নিউজবাংলা ডেস্ক
জাহানারা হক লিলি। ধামরাইয়ের ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান। শিল্প ও সাহিত্যের অনুরাগী এই শিক্ষক নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন শিক্ষকতা পেশায়। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন মূল্যবোধ আর নৈতিক চেতনা। শিক্ষার্থীরা যাতে দেশটাকে ভালো বেসে মানুষের জন্য কাজ করতে পারে। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রিয় জাহানারা ম্যাডাম। নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে তার জীবনের নানা দিক-
শৈশব ও বেড়ে ওঠা
আমার শৈশব ও বেড়ে ওঠা খুব স্বাভাবিক ও সুন্দর পরিবেশেই হয়েছে। আধা শহর আধা গ্রাম এমন একটা পরিবেশে আনন্দঘন শৈশব কেটেছে। দলবেঁধে খেলাধুলা করেছি। স্কুলে গিয়েছি, মেলায় গিয়েছি। জীবনানন্দের ভাষায় বলতে গেলেÑ বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা গৃহিণী। ভাইবোনদের মধ্যে খুনসুটিতো ছিলই। এক ভাই তিন বোনের মধ্যে আমিই ছোটো। একটু আদরের ছিলাম। সব ভাইবোন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে। বাবা-মা তার সাধ্যের সবটুকু আমাদের জন্য দিয়েছেন। বলতে গেলে আমি আমার শৈশব নিয়ে এখনো স্মৃতিকাতর হই।
কেন শিক্ষকতা পেশায়-
ছোটো বেলায় সব বাবা-মায়েরা চান ছেলেমেয়েরা ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। বড় হয়ে বাস্তব যখন সামনে এসে দাঁড়ায় তখন স্বপ্নগুলো পাল্টাতে শুরু করে। স্কুল ও কলেজের আঙিনা পেরিয়ে সাহিত্য নিয়ে যখন পড়া শুরু করলাম। দেখলাম সাহিত্য চর্চার মধ্যেই মানুষের মাঝে সত্যিকার মূল্যবোধ ও জীবনবোধ গড়ে উঠতে পারে। তখন ভাবলাম বাংলার ম্যাডাম হলে মন্দ হয় না। কারণ আমাদের শিক্ষকদের দেখেও অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাছাড়া নারীর জন্য শিক্ষকতা একটা সম্মানজনক ও মহৎ পেশা বলে আমার মনে হয়।
পুরুষতান্ত্রিক বাধা
আমার পথ চলায় পুরুষতন্ত্র তেমন কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু আশপাশের অনেক নারীর ক্ষেত্রে সেটা ঘটতে দেখেছি। যাদের মেধা থাকা সত্তে¡ও তাদের পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়নি। তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকের খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি তারা তাদের জীবনে সম্মানের জায়গা করে নিতে পারেনি। জীবন তাদের নানা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিটাও ঠিক সেইভাবে গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নারীরা ঘটে যাওয়া অন্যায়কে চেয়ে যায়, খুব সহজে মেনে নেয়। নারী অধিকার সচেতন হলে এই বাধা এক সময় কেটে যাবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা
সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশ এখনো নারীর জন্য নিরাপদ নয়। কারণ পুরুষের মানসিকতা নারীর জন্য বৈষম্যমূলক। ‘আমরা’ পুরুষ বা স্বামী এই মানসিকতা থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারেনি। তাদের ধারণা পুরুষ বা স্বামী মানে প্রভু। প্রভুরাতো পাশের মানুষকে পদানত করবেই। নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ তাদের আধিপত্যবাদী মানসিকতা। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যেটা থেকে তারা বের হতে পারছে না। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি দরকার সবার আগে। আর এজন্য শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আর পুরুষের মানসিকতারও পরিবর্তন দরকার।
নারী শিক্ষায় ভ‚মিকা
শিক্ষা ছাড়া একটা জাতির উন্নয়নতো ভাবাই যায় না। নারীর জন্য শিক্ষা বেশি জরুরি। কারণ শিশুর প্রথম শিক্ষক তো একজন মা। নারী শিক্ষায় আমি সরাসরি ভ‚মিকা রেখে যাচ্ছি। প্রতিদিন পাঠদানের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়ে যেমন ধারণা দিচ্ছি তেমনি শিক্ষার্থীদের মানসিক মুক্তির বিষয়ে সচেতন করি। নিজেদের যোগ্য করে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও বলি।
নারীদের জন্য বার্তা
নারীদের জন্য আমার বার্তা বা মেসেজ হলো জেগে ওঠো নারী, চলো আমরা এগিয়ে যাই আলোর পথে। অন্ধকারের মলিনতা দূর করে শক্তি সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সুন্দর ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলি। আর নারীর সামাজিক মর্যাদা, নারীর প্রকৃত মুক্তির জন্য নারীকেই এগিয়ে আসতেই হবে। দেশটাকেও নারীর জন্য বাসযোগ্য করে তুলি। যায়যায়দিনকে ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here