হুমায়ুন কবির সোহাগ কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোটচাঁদপুর রোডে অবস্থিত হাসনা ক্লিনিকে ২২ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত এগারোটায় সাথী খাতুন নামের এক গৃহবধূর সিজার অপারেশন করা হয়।অপারেশনটি করেন ডাক্তার প্রফুল্ল কুমার মজুমদার।সিজার অপারেশন করা হলেও সাথী খাতুনের পেটে কোনো বাচ্চা পাওয়া যায়নি।রোগীর শারীরিক অবস্থার কোনো ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ ছাড়াই ক্লিনিক মালিক আব্দুর রহমান টাকার লোভে স্বামী রফিকুল ইসলামকে বাদ দিয়ে পিতা বাবুল খার নিকট থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ করে মোটা অংকের টাকায় চুক্তি করে সাথী খাতুনের সিজার অপারেশন করানোর ব্যবস্থা করেন। সিজার অপারেশন করার পর যখন পেটে বাচ্চা পাওয়া গেল না তখনই বাধল মূল বিপত্তি।পেটে বাচ্চা নেই অথচ সিজার করা হলো! ক্লিনিক মালিক আব্দুর রহমানের এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়।পূর্বেও তার ক্লিনিকে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। এবার তিনি এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্বামী রফিকুল ইসলামকে একদিকে টাকা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন, আবার অন্যদিকে লোক মাধ্যমে মানহানি মামলা করার কথাও বলছেন। আপরদিকে সাথী বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম স্ত্রীর সিজারের পরেও বাচ্চা না পাওয়ার বিষয়ে বিচারের দাবীতে সিভিল সার্জন ঝিনাইদহ বরাবর একটি দরখস্ত প্রদান করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আমার স্ত্রীর হঠাৎ প্রসব বেদনা দেখা দিলে আমরা জরুরী ভিত্তিতে প্রথমে বারোবাজার পরবর্তীতে কালিগঞ্জ হাসনা ক্লিনিকে ভর্তি করি রাত এগারোটায়। এসময় ক্লিনিক মালিক রোগীর পেটে হাত দিয়ে বলেন একনই অপারেশন করা লাগবে।তখনই কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় সিজারের উদ্দেশ্যে। অপারেশন রুমে আমার শ্বশুর-শাশুড়ির দুইজনেই উপস্থিত ছিলেন। অপারেশনের পর ক্লিনিক মালিক আব্দুর রহমান ও ডাক্তার প্রফুল্ল কুমার মজুমদার জানান আমার স্ত্রীর পেটে কোনো বাচ্চা পাওয়া যায় নি।আমার প্রশ্ন হলো আমার স্ত্রীর পেটে যদি বাচ্চা নাই থাকবে তাহলে কেনো সিজার করা হলো? পেটে বাচ্চা নাই সেটা কি অপারেশন করে দেখা লাগে নাকি অপারেশনের আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে? আমার মনেহয় সিজারের পর আমার বাচ্চাকে অর্থের বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সিজারের পর ক্লিনিক মালিক রহমান ব্যাপারটি চেপে যাওয়ার জন্য আমাকে বার বারব অনুরোধ করে। আবার অন্য কেউ জানতে চাইলে আমাকে বলতে বলে, “মরা বাচ্চা হয়েছে”। আর এই ঘটনার সাথে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও ক্লিনিক মালিক আব্দুর রহমান জড়িত।তাই আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।রোগী সাথী খাতুন জানান, প্রচন্ড পেটে ব্যথা নিয়ে হাসনা ক্লিনিকে গেলে আমার পেটে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের আগে কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওই ক্লিনিকে করা হয়নি এবং আমাদের সঙ্গে আগে করা কোনো পরীক্ষার কাগজও ছিল না। ডাক্তার এবং ক্লিনিক মালিক কেউই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র না দেখেই আমার অপারেশন করেছেন। সাথী খাতুনের বাবা মা ঘটনাটি সম্পর্কে এক এক সময় একেক ধরনের কথা বলছেন। অপারেশন করা ডাক্তার প্রফুল্ল কুমার মজুমদারের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকটির এনেসথেসিয়া ডাক্তার তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বামী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন,ডাক্তার তানভীর একজন ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটধারী এনেসথেসিয়া ডাক্তার। তিনি কিভাবে সার্জারির মত এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেন? ক্লিনিক মালিক আব্দুর রহমান জানান, নিয়ম মেনে অপারেশন করা হয়েছে। রোগীর লোক মিথ্যা অভিযোগ করছে। বর্তমানে রোগী সুস্থ আছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন জানান,হাসনা ক্লিনিকে ডাক্তার পাঠিয়ে সরোজমিনে ঘটনার তদন্ত করিয়েছি।তদন্তের রিপোর্ট সিএস অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি।অনিয়মের ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিস যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম জানান, কালীগঞ্জে বাচ্চা চুরির ঘটনার একটি দরখাস্ত আমি পেয়েছি। ব্যাপারটি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমি কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছি।সেখান থেকে আসা ঘটনার রিপোর্ট দেখে তদন্ত কমিটি গঠন করব।ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূর্বেও এই ক্লিনিকটি সম্পর্কে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাপারটি আমি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। হাসনা ক্লিনিকে ঘটা এই ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কালীগঞ্জে এই ক্লিনিকটি প্রায় প্রায়ই নানা ঘটনার জন্ম দেয়। সাধারণ গরীব রোগীদেরকে জিম্মি করে ক্লিনিক মালিক আব্দুর রহমান নিম্নমানের সেবা দিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। সেবার ব্রত নিয়ে কাজ না করে কালীগঞ্জের হাসনা ক্লিনিকের এরূপ কাজের কঠোর বিচার আশা করেন স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশী কালীগঞ্জের জনগণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here