয়েকে মানুষ করা তার পক্ষে দুসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। বাধ্য হয়ে তিন বছর আগে এক মেয়ে ও দুই বছর আগে আরেক মেয়েকে স্থানীয় ব্যক্তির মাধ্যমে তুলে দেন দুই নিঃসন্তান দম্পত্তির পরিবারের হাতে।
হাবিল মিয়া বলেন, অনেক কষ্টে নিজের ছোট মেয়েকে মানুষ করতে ভাতিজার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ার নিঃসন্তান দম্পতির কাছে তুলে দিয়েছি। সন্তানকে নিয়ে ওই পরিবার তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা দিয়ে দুই শতক জমি কিনে একটি ছোট টিনের ঘর তুলেছেন। বর্তমানে স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করছেন’।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অভাবের কারণে তাদের আমি পালতে পারিনি। বাধ্য হয়ে দুটি মেয়ে সন্তানকে দুটি পরিবারকে দিয়েছি।’ তবে মেয়ে সন্তান দুটি পেয়ে খুশি হয়ে ওই নিঃসন্তান দম্পতি তাকে সামান্য কিছু টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে তার। তবে ভাঙারি ব্যবসা করতে না পরায় বর্তমানে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে তার’।
সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুর রহমান জানান, অভাবের কারণে যশোর এবং ঢাকার তিনটি নিঃসন্তান পরিবারের কাছে সন্তান তুলে দিয়েছে পরিবার দুটি। সেখানে তারা ভালো আছে। সন্তানদের ছাড়াও নিঃসন্তান দম্পতি পরিবারের সঙ্গে হাবিল ও আশরাফুলের যোগাযোগ আছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দায় পাটোয়ারী বলেন, ‘অত্যন্ত গরীব পরিবার হাবিল ও আশরাফুলের। অভাবের কারণে নিজের সন্তানদের দিয়েছেন অন্যের হাতে। বর্তমানে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছি। পরিবার দুটিকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এছাড়া পরিবার দুটিকে সরকারী সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করা হবে’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here