নিউজবাংলা ডেস্ক:

গলাকাটা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিলেন দেবর ও ভাবি। রক্তাক্ত  দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে ভাবির মৃত্যু হয়। দেবর এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পশ্চিমপাড়া এলাকায় রোববার এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে।
নিহত ওই গৃহবধূ হলেন লিপি আক্তার (৩৫)। আহত দেবরের নাম রাসেল মিয়া (৩০)। রোববার সকালে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পুলিশ ওই গৃহবধূর লাশ নিজেদের হেফাজতে নেয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত লিপি আক্তার উপজেলা সদরের পশ্চিমপাড়া এলাকায় বিজিবি সদস্য আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। আজিজুল পঞ্চগড়ে বিজিবির সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত। তাঁদের ১২ বছরের এক ছেলে আছে। আর রাসেল একই বাড়ির আলাল উদ্দিনের ছেলে ও লিপির স্বামীর চাচাতো ভাই।
এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, শনিবার রাতের খাবার শেষে লিপি তাঁর ছেলেকে নিয়ে ঘরের একটি কক্ষে ঘুমাতে যান। একই ঘরের অন্য কক্ষে লিপির দেবর সিরাজুল ইসলাম (২৮) তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন । রাত সাড়ে তিনটার দিকে সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রী জেগে উঠে হঠাৎ গোঙানির শব্দ পান। এ সময় আলো জ্বেলে পাশের কক্ষে গিয়ে দেখতে পান, তাঁর ভাবি লিপি আক্তার মেঝেতে পড়ে আছেন। আর চাচাতো ভাই রাসেল মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন । পরে দুজনকে উদ্ধার করে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক লিপিকে মৃত ঘোষণা করেন। আর রাসেলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সকাল ছয়টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাত সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ ঘরে গোঙানির শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখি, ঘরের মেঝেতে লিপি ও রাসেল গলাকাটা অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে বাড়ির লোকজনকে নিয়ে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
খবর পেয়ে পূর্বধলা থানা পুলিশ, ঘটনাস্থালে গিয়ে পুরো বাড়ীটিকে ঘিরে রাখে। এ সময় ঘরের মেঝেতে প্রচুর রক্তের ছোপ দেখা যায়। ঘটনাস্থলে  থেকে পুলিশ আলামত হিসেবে রক্তমাখা একটি এন্টিকাটার (কাগজ কাটার চাকু) উদ্ধার করে।
নিহত লিপি আক্তারের শ্বশুর জালাল উদ্দিনের ভাষ্য, আজিজুল প্রায় ১৫ বছর আগে বিজিবিতে যোগ দেন। এর কিছুদিন পর পূর্বধলার জারিয়া গ্রামে বিয়ে করেন। তাঁদের দাম্পত্যজীবন এত দিন ভালো চললেও তিন-চার বছর ধরে লিপির সঙ্গে রাসেলের পরকীয়ার সম্পর্কের কথা শোনা যাচ্ছিল । এক সপ্তাহ আগে আজিজুল ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে পারিবারিকভাবে বিষয়টি নিয়ে দেনদরবার করেন। তিন দিন আগে তাঁর ছেলে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান। কী কারণে ও কীভাবে এ ঘটনা ঘটল, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
খবর পেয়ে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোরশেদা খাতুন, পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাওহীদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল ময়মনসিংহ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি দল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে , পরকীয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আশা করা যাচ্ছে , অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এ হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।’

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here