বিনোদন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রাখার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খোলা হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পকারখানা। এ ঘোষণার পর থেকেই দেশের সব অঞ্চলেই শ্রমিকদের ঢল নামতে দেখা গেছে।
কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে কারখানা এলাকা ও ইপিজেডগুলোতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজে ফিরতে শুরু করেছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে দোকানপাট, মার্কেট-শপিংমলগুলোও খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ঘোষণার পরই রাস্তাঘাটে জনসমাগম এবং ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেকার ও ঘরবন্দি রয়েছেন বিনোদন মাধ্যমের শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

কারণ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পূর্বসতর্কতা হিসেবে ২২ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশি টিভি সংশ্লিষ্ট সব ধরনের শুটিং। ছোট পর্দার ১৪টি সংগঠন শুটিং বন্ধ রাখার বিষয়ে এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।

২২ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ৩১ মার্চ রাত ১০টা পর্যন্ত ছোট পর্দার সব শুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় অদ্যাবধি শুটিং স্থগিত রয়েছে। ফলে অনেকটা অনিশ্চয়তা আর অনাহারে দিনাতিপাত করছেন অধিকাংশ অভিনয় শিল্পী, সহশিল্পী ও পরিচালকরা।

তাদের থেকে দুরবস্থায় আছে ক্যামেরাম্যান, ক্রু ও প্রোডাকশন বয়সহ শুটিংয়ের সঙ্গে জড়িত মধ্যম ও স্বল্প আয়ের কলাকুশলীরা। শুটিং বন্ধ থাকায় যেমন তাদের জীবনযাপনে অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে তেমনি আসছে ঈদে ছোট পর্দায় নতুন নাটকের সংকট দেখা দিতে চলেছে।

যেহেতু দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সীমিত আকারে কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছে, এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটক-সিনেমার শুটিংও শুরু করা যায় কিনা এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন অভিনয় শিল্পী, পরিচালক ও কলাকুশলীদের সঙ্গে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিংয়ে ফেরা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কথা বলতে চাননি অধিকাংশ তারকা। এসব বিষয়ে কিছুটা অনীহা দেখা গেছে অনেকের মধ্যে। বিষয়টি অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার কারণেই হয়তো।

এ প্রসঙ্গে ডিরেক্টর’স গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দীন লাভলু বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, সব পেশার মানুষের কাজ থেমে আছে। অভিনয় শিল্পীরাও এর বাইরে নয়। সবার মতো আমরাও চেষ্টা করছি একটা শিথিল পরিবেশে অভিনয়ে ফিরতে। সামনে ঈদুল ফিতর বলেই নয়, অভিনয়ই তো আমাদের পেশা। প্রতিনিয়ত অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে হয়। এ মুহূর্তে কোনো কিছুতেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে কেউই আগ্রহী হবেন না।’ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলীকের কণ্ঠেও একই সুর।

তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তঃসংগঠন বিষয়গুলো নিয়ে অনেক কথা বলেছি, আলোচনা করেছি। আমরা সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়ে ২২ মার্চ থেকে শুটিং বন্ধ রেখেছি। সরকারি সিদ্ধান্তকে সম্মান করে আমরা শিল্পী এবং কলাকুশলীরা এখন পর্যন্ত লকডাউনটাকে পুরোপুরি মানছি। যেহেতু শিল্পী সমাজ সচেতন এবং আমরা সবসময় সচেতনতার কথা বলি, তাই আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে।

এখন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই একমত। আবারও ১৬ তারিখ পর্যন্ত ছুটি বাড়িয়েছে সরকার। আমরাও সেই ঘোষণা মোতাবেক ততদিন শুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রশ্নটা হল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং করার যে ব্যাপারটা। গার্মেন্ট মালিকরাও তো বলেছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টস খোলা হবে।

অথচ এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গার্মেন্ট কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের পরিবার ও আশপাশের মানুষও এখন স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখন তারা যে আঙ্গিকে চিন্তা করছে, শুটিংয়ে ফেরার ব্যাপারে আমরা সেভাবে চিন্তা করতে পারছি না। ব্যক্তিগতভাবে আমিও শুটিং ফ্লোরে যেতে আগ্রহী। কিন্তু এটা চাই না, আমার একটা সিদ্ধান্তের কারণে আমিসহ আমার পরিবার, আমার আশপাশের মানুষগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ুক। পরিস্থিতি বুঝেই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাব।’

