আবদুর রহমান মল্লিক
মুসলিম উম্মার সামনে বরকতময় রমজান মাস সমুপস্থিত। এটি সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। আমরা যদি গভীর ভাবে চিন্তা করি তবে দেখব সংযমহীনতাই সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য দায়ী। তাই সিয়াম সাধনা মুসলিমদের জন্য একটি অতি কার্যকর ও অপরিহার্য ধর্মীয় কর্তব্য।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো রমজান মাস শুরু হবার সাথে সাথে আবালবৃদ্ধবণিতা কারো পরামর্শ কিংবা আহবান ছাড়াই রোজা পাললের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। এক অপরিসীম অভ্যন্তরীণ তাগিদে জৈবিক সকল চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। রোজাকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টায় অনৈতিক চিন্তা ও অভ্যাস থেকে নিজেকে বিরত রাখে। নিজেকে কর্মপোযোগী কিংবা যোগ্য করে তুলতে বহু কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোজা আরো কার্যকরভাবে মানুষকে নৈতিক ও আত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ ও সক্ষম করে তোলে।
রোজা আমাদের মাঝে দারুনভাবে এক পরিমিতিবোধ তৈরি করে থাকে। সারাবছর নামাজ আর রমজান মাসের রোজা পালন একজন মানুষকে সত্যিকার মানবিক মানুষ হিসেবে তৈরি করে। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান রোজাকে আরো মহিমান্বিত করে উপস্থাপন করছে। বিনা চিকিৎসায় ও বিনা ঔষধে শরীর গঠনের রোজার কোনো বিকল্প হতে পারেনা।
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ নামাজের কল্যানকারীতা বর্ণনাতীত। বিশিষ্ট স্কলার ডা. জাকির নায়েকের লেকচার থেকে জেনেছিলাম, যখন কেউ অজু করে তখন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ ধুলিমলিন হওয়া থেকে রক্ষা পায়। পানির স্পর্শে যখন ঘাড় মাসেহ করে তার প্রভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। সেজদার মধ্যদিয়ে মাথায় রক্ত সঞ্চালিত হয়। এভাবে একজন মানুষ আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
কাজে কাজেই ইসলামের এই বিধানগুলোর কল্যাণকারীতা তুলে ধরতে পারলে মানুষ নিজের প্রয়োজনে ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হবে। মানুষ ধর্মের বিধান মানতে আগ্রহী হবে নিজের প্রয়োজনে, নিজের স্বার্থে। পারলৌকিক শুধু নয় পৃথিবীতে সুখী স্বাচ্ছন্দ জীবন যাপনের জন্য নামাজ-রোজার মতো ধর্মীয় বিধান পালন জরুরী।
আলেম ওলামাদের অনেকেই আজ দেখি মহাশান্তি ও কল্যানকর এই ধর্মের উপস্থাপন করতে গিয়ে পরিমিতিবোধ হারিয়ে নানা বিতর্কিত কথাবার্তা বলছেন। ফেতনা ফাসাদ তৈরি করছেন। মহানবী কিংবা খলিফাদের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে কেউ কেউ ওয়াজ কিংবা ধর্মকে জীবন জীবিকার মাধ্যম বানিয়েছেন। ভারসাম্যহীন উদ্দেশ্যপূর্ণ কথাবার্তা বলে একধরণের ধর্মীয় উম্মাদনা তৈরি করছেন।
মহানবী তাঁর নিজ গুণেই ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কেউ একজন তাঁর ব্যঙ্গ কার্টুন এঁকে তাঁর মর্যাদা এতোটুকু ¤øান করতে পারবেনা। সে ঘটনা নিয়ে সারাবিশ্বে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটানোর প্রয়োজন আছে কি? জীবিত মুহম্মদ সা. কে যখন প্রস্তরের আঘাতে জর্জরিত করা হয়েছিল, রক্তাক্ত করা হয়েছিল, বেহুশ হয়ে তিনি জমিনে পড়েছিলেন সেই সময়েও বদলা নেবার কোনো অভিপ্রায় তার ছিল না। তাঁর বেদনার্ত অনুসারীদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবার অনুমতি তিনি দেননি। মক্কাবিজয়ের পর হত্যাকারী ও সীমালঙ্ঘনকারীদেরও অকাতরে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন।
নবীর ওয়ারিশ সেজে কিছু আলেম আজ কথায় কথায় হুঙ্কার দিয়ে বসেন। ওয়াজ মাহফিল যেন রাজনৈতিক জনসভা। গলার সবটুকু আওয়াজ দিয়ে কথা বলেন। মানুষের ধর্মীয় অনুভ‚তিকে কাজে লাগিয়ে নানা ধান্দা ফিকির চলছে। রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আলেম ওলামাদের অনেকে উপহাসের পাত্র হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গাও কমে যাচ্ছে তাদের বিতর্কিত ভ‚মিকায়। ধর্মকে যারা অগ্রাহ্য করবে, ধর্মদ্রোহী আচরণ করবে তারা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষের কাজ নিষ্ঠার সাথে ধর্মবোধ মনে লালন করা, আর তা পালনে সচেষ্ট হওয়া। যা কিছু ঘটছে তার অনেকটাই সংযম আর মাত্রাজ্ঞানের অভাবে। রোজা আমাদের সেই সংযম আর মাত্রাজ্ঞান ফিরিয়ে দিক।