নিউজ বাংলা ডেস্ক:

আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রফতানি আয় কম। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক ৬৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করে জোগান দিতে হচ্ছে। রফতানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স কিছুটা ইতিবাচক হলেও তা আমাদানি ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। যার কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে, বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। যার প্রভাব পড়েছে ডলারের বাজারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আট মাস শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে আয় হয়েছে দুই হাজার ৭১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে তিন হাজার ৭৮৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারি শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ৬৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৩৫ পয়সা দরে) ৯০ হাজার ২১২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি আরও বেশি ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আট মাসে বাণিজ্য ঘটতি ছিল এক হাজার ১৬৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব (-) ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ (-) ঋণাত্মক কিছুটা কমেছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৯০ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করেছে ৬৮৫ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৪৪৮ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩৭ কোটি ডলার। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ২৩৪ কোটি ডলার।

প্রথম আট মাসে প্রবাসীদের আয় রেমিট্যান্স প্রবাহে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ৪৪ দশমিক ০৮ শতাংশ ও নিট বেড়েছে ২৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

এদিকে আলোচিত সময়ে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৩১ কোটি ২০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এদিকে আমদানির চাপের কারণে বাড়ছে ডলারের দাম। ফলে চলতি বছরে কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছর শুরুর দিন আন্তব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৩৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here