নিউজবাংলা :

যুবলীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাসিনো সম্রাজ্যে অভিযানের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি বলছেন ৬০টি
ক্যাসিনো আছে, আপনারা ৬০ জনে কি এত দিন আঙুল চুষছিলেন? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো, সেই ৬০ জায়গার থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ থানার যে র‌্যাব ছিল, তাদের অ্যারেস্ট করা হোক।’ আমাকে এ্যারেস্ট করবেন। করেন। আমি রাজনীতি করি। আপনি এরেস্ট করবেন, আমি বসে থাকবো না। আপনাকেও এরেস্ট হতে হবে। কারণ আপনি প্রশ্রয় দিয়েছেন। বুধবার বিকালে মিরপুর দারুস সালামে স্থানীয় যুবলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতা ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। বুধবার বিকাল থেকে যুবলীগ নেতার মালিকানাধীন ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে বিপুল ক্যাসিনো সামগ্রি, মাদক ও নগদ অর্থ উদ্ধার ও দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ওই অভিযান চলাকালেই যুবলীগ চেয়ারম্যান অভিযানের বিষয়ে এমন বক্তব্য দেন। এ দিন রাতে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ক্যাসিনো রাজা বলে খ্যাত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

যুবলীগের ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও রেকর্ডে শোনা যায়, ওমর ফারুক  চৌধুরী বলেন, ‘অপরাধ করলে শাস্তির ব্যবস্থা হবে। প্রশ্ন হলো, এখন কেন অ্যারেস্ট হবে। অতীতে হলো না কেন, আপনি তো সবই জানতেন। আপনি কি জানতেন না? নাকি সহায়তা দিয়েছিলেন। সে প্রশ্নগুলো আমরা এখন তুলব। আমি অপরাধী, আপনি কী করেছিলেন? আপনি কে, আমাকে আঙুল তুলছেন?

তিনি বলেন, আপনি সাংবাদিক বলতে হবে ক্যাসিনোগুলো কোথায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা ঘাস খেয়ে ছিলেন? প্রশ্ন আমার এখানে। যে সংগঠনটি সবচাইতে সংগঠিত, আপনি নিশ্চই রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার সভা দেখেছেন, শৃঙ্খলা কাকে বলে? এই সংগঠনটি দেখিয়েছে। প্রথম থেকে শেষ অব্দি এই সংগঠনটি ছিলো। যেটি আমাদের ঘোষণায় ছিলো শ্রেষ্ঠ সংগঠন।

গোয়েন্দারা যদি এতই তৎপর হয় তাহলে এতদিন কি করেছিলো। পত্রপত্রিকা যদি আপনি এতো তথ্য জানেন , তথ্যগুলো এতদিন তুলে আনেননি কেন? আমি কেনো জানলাম না? আমরা কেনো জানলাম না? ওহ আপনি অতীতে জানতেন? লুকিয়ে রেখেছিলেন? কেনো?  ব্যবস্থা সেদিন থেকেও যদি নিতেন। আমি আমার ব্যর্থতা অস্বীকার করছি  না, নিশ্চয়ই আছে। আমার প্রতিটি কর্মের জন্য হাততালি পাবো, আর আমার দুষ্কর্মের জন্য নিগৃহিত হবো না এটা হয় না। প্রশ্ন আমার এখানে। হঠাৎ করে কেনো জেগে ওঠলেন? কারণটা কি? এটা কি বিরাজনীতিকরণ নীতিতে আসছেন? দলকে পঙ্গু করার কোনো ষড়যন্ত্রে আসছেন? নিস্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্রে আসছেন? প্রমাণ দেখান ত্রুটি আমার আছে, ত্রুটি কি আপনার নাই? আমি সমালোচনা করতে বসিনি। আমি আমার স্বচ্ছতা প্রমাণ  করতে চাচ্ছি। আমার ট্রাইবুনাল আছে, অভিযোগকারীর অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অভিযোগ যদি ফৌজদারী অপরাধ হয়, তাহলে আমরা থানায় চিঠি দিয়ে জানাই। অপরাধ করলে শাস্তি ব্যবস্থা হবে। কিন্তু প্রশ্নটি হচ্ছে কেনো এখন এরেষ্ট হবে? অতীতে হলো না কেনো? সবই জানতেন। আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আপনি কি জানতেন না? না আপনার সহায়তা ছিলো? প্রশ্নগুলো এখন আমরা তুলবো। আমি অপরাধী, আপনি কি করেছিলেন? আপনি কে? আপনি আমাকে আঙ্গুল তুলছেন আপনি কে? আপনি এতদিন তাহলে প্রশ্রয় দিয়েছেন কেন? এটার মধ্যে কি ব্যবস্থাপনা ছিলো সেটা আমাকে জানতে হবে। আমি রাজনীতি করি আমার রাজনীতির সাথে ম্যানেজমেন্ট থাকবে। আমি সঠিক আমি তা বলছি না। আমার ভুলত্রুটি অবশ্যই আছে। ভুলত্রুটি গুলো চিহ্নিত হচ্ছে। আমার জন্য এটা সুখবর। আমার যে শ্রেষ্ঠ সংগঠনটি ছিলো সেটি নিয়েই তো কথা হচ্ছে। হতেই পারে। যে কাজ বেশী করবে তার ভুলও হবে। আপনি আমাকে দেখেন,  সোহরাওয়ার্দী সয়লাব করা কি এটা সম্ভব ছিলো? একমাত্র সংগঠন ছিলো বলে। সংগঠন মানেই তো আন্দোলন, আন্দোল সংগঠন। আন্দোলন মানে কর্মসূচি। আন্দোলন মানে বিরোধীদল গেলে রাজপথে লড়াই করি আমরা, পুলিশের নির্মম প্রহারকে বরণ করি বলেই জনগণ ভাবে ইয়েস আমরাই নেতা।

