কামাল ইয়াসীন, রাজশাহী

অবশেষে রাজশাহীর কেশরহাট পৌর এলাকার নওগাঁ-গোপইল গ্রামের সংযোগ শিব নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ হলো। নির্মিত এ সাঁকোটিই নদীর উভয় পারের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন। ব্রিজ নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়ে আসলেও নুন্যতম আশ্বাসটুকু মেলেনি।এমন সংকট সময়ে কেশরহাট পৌরসভার নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা আহম্মেদের উদ্যোগে ও নেতৃত্বে স্থানীয়রা  চাঁদা উত্তোলন করে নদীর পূর্ব পার্শ্বের মালিদহ ও গোপইল গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীদের যাতায়াত তথা দুই পারের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বেচ্ছাশ্রমে এই বাঁশের সাঁকো তৈরী করে উভয় পারের মাঝে সেতুবন্ধন নির্মাণ করেন।

নদীর দুই পার্শ্বের স্থানীয়রা  জানান,উভয় পারের যোগাযোগের লক্ষে নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য  স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়ে নিরাশ হয়ে অবশেষে নিজেরাই  ওই বাঁশের সাঁকো নির্মান করেন। নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় বাড়ীর পাশের্ স্কুল রেখে দীর্ঘ দিন যাবত নদী পারের মালিদহ ও গোপইল গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা বাগমারা উপজেলার দূরবর্তীপথ পাড়ি দিয়ে  খালগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করে আসতো।

নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবাঁশের সাঁকো নির্মানে নেতৃত্ব দানকারী মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, মালিদহ ও গোপইল গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা এতদিন যাবত অনেক দুরের দূর্গম পথ অতিক্রম করে খালগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করে আসছিলো। বাঁশের সাঁকোটি নির্মানের ফলে খুব সহজেই নদীর পূর্বপারের শিশুরা পাশের্ই নওগাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পারছে। তবে বর্ষার ভরা মৌসুমে শিশু শিক্ষার্থীদের এই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাতায়াত কতটা নিরাপদ? এছাড়াও নওগাঁ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকটা উন্মুক্ত হয়ে নদীর সাথে একাকার হয়ে মিশে রয়েছে। ওখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য আরো নিরাপদ হতো।

কেশরহাট পৌরসভার নওগাঁ, ধামিন নওগাঁ, মালিদহ এবং গোপইল গ্রামের স্থানীয়রা জানান, মোস্তফা আহম্মেদ জীবন জীবিকার তাগিদে নওগাঁ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে চাকুরী করলেও  মূলত সমাজ সেবায় পার করে দিলেন সারাটি জীবন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। মোস্তফা আহম্মেদ সহ মোট চারজন শিক্ষক ওই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। নিজের স্কুল শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে কখনও চেয়ারে বসতেন না। স্কুলের বেঞ্চে  বসে তার শিক্ষক জীবনের প্রায় ১২ টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন বেঞ্চে বসে কাজ করায় ওই স্কুলের সকল শিক্ষকরা অনেক অনুরোধ করে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারে বসান।

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে কেশরহাট বাজারেপ্রতিষ্ঠিত প্রগতি সংঘের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়েই মোস্তফা আহম্মেদের সমাজসেবা মূলক কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়ে। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও আর্থিক সহায়তায় শুধু নদীর ওপরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ নয়, ধামিন নওগাঁ আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, নওগাঁ দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, ধামিন নওগাঁ ডাকঘর প্রতিষ্ঠাতা, বিভিন্ন মসজিদে পাঠাগার, ধামিন নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎসাহী সদস্য, কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং কমিটির সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে আলোকিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চল। এছাড়াও আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী দুঃস্থ মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পর বেতনের একটা অংশ অসহায় মানুষদের মধ্যে ব্যয় করে থাকেন। মহামারী করোনা দূর্যোগ কালে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এসে স্থানীয় অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করেন।চাকুরী থেকে অবসরে যেতে আর পাঁচ বছর। চাকুরী শেষে কেশরহাট পৌর মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবেন এমন স্বপ্ন দেখেন কেশরহাট পৌরবাসী।যেখানে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সূধীজনরা অহরহ কলোরবে ব্যস্ত, আকন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত দেশবাসী, সেখানে নৈতিক অবক্ষয়ের চরম প্রতিযোগিতার মৌসুমে অন্যের জন্য নিজেকে বিলীন করে দেয়া কম কীসে! এমনি করে কালে কালে, যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে আলোর মশাল হাতে আসে মোস্তফারা, আলোকিত হয় বাংলাদেশ, আলোর ঝলকানিতে ঝলমলে হয়ে উঠে পৃথিবী।

 

 

 

 

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here