ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশের চার কোটি মানুষের কর দেওয়া উচিত। বর্তমানে দিচ্ছে ত্রিশ লাখের মতো।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা-২০১৮ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররাফ হোসেন ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররাফ হোসেন ভূইয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মেলার বন্ধন অনেক নিবিড়। কর জিডিপি রেসিও এখন আছে ১০ ভাগ, এটাকে আগামী কয়েক বছরে ১৫ ভাগে নিয়ে যেতে হবে।’

করদাতারা এই মেলা থেকে কর সনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে পারবেন, সহজেই জমা দিতে পারবেন রিটার্ন। এছাড়া ই- পেমেন্ট’র মাধ্যমে থাকছে আয়কর পরিশোধের সুযোগও।

আয়কর জমা দিতে মেলায় রয়েছে সোনালী ও জনতা ব্যাংকের আলাদা বুথ। মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্যেও রয়েছে আলাদা বুথের ব্যবস্থা।

গত ৮ বছরে আয়কর মেলা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ, বেড়েছে জনপ্রিয়তা। মেলায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। ২০১০ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে আয়কর মেলায় সেবাগ্রহীতা ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ গুণ। একই সময়কাল ব্যবধানে মেলা থেকে নিবন্ধন নেয়া নতুন করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ ও রিটার্ন জমা দেয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৬ গুণ। জনপ্রিয়তা ও রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে এবারের মেলাও পূর্বাপরের ধারাবহিকতা বজায় রাখবে বলেই প্রত্যাশা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)।

‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ স্লোগানে সারাদেশে উৎসব মুখর পরিবেশে শুরু হওয়া নবম আয়কর মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’। কেন্দ্রীয়ভাবে এবার মেলা বসেছে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে। গত দুই বছর ধরে আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা ফিরে এসেছে পুরোনো প্রাঙ্গণে। মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় যানজট এড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মেলা চলবে। ১৩ নভেম্বর শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ নভেম্বর।

নতুন করদাতাকে উদ্বুদ্ধ করাই এবারের মেলার প্রধান লক্ষ্য। তবে, রাজস্ব আদায়ে এবার কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এবারের মেলায় নতুন সংযোজন হিসেবে আছে ‘ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে’ কর প্রশিক্ষণ। নতুন করদাতারা এর মাধ্যমে কর নিবন্ধন নেয়া থেকে শুরু করে রিটার্ন দাখিলের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

এনবিআরের তথ্যমতে, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে সাত দিন, জেলা শহরে ৪ দিন, ৩২ উপজেলায় ২ দিনব্যাপী আয়কর মেলা এবং ৭০ টি উপজেলায় ১ দিন ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুন ও আলোকসজ্জায় সেজেছে মেলাগুলো। এছাড়াও, আয়কর মেলা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে কর বিষয়ক এসএমএসও পাঠানো হয়েছে। টিভি ও টকশোতেও থাকবে মেলা সম্পর্কে আলোচনা।

মেলায় করদাতারা সহজেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। ঢাকায় প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য আলাদা বুথ থাকছে। নেয়া যাবে নতুন কর সনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ‘ই- পেমেন্ট’ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পরিশোধ করা যাবে আয়কর।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন শুল্ক, ভ্যাট, সঞ্চয় অধিদফতর, বিসিএস (কর), একাডেমী, কাস্টমস একাডেমী এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পৃথক পৃথক বুথ থাকবে। এসব বুথ থেকে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবে।

করদাতাদের মেলা প্রাঙ্গণে আয়কর রিটার্ন, ই-টিআইএন আবেদন ফরম এবং চালান ফরম সরবরাহ করা হবে। করদাতাদের সুবিধার্থে মেলায় হেল্প ডেস্ক, তথ্য কেন্দ্র ও আয়কর অধিক্ষেত্র সংক্রান্ত বুথ থাকবে। এসব বুথের মাধ্যমে করদাতাগণকে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, চালান ও পে-অর্ডার প্রস্তুতসহ আয়কর আইন বিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হবে। করদাতাদের সুবিধার্থে মেলায় থাকছে ফটোকপির ব্যবস্থাও।

দেশে প্রথমবারের মতো আয়কর মেলা শুরু হয় ২০১০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছরই বেড়েছে মেলার পরিধি। ২০১০ সালে মাত্র ২ টি স্পটে আয়কর মেলা শুরু হলেও সর্বশেষ ২০১৭ সালে ১৬৭ টি স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিধি বাড়ায় একই সঙ্গে মেলা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ। গত কয়েক বছর ধরে তরুণ করদাতারদের লাইনে দাঁড়িয়ে আয়কর জমা দিতে দেখা গেছে। এতে বেড়েছে আয়কর মেলার জনপ্রিয়তা। এনবিআরের তথ্যও সেই কথা বলছে। শুরুর প্রথম বছর ২০১০ সালে মেলা থেকে সেবা নিয়েছিলেন ৬০ হাজার ৫১২ জন। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬৯ জন।

২০১০ সালের মেলায় নতুন কর নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬৩৮। ২০১৭ সালের মেলায় তা (ই-টিআইএন) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ২৫৪। ৮ বছরে মেলা থেকে নতুন নিবন্ধন নেয়া করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ। ২০১০ সালের মেলায় রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন ৫২ হাজার ৫৪৪ জন। সর্বশেষ মেলায় জমা দেয়া রিটার্নের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৭ টি। । বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here