হুমায়ুন কবির সোহাগ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ” নামের সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি।বর্তমানে চিকিৎসক সংকটে ভুগছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল হলেও সেখানে শূন্য রয়েছে চিকিৎসকের অধিকাংশ পদ। পদগুলো শূন্য থাকায় রোগীরা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। অনেক রোগী বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়ে ঢাকা, যশোর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন ডাক্তারে পদ থাকলেও ডাক্তার রয়েছে মাত্র আট জন। মোট ডাক্তার পদের এগার জন কনসালট্যান্ট ডাক্তারের পোস্ট থাকলেও সেখানে রয়েছে মাত্র তিন জন কনসালট্যান্ট ডাক্তার। আর মেডিকেল অফিসার হিসেবে দশ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৫ জন।নার্স প্রয়োজন ৩০জন সেখানে রয়েছে ২৬জন। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ।এ উপজেলার মানুষকে উন্নত স্বাস্থ সেবা প্রদানের লক্ষে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল চালু রয়েছে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কালীগঞ্জের মানুষ। হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও সেই তুলনায় জনবল নেই। আবার সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শিরীন শারমিন লুবনার সময়কালে হাসপাতালটির ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।বিশেষ করে করোনাকালীন বাজেটের টাকা ভুয়া বিলে (হোটেল)তুলে নেওয়া, উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রর আওতায় থাকা ১১ ইউনিয়নের স্বাস্থ্যসেবার দিকটিকে উপেক্ষা করে ডাক্তার আহসান হাবীব জিকো কে মূল সাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে এসে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া ইত্যাদি ।

পরবর্তীতে গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশিত হলে ডাঃ জিকো নিজ কর্মস্থলে যোগদান করতে বাধ্য হন।তিনি চলে যাওয়ার পর ঐ পদে সাবেক টি এইচ ও নিয়ে আসেন তার আরেক আস্থাশীল ডা: মাজহারুল ইসলামকে।পদ আবাসিক মেডিকেল অফিসার অথচ ডাঃ মাজহারুল ইসলাম হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় না থেকে থাকেন জেলা শহর ঝিনাইদহে। ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইছাহাক আলী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান। তার মেয়ে জেসমিন খাতুন জানান, কালীগঞ্জ হাসপাতালে এসে আমার বাবার যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। ডাক্তাররাও সেভাবে সহযোগিতা করেন নি। এসময় আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। আবার হাসপাতালটির প্রধান ফটক পার হয়ে প্রশাসনিক ও জরুরি বিভাগের ভবনের মাঝামাঝি মাটিতে অরক্ষিত অবস্থায় দীর্ঘদিন এক্সরে মেশিন পড়ে থাকতে দেখা যায়। মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য সরকার যে মেশিন হাসপাতালে প্রদান করেছে তার অবস্থা এমন কেনো হবে????? এটা কি দেখার কেউ নাই????? করোনাকালীন সময়ও চিকিৎসা সেবা প্রদানেও অনিয়ম লক্ষ করা যায়।বিশেষ করে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে।সাম্প্রতিক ইপিআই কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের নগ্নদেহে ধূমপানরত অবস্থায় নারীদেরকে টিকা দিতে দেখা যায়, যা গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। প্রতিনিয়ত ঘটা এসব কোন ব্যাপারেই যেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যাথা নাই।এরুপ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কালীগঞ্জ হাসপাতালটি। হাসপাতালটি কালীগঞ্জ উপজেলার মানুষের একমাত্র চিকিৎসার ভরসাস্থল হলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেই না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে শিশু, নারী-পুরুষ মিলে মোট প্রায় এক হাজার জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন ও আন্তঃবিভাগে অনেক রোগী ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকায় দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে এখানকার চিকিৎসা সেবা। এ হাসপাতালে সব সময় ওষুধ সংকট লেগেই থাকে। ২৯ প্রকার ওষুধ থাকার কথা থাকলেও সব ওষুধ থাকে না, যে কারনে রোগীদেরকে কাগজে লিখে দেওয়া হয় বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নেওয়ার জন্য। হাসপাতালের বাথরুমগুলোর অবস্থা বিশেষ করে নারী ও পুরুষ ওয়াডে আরো নাজুক,বিশ্রী গন্ধ, আবার বাথরুমের দরজা ভাংগা,কোনটার আবার সিটকেনী নাই। গন্ধে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে রোগী ও রোগীর সাথে আসা মানুষদের।পারিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকটে হাসপাতালের ভিতর বাহিরে সর্বত্র ময়লায় ভরে থাকে।ভর্তী হওয়া রোগীর সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার তালিকা অনুযায়ী প্রদান না করার অভিযোগ থাকলেও তা যেনো দেখার কেউ নাই।আবাসিক মেডিকেল অফিসার ঝিনাইদহে থাকলে আসলে কে দেখবে এসব????? এ সব ব্যাপারে কালীগঞ্জ হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার অরুন কুমার দাস বলেন, ডাক্তার সংকটসহ যে সব সমস্যা আমাদের হাসপাতালে রয়েছে তা উপরি মহলে জানানো হয়েছে। সমস্যাগুলি দ্রত সমাধান হয়ে যাবে বলে আশাকরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here