রবিউল ইসলাম

তামিম-সাকিবরা যা পারেননি, তা-ই করে দেখালেন পারভেজ হোসেন ইমন। মাত্র ৪২ বলে সেঞ্চুরি পেলেন যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ৩৫ বলে, তবে শুধু বাংলাদেশ হিসাব করলে দ্রুততম শতকের রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবালের, ২০১৯ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ৫০ বলে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন এই ওপেনার। আজ (মঙ্গলবার) তার রেকর্ডটি ভেঙে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক হলেন ইমন।

মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরু করেছিরেন ইমন। তার দল ফরচুন বরিশাল ব্যর্থ হলেও গড়পড়তা ভালোই খেলছিলেন তিনি। উদ্বোধনী ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ইমন। পরের ম্যাচগুলোতে শুরু ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না।

আজ মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর দেওয়া ২২১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ঠিক যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল, তেমনটাই করেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও তামিম ইকবাল। সাইফের বিদায়ের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন ইমন। শুরু থেকেই রাজশাহীর বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। একের পর এক চোখ ধাঁধানো শটে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল। বরিশালের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৪ রানের, ইমনের সেঞ্চুরির জন্যও দরকার ৪ রান। আরেক ইমনের (আনিসুল ইসলাম) বলে বাউন্ডারি মেরে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ফেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৯ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেছেন হার না মানা ১০০ রানের ঝলমলে ইনিংস।

এই রেকর্ড গড়ার পথে ইমন পেছনে ফেলেন তামিমকে। ২০১৯ সালের বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন তামিম। ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি পেতে তামিম খেলেছিলেন ৫০ বল। এরপর চলতি বছর নাজমুল হোসেন শান্ত খুলনা টাইগার্সের হয়ে করেছিলেন ৫১ বলে সেঞ্চুরি। আজ দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পেতে নাজমুল খেলেছেন ৫২ বল।

কাপড় ব্যবসায়ী বাবার ছেলে পারভেজ হোসেন ইমন। ক্রিকেটে তার শুরুর রাস্তাতে ছিল বিশেষ ব্যক্তির অবদান। ইমনের বড় ভাই ফয়সালের বন্ধু জিসান। তার সঙ্গেই এলাকার অলিতে-গলিতে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন ইমন। কিছুটা ভালো খেলার কারণে জিসান বন্ধু ফয়সালকে বলে তার ভাইকে বিকেএসপিতে ভর্তি করে দিতে। ২০১৩ সালে ইমন বিকেএসপিতে ভর্তি হন, আর সামনে পেয়ে যান ক্রিকেটার হয়ে ওঠার চওড়া রাস্তা।

অবশ্য মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন ইমন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপে সুযোগ পাননি তিনি। পরের শ্রীলঙ্কা সফরেও সুযোগ মেলেনি। পরপর দুটি প্রতিযোগিতায় সুযোগ না পেয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েন তিনি। তখন তার পাশে এসে দাঁড়ান বিকেএসপির কোচ আসাদুল হক টুটুল। তাকে জোর করে অনুশীলন করান, অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেটের একটি টুর্নামেন্টেও খেলতে বাধ্য করেন। ওই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ৯৬ রানের ইনিংসই নতুন ‘জীবন’ দেয় ইমনকে।

এই ইনিংসই সুযোগ করে দেয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রস্তুতি ম্যাচের দলে। ওই ম্যাচেও খেলেন ৯৬ রানের আরেকটি ইনিংস। পরপর এমন দুটি ইনিংস জায়গা করে দেয় তাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here