করোনাভাইরাসের এমন রাজত্বে অবশ্য শুটিংয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আসলে সার্বিক পরিস্থিতি এখন ভালো নয়। অভিনয় আমাদের পেশা হলেও জীবনটা আগে। বেঁচে থাকলে অনেক অভিনয় করতে পারব। তাই আপাতত করোনা পরিস্থিতি দূর না হলে শুটিংয়ে ফেরা উচিত হবে না বলে আমি মনে করি।’

নির্মাতা ও অভিনেতা হাসান জাহাঙ্গীরও বলেছেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘প্রচারচলতি ধারাবাহিকগুলোর জন্য হলেও শুটিংয়ে ফেরা খুবই দরকার। তবে অভিনয়ের চেয়ে জীবনটা সবচেয়ে মূল্যবান। যতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি না কেন, কোথায় যে কীভাবে আক্রান্ত হয়ে যাব, তা আমরা কেউ জানি না। তাই এ মুহূর্তে শুটিংয়ে ফেরার পক্ষে আমি নই।’

তবে বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকির আহমেদ স্পষ্টভাবে কোনোকিছু বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আমি ডিসিশন মেকারের কেউ না। তাই শুটিং শুরু হবে কি হবে না এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই নই। যারা সাংগঠনিক বিষয়গুলো দেখেন, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সবাই যদি কাজে ফেরে তাহলে আমাকেও ফিরতে হবে।’

নাটকের মতো সিনেমা অঙ্গনের অবস্থাও তথৈবচ। এ মাধ্যমের শুটিংও বন্ধ। সিডিউলকৃত কাজগুলো নিয়ে বেশ বিপাকেই আছেন অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীরা। শুটিংয়ে ফেরা প্রসঙ্গে দেশসেরা জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান বলেন, ‘আসলে এ মুহূর্তে দেশে ভাইরাসের যে সংক্রমণ চলছে সেটা চিন্তা করলে নিজেকে বাঁচানোটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। বেঁচে থাকলে আরও অনেক শুটিং করা যাবে। এ ভাইরাসের আক্রমণের কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ক্ষতি হয়েছে বেশি। কারণ আমার একটি ছবির শুটিং শুরুর কথা ছিল।

এ ছবি নিয়ে হল মালিকদের আশা-আকাক্সক্ষা ছিল। ঈদের মতো একটি উৎসবের জন্যই তারা অপেক্ষা করেন। সুতরাং করোনাভাইরাস আমাদের যে অনেক বড় ক্ষতি করে দিয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও যেহেতু আমরা পরিস্থিতির শিকার, তাই সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোটাই শ্রেয়। আপাতত আরও কিছুদিন আমরা যদি নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখতে পারি তাহলে হয়তো ভাইরাস থেকে মুক্তি পাব। তবে এ পরিস্থিতিতে আমি মোটেও শুটিংয়ে আগ্রহী নই।’

চিত্রনায়ক ইমন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই মুহূর্তে শুটিংয়ে যাওয়াটা একটু ডিফিকাল্ট। যদিও এটা আমাদের সবারই প্রয়োজন। কিন্তু যারা আসলে গার্মেন্টসে কাজ করে, কাজ না করলে ওদের চলাচলের আর কোনো উপায় নেই। ওই ক্ষেত্রে যদি বিবেচনা করি তবে শুটিংটা আরেকটু পরে শুরু করলেই ভালো হয়। এখন যেহেতু বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। আমিও প্রায় এক মাসের ওপরে ঘরে বসে আছি। অবশ্যই খারাপ লাগছে। বসে থাকতে কার ভালো লাগে, কাজের মধ্যে থাকলে সবদিক দিয়ে ভালো। যদিও আমাদের এখন কাজ করার মৌসুম ছিল। তবুও যেহেতু আমরা এতদিন অপেক্ষা করতে পেরেছি, ঘরে থেকেছি, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করি। আল্লাহর রহমতে যদি করোনাটা দূর হয়, তারপর আবার নতুন করে শুরু করতে পারি। ওইটাই ভালো হবে।’

সূত্র: যুগান্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here