নিউজবাংলা ডেস্ক:

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ঢাকায় সকাল-বিকেলের সফরে এসে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বৈঠক করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা শনিবার প্রথম আলোকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বছরের নভেম্বরের শেষে এক দিনের সফরে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় আসার কথা ছিল। সফরের একেবারে আগমুহূর্তে তা স্থগিত হয়ে যায়।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি

কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন অনেক দেশ আবার টালমাটাল, তখন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি ঢাকায় আসার দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্রুত ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের নানা প্রস্তুতি চলছে, যার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বাংলাদেশও। আবার চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। সর্বশেষ টিকা নিয়ে সংকটের প্রেক্ষাপটে চীনের কাছ থেকে টিকা পেতে আলোচনা চলছে।

নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা এবং টিকা কূটনীতির এ পর্বে জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহির বাংলাদেশ সফরটা তাৎপর্যপূর্ণ। সংগত কারণেই এ বিষয়গুলো তাঁর এ সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
১৯৭৭ সাল থেকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপকতর প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য কেনা সমরাস্ত্রের বড় উৎস চীন। আর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম সাবমেরিনও কেনা হয়েছে চীন থেকে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ছাড়াও বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জন্য বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীও চীন থেকে কেনা হয়েছে।

এ অঞ্চলে ভূরাজনীতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এ সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রেক্ষাপট বিবেচনাতেও তা গুরুত্বপূর্ণ। করোনা পরিস্থিতিতে জীবন-মরণ প্রশ্নে টিকা পাওয়ার জন্য আলোচনা শুরুর পর চীনের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের সফর হিসেবে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, এ অঞ্চলে ভূরাজনীতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এ সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রেক্ষাপট বিবেচনাতেও তা গুরুত্বপূর্ণ। করোনা পরিস্থিতিতে জীবন-মরণ প্রশ্নে টিকা পাওয়ার জন্য আলোচনা শুরুর পর চীনের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের সফর হিসেবে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

এ বিষয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ সফর অনেকটাই রুটিনমাফিক। অনেক দিন ধরে এটা আটকে ছিল। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরের সময় কোভিডের টিকা নিয়ে সহযোগিতার বার্তা থাকতে পারে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এমনিতেই যথেষ্ট নিবিড়। তবে এ সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। তবে ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) এবং অঞ্চল ও পথের উদ্যোগের (বিআরআই) একটার চাপে যাতে আরেকটা চাপা না পড়ে, সে বিষয়টি চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনায় তুলতে পারেন।

সূত্র: প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here