হুমায়ুন কবির সোহাগ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :

ভোর রাতের কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছীরা খেজুরগাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে।আর সে সময় গ্রামবাংলার গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। মধুবৃক্ষ থেকে গাছিরা সংগ্রহ করবে সুমিষ্টি খেজুরের রস। সেই খেজুরের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে তৈরি হবে লোভনীয় গুড় ও পাটালি। রস জ্বালিয়ে ভেজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে প্রতিটি গ্রামীণ জনপদে। সৃষ্টি হবে গ্রামবাংলায় এক নতুন আমেজের।খেজুর রস হলো খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহকৃত রস। সাধারণত মাটির হাড়ি দিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। তবে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে মাটির বদলে প্লাস্টিক ভাড় দিয়েও সংগ্রহ করা হয়। খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি, পায়েস এবং খেজুরের রস থেকে উৎপন্ন গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা এবং গাঢ় রস দিয়ে তৈরি করা হয় মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলি।খেজুরের রস পান করলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়। এতে উচ্চ প্রাকৃতিক চিনি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে খেজুরের রস পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়তে হয়। এক সময় কালীগঞ্জ উপজেলা খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ ছিল। দেশের বাইরেও এর বেশ কদর রয়েছে। অতীতে এখানকার খেজুর রসের যে যশ ছিল, বর্তমানে সে যশ দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমানে আগের মতো রস গুড় উৎপাদন হয় না। ইতোমধ্যে শহরের লোকজন গ্রামের খেজুর গাছ কাটা গাছীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। আবার অনেকে গাছীদের আগাম টাকা দিচ্ছেন ভালো গুড় ও পাটালি পাবার আশায়। আগাম টাকা পেয়ে অনেক গাছী রস সংগ্রহের উপকরণ তৈরি করছেন।আবার অনেক অনলাইন অর্গানিক ফুড ব্যবসায়ীরা সরাসরি গ্রামের গাছীদের সাথে যোগাযোগ করছেন নির্ভেজাল রস ও গুড়ের জন্য। গাছীদের নিকট থেকে সংগৃহীত এইসব রস ও গুড় অনলাইনের মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here