হুমায়ুন কবির সোহাগ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :

পিছিয়ে থাকার সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তাইতো চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ব্যাবসা, আর এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তবে তার এই সফলতার পেছনে রয়েছে শ্রম ও আনন্দ সুখের অনেক কাব্য। বলছি “বোনজা ডোর & ডোর ফ্রেম” এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তিতুমীরের কথা। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা তিনি।

তরুণ এই উদ্যোক্তা ২০১৬ সালে আশা ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং বিষয়ে এম বি এ সম্পন্ন করে সিটি ব্যাংকের মার্কেটিং বিভাগে কাজ শুরু করেন। ছয় মাস পর এই চাকরিটি ছেড়ে যোগদান করেন “উড ওয়াল্ড” নামের আরএকটি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করে নিজ কর্মদক্ষতা গুণে পর্যায়ক্রমে ৩ বছরের মাথায় বিপণন বিভাগের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। মূলত এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাকালীন সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অনুরূপ একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার। সে কারণেই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “বোনজা ডোর & ডর ফ্রেম “নামে একটি পেজ চালু করেন। পেজে ডোর এবং ডোর ফ্রেমের ছবি আপলোড দিয়ে কাস্টমারের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করেন।

অনলাইন ব্যবসায় এই প্রক্রিয়াটিতে তিনি ভালো সাড়া লক্ষ করাই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে ঢাকায় কারখানা করার জন্য সুবিধামতো জায়গা না পেয়ে কালীগঞ্জে ফিরে আসেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে কালীগঞ্জ পশু হাসপাতাল পাড়ায় বিশ শতক জায়গা এক লক্ষ টাকা অগ্রিম এবং মাসিক চার হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্যাক্টরি কাজ আরম্ভ করেন। প্রথমে তিনি তার কারখানার মেশিন এবং কাঠ সিজনিং এর চেম্বার বাবদ ১৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ছয় জন কারিগর দিয়ে তিনি দরজার চৌকাঠ ও পাল্লা তৈরির কাজ শুরু করেন।নিজ কারখানায় উৎপাদিত চৌকাঠ ও পাল্লা প্রথমে তিনি পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা গুলোতে বিক্রয় করেন। তিনি মেহগনি, চিটাগাং সেগুন, কাঁঠাল দেশি নিম ও শীল কড়াই গাছের কাঠ দিয়ে চৌকাঠ ও ফ্রেম তৈরি করেন। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী মেশিন এবং কারিগরের নিজস্ব ডিজাইন দিয়ে দরজার পাল্লা তৈরি করেন। তার কারখানায় সলিড ও প্যানেল নামক দুই ধরনের দরজা তৈরি হয়। বিক্রয় বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি ঢাকা, টঙ্গী রাজশাহী, সুনামগঞ্জ ও রংপুরে ডিলার নিয়োগ করেন। বর্তমানে তার কারখানাই চৌকাঠ ও পাল্লা তৈরির পাশাপাশি নানা ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করে বিক্রয় করা হয়। নিজস্ব দুইটি স’মিলের মাধ্যমে সকল কাঠ ফাড়াই করা হয়। তিতুমীর বলেন,কারখানা শুরুর প্রথম দিকে মহামারী করোনা এবং বাবার স্ট্রোক জনিত কারণে আমি সাময়িক মনোবল হারালেও আমার সহধর্মিনী ও কাছের কিছু বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় আবার নতুন করে শুরু করার সাহস পাই। আমার সহধর্মিনী এম এস সুলতানা লিন্ডা প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে “বোনজা ডোর & ডোর ফ্রেম”এর দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে আমার কারখানাটিতে ১৭ জন কারিগর কাজ করছেন। কারখানায় উৎপাদিত সকল প্রোডাক্ট এর বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। প্রতিমাসে সকল খরচ বাদ দিয়ে আমার এক লাখ টাকার অধিক আয় হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে। ভবিষ্যতে কারখানাটি আরো বড় করে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম পরিচালিত করতে চাই। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে ” বোনজা ডোর & ডোর ফ্রেম ” এর শোরুম প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here