এমদাদুল হক

নিউজ বাংলা ডেস্ক:   চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকে সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩ দশমিক ৮৮ এবং স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৯৬ পেয়েছিলেন এমদাদুল হক। দুটি পরীক্ষাতেই প্রথম হয়েছিলেন তিনি। এ জন্য অর্জন করেন ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’। কৃতিত্বপূর্ণ ফলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ছাত্রলীগের  কিছু নেতা-কর্মীর বাধায় শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তিনি।

মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁকে ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যান ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। দিনভর আটকে রেখে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। পরে ‘শিবিরকর্মী’ আখ্যা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। গত ২৭ মার্চ বুধবার এ ঘটনা ঘটে।

এখন পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে গতকাল রোববার উপাচার্যের কাছে আবেদন করেছেন এমদাদুল হক। আর মারধরের ঘটনায় বিচার চেয়ে গতকাল চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেছেন। এমদাদুল হকের আইনজীবী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আদালত এ মামলার তদন্ত করতে পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

২৭ মার্চ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা ছিল। দুটি পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৬৪ জন। ওই মৌখিক পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমদাদুল হককে তুলে নিয়ে যাওয়া ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ারের (সিএফসি) নেতা-কর্মী।

এমদাদুল হককে আটকে রেখে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিলুপ্ত কমিটির সহসম্পাদক শরীফ উদ্দীন। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমদাদুল শিবিরের নেতা ছিলেন। ২০১২ সালে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে তিনি ছাত্রশিবিরের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অনেকেই তা দেখেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই আমাদের বলেছেন। এই কারণে তাঁকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মেরেছি।’ শরীফ উদ্দিন বলেন, মারধরের সময় তিনি ছাড়া আনোয়ার হোসেন, আসিফ মাহমুদ, রফিকুল ইসলাম, জাহিদুল হাসান, আসির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জুনিয়র কর্মীও ছিলেন।

উপাচার্যকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে এমদাদুল বলেন, ঘটনার দিন সকাল নয়টায় শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে যান। উপাচার্য কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক ভবনের (তৃতীয় তলায় উপাচার্য কার্যালয় অবস্থিত) লিফটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেন, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের আসিফ মাহমুদ ও ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের মোকসেদ আলী ওরফে নীলু প্রামাণিক, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের জাহিদুল হাসান ও রফিক ইসলাম ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আসির উদ্দিন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শরিফ উদ্দিনসহ আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁকে ‘অপহরণ’ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নিয়ে যান। চাঁদাও দাবি করেন। চাঁদা দিতে রাজি না হলে তাঁকে মারধর করতে থাকেন। পরে পকেটে থাকা মুঠোফোন ও ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।

লিখিত অভিযোগে এমদাদ আরও উল্লেখ করেন, অপহরণকারীরা তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাগোডার সামনে নিয়ে আবার মারধর করেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবিরকর্মী আখ্যায়িত করে পুলিশের কাছে তুলে দেন। পুলিশ পরে যাচাই-বাছাই করে তাঁকে ছেড়ে দেয়।

তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ধরনের কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুনরায় শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়। ওই ছাত্র যদি যোগ্য প্রার্থী হন, তাহলে পরেরবার বিজ্ঞপ্তি দিলে আবেদন করতে পারবেন। আর লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রক্টর ও পুলিশের কাছে পাঠানো হবে।’

এ প্রসঙ্গে এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কী কারণে, কেন তাঁর ওপর হামলা হয়েছে, তা বুঝতে পারছেন না। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরীয়ার গবেষণা সহযোগী ছিলেন এমদাদুল হক। মনজুরুল কিবরীয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমদাদুল একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ইতিহাসে তিনি প্রথম স্বর্ণপদক পেয়েছেন। তাঁর ফলও ভালো। কেউ হয়তো তাঁকে চরম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছেন। এ কারণেই হয়তো তাঁর সঙ্গে এমন কাজ করা হয়েছে।’

এমদাদুল হক ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলে অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here