নিউজবাংলা ডেস্ক:

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। মহামারি আকারে দেখা দেয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে টিকা তৈরির জোর চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। সে দৌড়ে রয়েছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডও।

গ্লোব বায়োটেকের তৈরি টিকার প্রাণীদেহে করোনা প্রতিরোধের সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে বায়োআর্কাইভ নামে একটি ফ্রি অনলাইন আর্কাইভে প্রকাশিত নিবন্ধে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বায়োআর্কাইভকে মেডিকেল জার্নাল বলে উল্লেখ করা হলেও এটি আসলে মেডিকেল জার্নাল নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো মেডিকেল জার্নালে কোনো গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ওই সংক্রান্ত নিবন্ধ এই বায়োআর্কাইভে প্রকাশের সুযোগ থাকে। তবে বায়োআর্কাইভে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো অন্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা রিভিউ বা পুনর্বিচার করা থাকে না।

গ্লোবের টিকা নিয়ে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটির তথ্য চূড়ান্ত ধরে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কথাও গুরুত্ব দিয়ে জানানো হয়েছে ওই ওয়েবসাইটেই।

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোবের টিকা নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বায়োআর্কাইভ। এ বিষয়ে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার অ্যান্ড ইনচার্জ ড. আসিফ মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাণী দেহে আমাদের ভ্যাকসিনের করোনা প্রতিরোধের সক্ষমতার প্রমাণ পেয়েছি। সেটাই আমরা প্রকাশ করেছি।’

Corona-BD-1

তিনি আরও বলেন, গ্লোব বায়োটেকের গবেষণার ফাইন্ডিংসগুলো দেখা যাচ্ছে। ওটা আমরা সারা পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ওখানে দেখবেন মন্তব্য করার জায়গা আছে। অবশ্যই আমরা প্রাণিদেহে এর প্রমাণ পেয়েছি। এটা কাজ করছে। কিন্তু আমাদের হিউম্যান ট্রায়ালে যেতে হবে। আরও বিজ্ঞানীরা যারা এ কাজ করছেন, তারা আসলে কী বলেন। এগুলোও আমরা দেখতে চাই।’

গ্লোব বায়োটেক তাদের করোনা টিকার নাম দিয়েছে ব্যানকোভিড (Bancovid)। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যানকোভিডের ব্যানটা (ban) এসেছে ব্যানিশ (banish) থেকে। যা করোনার বিদায় বোঝায়। আবার বাংলাদেশের ভ্যাকসিন, সেজন্য বাংলাদেশের বান (Ban), সেটাও আছে।’

ড. আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এটা বায়োআর্কাইভে প্রকাশ করেছি। এখন যেটা প্রচলন…সবাই একটা প্রতিযোগিতায় থাকে। কে কার আগে কোন কাজটা করে ফেললো। আমরা আমাদের টাইটেলে লিখেছি, ডি৬১৪জি ভেরিয়ান্ট ভ্যাকসিন। এটা কিন্তু আমরাই পৃথিবীতে প্রথম। অন্য যারা করছেন, তাদের চেয়ে আমাদের একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। সেটা হলো ৬১৪ নম্বর অবস্থানে মিউটেশনটা, প্রথমে যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয় তখন কিন্তু যে প্রবণতাটা পৃথিবীব্যাপী ছিল সেটা আস্তে আস্তে এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে পরিবর্তন হয়। পরিবর্তন হয়ে ৬১৪ নম্বর অবস্থানে যে মিউটেশনটা সেই স্ট্রেনথটাই কিন্তু বেশি হয়। দেখা গেল যে, সেটার ইনফেক্টিভিটিও বেশি। বাংলাদেশে বিসিএসআইআর (বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ) ২৪৩টা জিনোম সিকোয়েন্স করেছে, ওদের ওখানে সবগুলোতেই এই মিউটেশনটা পেয়েছে। আমরাই প্রথম কোম্পানি হিসেবে ঘোষণা করলাম যারা মিউটেশনটাকে বিবেচনা করে একটা ভ্যাকসিন তৈরি করেছি। এটা একটা ব্যাপার যেটা আমরাই পৃথিবীতে প্রথম করলাম।’

‘এই জিনিসটা প্রকাশ করার পেছনে একটা উদ্দেশ্য হলো হিউম্যান ট্রায়ালে যাওয়ার আগে কী করলাম সেটার একটা ডেটা সবার সামনে তুলে ধরা। আর আমাদের সংবাদ সম্মেলনে আমাদের ডেটা তুলে ধরেছিলাম, তখন কিন্তু সায়েন্টেফিক কমিউনিটি (বিজ্ঞানীরা) বুঝতে পারেননি যে, আমরা কী করেছি। এখন তারা চাইলে এটা দেখতে পারে। আমরা কী করেছি সেটা কতটুকু সত্যতা আছে, কী করলাম সেটা বোঝার সুযোগ আছে। সেজন্যই আমরা প্রকাশ করেছি। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা আবার এটা সবাইকে ব্যাখ্যা করে বোঝাবো, বলবো। আমরা কী করলাম, কেন করলাম’, যোগ করেন আসিফ মাহমুদ।

corona

তিনি আরও বলেন, গ্লোব বায়োটেকের গবেষণার ফাইন্ডিংসগুলো দেখা যাচ্ছে। ওটা আমরা সারা পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ওখানে দেখবেন মন্তব্য করার জায়গা আছে। অবশ্যই আমরা প্রাণিদেহে এর প্রমাণ পেয়েছি। এটা কাজ করছে। কিন্তু আমাদের হিউম্যান ট্রায়ালে যেতে হবে। আরও বিজ্ঞানীরা যারা এ কাজ করছেন, তারা আসলে কী বলেন। এগুলোও আমরা দেখতে চাই।’

ড. আসিফ মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বায়োআর্কাইভ যে পোর্টাল… এখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না সবাই এখানে আগে প্রকাশ করেছে। তারপরে তারা আস্তে আস্তে তাদের পছন্দ মতো জার্নালে প্রকাশ করে। একটা প্রিলিমিনারি ফাইন্ডিংস প্রকাশ করা হয়েছে। যেটা সায়েন্টিফিক কমিউনিটি কীভাবে কী কমেন্ট করে সেটা দেখার জন্য।’

জুলাই মাসের শুরুর দিকে একটি সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে প্রথম করোনার টিকার কথা জানানো হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনেই আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ভ্যাকসিনটি প্রাথমিক এনিমেল ট্রায়ালে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পেরেছে।

পরে জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে আসিফ বলেছিলেন, প্রিলিমিনারি ট্রায়ালে আমরা পাঁচটা খরগোশ ব্যবহার করেছি। কারণ আমরা তিনটা ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট ট্রায়ালের চেষ্টা করেছি। সেক্ষেত্রে একটা কন্ট্রোল, একটা পসিবল আর তিনটা আমাদের ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন দিয়ে ইমুনাইজেশন (রোগ প্রতিরোধ) করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না যদি পারে, তাহলে আমরা পারব না কেন এমন আশার কথাও শুনিয়েছিলেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here