নিউজবাংলা ডেস্ক:

জন্মদিনে শুটিং করেন না অভিনেতা জাহিদ হাসান। দিনটি পরিবারের জন্য। তবে আজ তিনি শুটিংয়ে। বাংলাদেশ টেলিভিশন তাঁর ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি পেয়েছেন পরিচিতি ও খ্যাতি। প্রথমবারের মতো সেই চ্যানেলের একটি ধারাবাহিক নাটকের পরিচালক হয়েছেন তিনি। বাড়িতে থাকলে তাঁর চলবে কেন!

রাত ১২টায় জন্মদিনের প্রথম প্রহরে পরিবারের সঙ্গে কেক কেটেছেন জাহিদ হাসান। তাঁকে প্রথম শুভেচ্ছা জানিয়েছে মেয়ে পুষ্পিতা হাসান এবং ছেলে পূর্ণ হাসান। বাবার জন্য কেক বানিয়েছে পুষ্পিতা নিজেই। তবে বাবার সঙ্গে দিনটা কাটাতে না পেরে পুষ্পিতার যেমন মন খারাপ, তেমনি মন খারাপ বাবা জাহিদ হাসানেরও।

জাহিদ হাসানকে প্রথম শুভেচ্ছা জানিয়েছে মেয়ে পুষ্পিতা হাসান এবং ছেলে পূর্ণ হাসান। বাবার জন্য কেক বানিয়েছে পুষ্পিতা নিজেই

তিনি বলেন, ‘বিটিভি দিয়েই আমার পথচলা শুরু। এই চ্যানেলের কাছে আমার অনেক ঋণ। শুটিংটা জন্মদিনে পড়ে যাওয়ায় তাই বাতিল করতে চাইনি। ভালোবাসার জায়গা থেকেই শুটিংয়ে এসেছি। শুটিং ইউনিটের সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। কাজের মধ্য দিয়েই এবারের জন্মদিনটি কেটে যাচ্ছে।’

“এমনও দিন গেছে, শুধু রিহার্সাল আর রিহার্সাল করে গেছি। সারা দিন খাওয়াও হয়নি। পরের দিন শো। বাসায় ফিরতে রাত ১১টা, কখনো ১২টা বেজে যেত। মা–বাবা দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, বন্ধুর বোনের বিয়ে ছিল, খেতে গিয়েছিলাম। সারা দিন অভুক্ত, সারা রাত অভুক্ত থাকার অবস্থা হতো।”জাহিদ হাসান

জাহিদ হাসান ১৯৬৭ সালে সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে নাটক এবং যাত্রা উপভোগ করেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াকালীন কিশোর জাহিদ হাসানের মাথায় ঢোকে মঞ্চনাটকের ভূত। তখন থেকেই মঞ্চনাটকের মানুষদের সঙ্গে শুরু হয় তাঁর মেলামেশা। মা–বাবা সেসব জানতেও পারেনি।

পরিবার চাইত বড় হয়ে জাহিদ ডাক্তার হবে। অথচ জাহিদ লুকিয়ে থিয়েটারকর্মী হওয়া শুরু করলেন। ঢাকা থেকে অভিনয় শেখাতে সিরাজগঞ্জের ‘তরুণ সম্প্রদায়’–এ যেতেন নাটকের মানুষেরা। তাঁদের কাছ থেকেই শুনেছিলেন, যারা থিয়েটারকে ভালোবাসবে, মঞ্চ ঝাড়ু দেবে, লেগে থাকবে—তারাই বেশি ভালো করবে।

জাহিদ হাসানের ভাষায়, ‘সেসব শুনে আমি থিয়েটারে আসতাম, পুরো হলরুম নিজ হাতে মুছতাম। অভিনয়টা তখন থেকেই ভালো লাগত। শত বাধা সত্ত্বেও লেগে থাকতে চাইতাম। এমনও দিন গেছে, শুধু রিহার্সাল আর রিহার্সাল করে গেছি। সারা দিন খাওয়াও হয়নি। পরের দিন শো। বাসায় ফিরতে রাত ১১টা, কখনো ১২টা বেজে যেত। মা–বাবা দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, বন্ধুর বোনের বিয়ে ছিল, খেতে গিয়েছিলাম। সারা দিন অভুক্ত, সারা রাত অভুক্ত থাকার অবস্থা হতো। শুধু পানি বা মুড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। তবু বাড়িতে বলতাম পারতাম না যে থিয়েটার করছি।’

উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে অভিনয়ের জন্য ঢাকায় আসেন জাহিদ হাসান। এবারে ঢাকার মঞ্চে ‘লেগে থাকা’র পালা। সিরাজগঞ্জ গিয়ে যাঁরা থিয়েটারের দীক্ষা দিতেন, সে রকম কয়েকজন মানুষকে খুঁজে বের করতে চাইলেন তিনি। একটা ভয়াবহ ধাক্কা খেলেন। চেনা সেই মানুষগুলোর কোনো সহযোগিতা পেলেন না।

তখনকার স্মৃতিচারণা করে এ অভিনেতা বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে যাঁরা অভিনয় শেখাতে যেতেন, ঢাকা এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করি। থিয়েটারে যোগ দেওয়ার ইচ্ছের কথা জানাই। তাঁরা বললেন, “আমরা জুনিয়র ছেলেদের নিই না।” মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। ধীরে ধীরে আবারও কাজ শুরু করি। একটাই চিন্তা ছিল, ভালো করতে হবে। একসময় ভালো করতে থাকলাম। তখন তারাই আবার এসে বলা শুরু করল, “জাহিদের সঙ্গে তো আমার সিরাজগঞ্জ শহরে পরিচয়।” আমাকে নিয়ে তাঁদের কথাবার্তা বদলে গেল। আমি তখন ছোট ছিলাম। তাঁদের এসব আচরণ আমার ছোট্ট মনে বড় পীড়া দিত।’

রিশ্রম ও সাধনার পথে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি জাহিদ হাসানের কাছে। তিনি যোগ দেন নাট্যকেন্দ্রে। শিখতে থাকেন। সে সময় বিটিভিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে। এ অভিনেতা বলেন, ‘আমাকে যারা মূল্যায়ন করত না, বিটিভিতে সুযোগ পাওয়ার তারা মূল্যায়ন করতে শুরু করে।’ নাট্যকেন্দ্রের নাটক ‘বিচ্ছু’তে অভিনয় করে ভীষণ পরিচিতি পেলেন জাহিদ হাসান। এই নাটক বিটিভিতে প্রচার হলে তাঁর কাজের প্রস্তাব বাড়তে থাকে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। পরিবার ও বন্ধুদের কাছে পুলক নামে পরিচিত জাহিদ হাসান এখনো দেশের মানুষের ভীষণ প্রিয় অভিনেতা।

জাহিদ হাসানের নির্দেশিত বিটিভির ধারাবাহিক নাটকটির নাম ‘পিছুটান’। নভেম্বর মাস থেকে সেটি দেখাবে বাংলাদেশ টেলিভিশন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here