নিউজ বাংলা ডেস্ক :

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান কি দুদকের চেয়ে বড়? তাঁকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। তাঁকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না? এ মামলায় তাঁকে কেন আপনি (দুদক) অ্যারেস্ট করছেন না?’

রোববার জনতা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের জামিন বাতিলের শুনানিকালে দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে এমন প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘আপনাদের (দুদক) একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এটা তো অ্যালার্মিং দেশের জন্য।’

জবাবে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে পিউনেটিভ (শাস্তিমূলক) অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কিসের পিউনেটিভ অ্যাকশন নিয়েছেন? আপনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর তথ্য পাচারের জন্য অ্যাকশন নিয়েছেন, ঘুষের কোনো অ্যালিগেশন আপনি নেননি, অ্যাকশন নেননি। কোনো কিছু করেননি।’

জবাবে খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘ঘুষের জন্য নিতে হলে আমাকে (দুদক) একটু অনুসন্ধান করতে হবে। অনুসন্ধান করে (দুদক) আমাকে এফআইআর দায়ের করতে হবে। আইনের বাইরে তো আমি কোনো কিছু করতে পারব না।’

এরপর আদালত বলেন, ‘ডিআইজি মিজান কি দুদকের চেয়ে বড়? তাঁকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। হ্যাঁ, তাঁকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না? এই মামলায় তাঁকে কেন আপনি (দুদক) অ্যারেস্ট করছেন না?’

জবাবে খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘আমার যে লোক (দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির) আমি তাঁকে সাসপেন্ড করেছি। আর যে মামলায় তাঁর (ডিআইজি মিজানুর রহমান) অ্যারেস্ট হওয়ার কথা, সে মামলায় অলরেডি চার্জশিট মেমো অব এভিডেন্স দেওয়া হয়েছে। এবং যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা, তাঁকে নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দুদক একটা অ্যাকশন নিয়েছে। এই তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। নতুন একজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি নতুন করে কাজ শুরু করেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত আইনানুগভাবে গুরুত্বসহকারে দুদক দেখছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।’

শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলমার্কের চেয়ারপারসন জেসমিন ইসলামকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল কিরেছিলাম। আমরা মানে দুর্নীতি দমন কমিশন। আজকে শুনানির সময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টর রায় বাতিল করে দিলেন। জামিন বাতিল করে তাঁকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে সারেন্ডার করার জন্য নির্দেশ দিলেন। এ মামলার শুনানিকালে আদালত আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল।’

গত ১০ জুন এ-সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, কমিশনের তথ্য পাচার ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে সংস্থাটি।

তদন্ত চলাকালে তদন্তাধীন তথ্য অভিযুক্ত ব্যক্তির (ডিআইজি মিজানুর রহমান) কাছে পাচার ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বরখাস্ত হওয়া খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে দায়মুক্তি দিতে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান।

গত ছয় মাস এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে যায়। রেকর্ড অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমে ২৫ লাখ ও পরে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মিজানুর। কিন্তু গত ২ জুন খন্দকার এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানুরকে জানান, তিনি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারের চাপে তাঁকে অব্যাহতি দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিজানুর টাকাপয়সা লেনদেনের সব কথা ফাঁস করে দেন। প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন এনামুল বাছিরের সঙ্গে কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড। এ বিষয়ে  সংবাদ প্রচার হওয়ার পর তাৎক্ষণিক দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় দুদকের কমিশনারের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা ও তাঁকে দুদক পরিচালকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

দুদক পরিচালক এনামুল বাছির তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মিজানুরকে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। মিজানুরের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা দুদকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তদন্ত শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দুদক পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার এই অভিযোগ পাওয়া যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here