তিনি বলেন, সরকারি দলে থাকলে কি করতে হয়? আন্দোলন সংগঠন অর্থাৎ কর্মসূচি থাকতে হবে। কর্মসূচিটা কি স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসার কর্মর্সূচি আছে রুটিন আছে। এমপি সাহেবের রুটিন আছে, মন্ত্রী সাহেবের রুটিন আছে। অফিসার্স সাহেবের রুটিন আছে, ব্যবসায়িক সাংবাদিক, সাহিত্যিক। দলের বেলায় নাই কেন? শুধু দিবস পালন? আমরা সেই কর্মসূচিগুলো প্রণয়ন করেছি। এবং দক্ষিন যুবলীগ সবচাইতে সফল সংগঠন।

বিবিসিকে যা বলেছেন ওমর ফারুক চৌধুরী: ওদিকে গতকাল বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওমর ফারুক চৌধুরী র‍্যাবের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ফলে এটিকে তিনি শুভ উদ্যোগ হিসেবে দেখেন। কিন্তু র‍্যাবের অভিযানের বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের যে ভিডিও যা ভাইরাল হয়েছে, সেই বক্তব্য থেকে তিনি এখন সরে আসছেন কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে তখন তিনি বলেছেন, এখনও তার সেই প্রশ্ন রয়েছে যে, এতদিন কেন অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি। ‘একই কথাইতো। আমি অন্যায় করেছি, তাতে এতদিন পর ব্যবস্থা কেন? সেটা যদি অঙ্কুরেই এই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হতো, নিশ্চয়ই আজকে আপনি এসব প্রশ্ন করতেন না।’ যুবলীগ নেতা মি: চৌধুরী এখন নিজের ব্যর্থতার কথাও বলছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা বা জুয়ার সাথে যুবলীগের অনেক নেতা জড়িত বলে যে সব অভিযোগ এসেছে, এসব বিষয় তার জানা ছিল না। এখন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসার পর তিনি বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছেন বলে দাবি করেন। ‘ব্যর্থতা প্রথমে আমার আসবে। আমি অন্যের সমালোচনা কেন করবো? এটি আমার ব্যর্থতা। যেহেতু আমি যুবলীগের চেয়ারম্যান। ফলে বিষয়গুলো কেন আমার অজানা ছিল? আমার নিশ্চয়ই সম্পৃক্ততা ছিল, তা নাহলে এই কাজগুলো হলো ক্যামনে? এখন নিজেকে নিয়ে তিনি এমন প্রশ্ন করেন। ব্যর্থতা বা দায় যদি নিজের ঘাড়ে নেন, তাহলে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি তার পদে বহাল থাকার কথাই তুলে ধরেছেন। ‘ব্যর্থতা মানেই কি পদত্যাগ করা? সমস্যা থাকবেই। এখন ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করার সুযোগ এসেছে।’ ‘আমি এসবের পিছনে আরও কারা জড়িত, তার বিস্তারিত আমি জানার চেষ্টা করবো। এগুলো চিহ্নিত করে আমি কিভাবে সমস্যা সমাধান করবো, সেই উপায় এখন আমি দেখবো।’ অবৈধ ক্যাসিনো চালানো এবং চাঁদাবাজিসহ অনেক অভিযোগের ভারে যুবলীগ যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে বিব্রত করে কিনা- এই প্রশ্ন অবশ্য তিনি মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তবে আমার বা যুবলীগের সৃজনশীল যে কাজগুলো আছে, সেগুলোকেতো আপনারা স্বীকৃতি দেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here