নিউজবাংলা ডেস্ক:

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি গুচ্ছ না কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা (ক্যাট) পদ্ধতিতে নেয়া হবে সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা ক্যাট প্রবর্তন করতে চাচ্ছেন।

আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চাচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতি। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত কোনটি গ্রহণ করা হবে সেটা নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর কথা বলা হলেও করোনার কারণে পরীক্ষা পেছাতে পারে। সেক্ষেত্রে শীতের শেষে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে পরীক্ষাটি নেয়া হতে পারে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি অপেক্ষা করতে না চায় তাহলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করা হলেও সশরীরে পরীক্ষাটি হবে না। এ সংক্রান্ত আলোচনার লক্ষ্যে আগামী ১৫ অক্টোবর বৈঠক ডেকেছে ইউজিসি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

যদিও বুধবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায়। সমন্বিতভাবে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

তবে তখন যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং সশরীরে পরীক্ষাটি নেয়া যাবে সেটি কেউ নিশ্চিত করতে পারবে না। পরীক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ইতোমধ্যে তিনটি পদ্ধতির প্রস্তাব এসেছে। প্রথমে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির চিন্তা নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে ইউজিসি বৈঠকে বসেছিল গত বছরের শেষদিকে। প্রথম বৈঠকে এ পদ্ধতি বাদ দিয়ে সমন্বিত এবং পরে ক্যাট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও করা হয়। ওই কমিটিই ভর্তিতে ক্যাট পদ্ধতির প্রস্তাব করে।

কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের একটা কমিটি আছে। গত ২৩ মার্চ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে একটি সভা ছিল।

করোনার কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে আসছে শীতকাল। বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনলাইনে সভা করে সব সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।

তবু সরকার যেহেতু এইচএসসির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন আমাদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে। পরিস্থিতি ভালো হলে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে, এর বিকল্প নেই।

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট বাদে দেশের বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। গত বছর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে।

বড় হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় না আসায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। সব ক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একসঙ্গে নিয়ে আসতে না পারায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বা ক্যাটের আয়োজন কিছুটা ধাক্কা খাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা, স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভর্তি পরীক্ষার অধীনে চলে আসবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, অ্যাডমিশন কমিটি, ডিনস কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কোন পদ্ধতিতে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে। শিগগিরই এসব আলোচনা শুরু হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেবে কিনা ও করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দিতে হবে কিনা জানতে চাইলে ভিসি বলেন, এর প্রতিটি বিষয়ই ওইসব কাউন্সিল ও কমিটিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাব। এক্ষেত্রে তিনটি গুচ্ছ হবে। এগুলো হচ্ছে- কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

প্রথম দুটির জন্য দুটি পরীক্ষা হবে। শেষেরটির জন্য বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজে তিনটি পরীক্ষা হবে। তিনি বলেন, আলোচনা অনুযায়ী বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।

তবে বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক স্বার্থ সামনে রেখে বড় পাঁচটিও গুচ্ছবদ্ধ পরীক্ষায় চলে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। ১৫ অক্টোবর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে একটি বৈঠক আছে। সেখানে বিষয়টি আলোচনা হবে বলে আশা রাখছি।

অবশ্য ইতোমধ্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, এ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় না এলেও বাকিদের নিয়ে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গুচ্ছ বলি আর ক্যাট বলি- সমন্বিতভাবে পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি এখন সময়ের দাবি। গোটা ভারতে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সেখানে আমাদেরও পারার কথা।

দেশে বর্তমানে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বুয়েট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা ক্যাটে আসবে না। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর দু’দিন পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিল।

ইউজিসি কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি বছর গড়ে ৯ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। তবে এ বছর সবাইকে পাস করিয়ে দেয়ায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৬৫৭৮৯ জন। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রথম বর্ষে ৬০ হাজারের মতো আসন আছে।

এর বিপরীতে পরীক্ষা দেন ৫-৬ লাখ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা পরীক্ষার আয়োজন করায় এসব শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি পোহায়।

আর্থিক ব্যয় তো আছেই। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেয়ার ঘোষণায় এ বছর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here